১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৬:৫৩:২৯ পূর্বাহ্ন


লন্ডনে জামায়াতকে বিএনপির ‘না’
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৪-২০২৫
লন্ডনে জামায়াতকে বিএনপির ‘না’ বিএনপি ও জামায়াতের লগো


বিএনপি সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে তারা জামায়াতে ইসলামীর সাথে কোনো ধরনের নির্বাচনী জোট কিংবা ক্ষমতায় যেতে পারলে দলটিকে শরিক হিসাবেও রাখা হবে না। জামায়াতের সাথে কোনো ধরনের নির্বাচনী সমঝোতা বা আলোচনায়ও আগ্রহী নয় বিএনপি। লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের বৈঠকে এমন বার্তা দিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে জামায়াতের নিবন্ধন ও ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক ফিরে পেতে বিএনপি কোনো ধরনের ইতিবাচক বা নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে না বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

কি হয়েছে লন্ডনে?

জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ৪ এপ্রিল ব্রাসেলস সফরে যান। এই সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন দলের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও আমিরের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা মাহমুদুল হাসান। ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরে একাধিক বৈঠক ও সাক্ষাৎ কর্মসূচি ছিল জামায়াত আমিরের। ব্রাসেলস থেকে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের লন্ডনে যান। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান ও নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। লন্ডনে খালেদা জিয়ার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় তাদের এ সাক্ষাৎ হয়। এ সময় তারেক রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

কি কি আলোচনা হলো?

আলোচনা কি হয়েছে সে ব্যাপারে জামায়াতের পক্ষে বলা যায় কিছুটা অফিসিয়ালি বলা হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াতের নেতাদের বক্তব্যে তা-ই বোঝা গেছে। কেননা সাক্ষাৎ শেষে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান গণমাধ্যমে কিছু তথ্য দিয়েছেন। এতে তিনি যতটুক বলেছেন তার মমার্থ হলো যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎটি আসলে নিছক সৌজন্যমূলক হলেও এটি বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ। একটি সূত্র জানায়, গত বছরে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান গত বছরের শেষের দিকে লন্ডনে গিয়েছিলের বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করতে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওইসময় তারেক রহমান জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানকে দেখা করার কোনো সুযোগই দেননি। সেদিক থেকে এবারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সাথে সাক্ষাৎ হয়ে যাওয়াটি সেদিক থেকে কিছুটা ইঙ্গিতপূর্ণ। 

আরেকটি বিষয় হলো আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই জামায়াত বিএনপি’র বিভিন্ন দাবির ব্যাপারে বিশেষ করে সংস্কার ও দ্রুত নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে বিরোধীতায় নামে। যা বিএনপির ইমেজকে বেশ বেকায়দা ফেলে দেয়। পাশাপাশি বিএনপি দল হিসাবে দেশে-বিদেশে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। কিন্তু এবারে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার প্রসঙ্গ এনে সৌজন্যতা দেখানোর কথা বলে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান তার সাথে সাক্ষাৎ এর সুযোগটি নেন। এখানে বিএনপি’র পক্ষ থেকে থেকে বিশেষ করে তারেক রহমান সৌজন্যতার খাতিরে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের সাথে তারই বাসায় লন্ডনে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎকারের সুযোগটি পেয়ে যান।

রাজনৈতিক আলাপ বা নির্বাচন প্রসঙ্গ?

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের সাক্ষাৎ এর সময় পাশে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। এসময় প্রথমে কুশল বিনিময়ের পর কিছু কথা হয় জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের সাথে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সাথে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুব অল্প কথাবার্তায় তারেক রহমান অত্যন্ত রাগান্বিত হন জামায়াতে ইসলামীর সাম্প্রতিক ভূমিকায়, সেটা প্রকাশও পায়। তিনি দলটির পক্ষ থেকে বিএনপি ও এর পাশাপাশি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নানান ধরনের নেতিবাচক প্রচার-প্রচারাণারমূলক কর্মকাণ্ডের পেছনে জামায়াতে ইসলামীর ইন্ধনের অভিযোগ তোলেন। তারেক রহমান তথ্য-উপাত্ত দিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে কিছু কঠিন অভিযোগ আনেন। তারেক রহমান জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন,‘ আপনারা শুধু দেশেই না বিদেশে এবং এমনকি আপনাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসা কূটনীতিকদের বলে বেড়াচ্ছেন বিএনপি সংস্কার ছাড়াই পতিত ফ্যাসিবাদের মতো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে চায়।’ জানা গেছে এই সময় জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানকে আরও বেশ কয়েকটি ইস্যুতে তারেক রহমান কিছু মন্তব্য করলে সেখানে পরিবেশ জটিল হয়ে উঠে। ফলে অন্য কেনো ইস্যুতে আলোচনার আর সুযোগই হয়ে উঠেনি। তবে একটি সূত্র জানায়, লন্ডনে খালেদা জিয়ার সাথে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের আগমনকে তারেক রহমান অন্যভাবেই নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। কেউ কেউ মনে করেন এটাকে তারেক রহমান জামায়াতের পক্ষ থেকে একধরনের রাজনৈতিক কূটচাল হিসাবে দেখা হয়। তবে একটি সূত্র জানায়, লন্ডনে খালেদা জিয়ার সাথে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানের আগমনে তারেক রহমানের বডি ল্যাংগুয়েজ বা কথার ভাষা ছিল অন্যরকম। এতে তিনি স্পষ্ট করে দেন জামায়াতের সাথে বিএনপি কোনো নির্বাচনী সমঝোতা তো দূরে থাক ক্ষমতায় গেলেও তাদের শরিক হিসেবে রাখা হবে না। 

যুগপৎ এর শরিকদেরই প্রাধান্য দেবে

বিএনপি পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ লড়াইয়ে থাকা যুগপৎ সঙ্গী মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের উদার গণতান্ত্রিক প্রগতিশীলদের আশ্বাস দিয়ে আন্দোলনে শরিক করেছিলেন। আন্দোলনের আগে যারা যুগপৎ আন্দোলনে শরিক ছিল তারা বিএনপি কাছে গ্যারান্টি চেয়েছিল যে দলটি জামায়াতের সাথে কোনো ধরনের ঐক্যে যাবে না। ভবিষ্যতেও ক্ষমতার যাওয়ার সুযোগ পেলেও জামায়াতকে ধারে কাছে ভিড়তে দেয়া হবে। এমন ধারণাই দেয়া হয় লন্ডনে তারেক রহমানের পক্ষ থেকে। কেননা আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শরিক করতে বাম প্রগতিশলী ঘরনার দলগুলিকে এককাতারে আনতে আরও শর্ত তোলা হয়। তার অন্যতম হচ্ছে আন্দোলন এবং একসাথে নির্বাচনে ও সরকার গঠনে বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদেরই ভবিষ্যতে ছাড় দেবে, পাশে থাকবে। আর কোনোভাবেই ওই সময়ে জামায়াতের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না। ফলে এখন নতুন করে জামায়াতকে সঙ্গী করে বা জোটবদ্ধ করে বিএনপি রাজনৈতিক অঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের এমন শক্তির কাছে বিশ্বাসঘাতক হিসাবে চিহ্নিত হতে চায় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো,লন্ডনে তারেকের এমন বার্তাই ছিল জামায়াতের প্রতি। 

শেষ কথা

আগামীতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের উদার প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল যারা এতোদিন যুগপৎ এ শরিক ছিল তাদের সাথে বিএনপি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করবে। প্রয়োজনে তাদের আসন ছাড় দেয়া হবে। অন্যদিকে ক্ষমতায় যেতে পারলে ক্ষেত্র বিশেষে দীর্ঘদিন ধরে চলা যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের পাশে রাখবে। এমন ভাবধারার সাথে আবদ্ধ হয়ে যাওয়া যুগপৎ আন্দোলনে থাকা শরিকদের বর্তমানে পাশ কেটে জামায়াতের সাথে আসন ভাগাভাগির ঝুঁকি কতটা তারেক রহমান নিতে পারবেন তা দেখতে হয়তোবা বেশিদিন লাগবে না। কারণ ইতোমধ্যেই জামায়াতের বেশ কয়েকজন নেতার সাথে অসংলগ্ন বক্তব্য চোখের পড়ার মতো। কেননা দেখা যাচ্ছে, কখনো বলা হচ্ছে ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন চায় জামায়াত। আবার বলা হচ্ছে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হলে জনগণ কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না।

শেয়ার করুন