০৬ জুলাই ২০১২, শনিবার, ০১:০৫:০৫ অপরাহ্ন


বিএনপির রাজনৈতিক শেল্টার চায় জামায়াত
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৫-২০২৪
বিএনপির রাজনৈতিক শেল্টার চায় জামায়াত


বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী মৌলবাদি সাম্প্রদায়িক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী তার রাজনীতি টিকিয়ে রাখতে এখন মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র রাজনৈতিক শেল্টার চায়। এর পাশাপাশি বিএনপিসহ দলটির সাথে আন্দোলনরত অন্যান্য দলগুলির মতো যুগপৎ আন্দোলনে শরিক হতে চায়। এব্যাপারে জামায়াত ইসলামী বিএনপি’র সাথে নিজেরাই দলটির বিভিন্ন চ্যানেলে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনটাই খবর পাওয়া গেছে রাজনৈতিক সূত্র থেকে। 

আবার প্রয়োজন বিএনপির

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী মৌলবাদি সাম্প্রদায়িক সংগঠন জামায়াতে ইসলামী নামের দলটি বিএনপি’র দীর্ঘদিনের মিত্র। কিন্তু ২০০৮ সালের অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি আরো কয়েকটি কারণে জামায়াতের সাথে বিএনপি’র দূরত্ব বাড়তেই থাকে। এব্যাপারে বিএনপি মনে করে জামায়াতকে নিয়ে ক্ষমতায় থাকা ও রাজনীতির কারণে তাদের দেশে-বিদেশে অসাম্প্রদায়িক ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী একটি প্রভাবশালী দেশও এখনো বিএনপির বিরুদ্ধেই আছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনও বিএনপি’কে আস্থায় নিতে পারছে না। অন্যদিকে জামায়াতের বেশ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতার ফাঁসি ও বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির ব্যাপারে বিএনপির নিরবতাকে তারা (জামায়াতে ইসলামী) সরকারের এসব কর্মকাণ্ডের এক ধরনের সমর্থন দেয়াই মনে করে। এদিকে প্রায় এক দশক পর গত বছরে ঢাকায় এক সমাবেশ কেন্দ্র করেও বিএনপি’র মধ্যে নানান ধরনের সন্দেহ দেখা দেয়। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় চলে আসে জামায়াতে ইসলামী। সেসময় প্রশ্ন দেখা দেয় যে বিএনপি যেখানে সভা-সমাবেশ করতে সুযোগ পেতেই প্রাণ যায় সেখানে জামায়াত কি করে সভা-সমাবেশ করতে পারে? মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকার কারণে জামায়াত ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার একটা জোরালো দাবি যেখানে রয়েছে সেখানে সরকার রাজনৈতিক সভা সমাবেশের অনুমতি কেন দিল সে প্রশ্ন চলে আসে। এখনো অনেকে মনে করে গত বছরের ১০ জুন ও ২৮ অক্টোবরে জামায়াতের ভূমিকা ছিল বিএনপি’র অসাম্প্রদায়িক ইমেজ নষ্ট করতে সরকারের সাথে কাজ করেছে এই জামায়াতে ইসলামী। অথবা সরকারের ফাঁদে পা দিয়েছে। জামায়াতকে ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া নিয়ে সরকারের মন্ত্রীরা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য রেখেছেন। কেননা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচার শুরুর পর গত প্রায় দশ বছরে জামায়াত রাজপথে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি পায়নি।

অনেক সে সময়ে এ-ও ধারণা করে যে জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আবার ২৮ অক্টোবরের পর থেকে জামায়াতে ইসলামী অস্বাভাবিক নিরবতা রাজনৈতিক মহলে নানান ধরনের প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। যদিও এতো কিছুর পরও বিএনপি’তে জামায়াতে ইসলামী ঘেষা কিছু রাজনৈতিক নেতার পাশাপাশি পেশাজীবী ব্যক্তি ইফতার রাজনীতি ক্ষেত্র তৈরি করে দলটির কাছাকাছি আসার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু এই নিয়ে বিএনপিতে চরম অস্থিরতা ক্ষোভ দেখা দেয়, আন্দোলনরত শরিকরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। আবার অন্যদিকে বিএনপি’র একটি অংশ যখন ভারতীয় পণ্য বর্জন আন্দোলনের জামায়াতে ইসলামী’কে কাছে পেতে চায় তখন দলটি পুরোপুরি নিরবে চলে যাযয়। 

সরকারের হার্ডলাইন টের পেয়ে

এদিকে ‘দেশে স্বাধীনতাবিরোধীরা নির্মূল হবে, তাদের পদচিহ্নও থাকবে না’-রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এর এমন বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে যেমন নানান আলোচনার ঝড় তুলে তেমনি জামায়াতে ইসলামী’তেও নানান ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে বিভিন্ন প্রশ্ন। বলা হচ্ছে তা-র এমন বক্তব্য আসলে কিসের ইঙ্গিত। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিরোধীতাকারী মৌলবাদি সাম্প্রদায়িক সংগঠন জামায়াতের ওপরে কি নেমে আসছে আরো বড়ো ধরনের খড়গ? নেয়া হচ্ছে কঠোর পদক্ষেপ? সে পদক্ষেপের মাত্রা এ যাত্রায় হয়তবা আরো ভয়ঙ্কর হতে পারে। কেননা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা সুযোগ পেলেই ছোবল মারতে চায়। কিন্তু এ দেশে স্বাধীনতাবিরোধীরা নির্মূল হবে, তাদের পদচিহ্নও থাকবে না। সেই অপশক্তিকে নিশ্চিহ্ন করতে যে প্রয়াস আমাদের প্রয়োজন, তা-ই করতে হবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, একারণে জামায়াতে ইসলামী বেশ নড়ে চড়ে বসেছে। জানা গেছে, জামায়াতে ইসলামী দলটি বিএনপি’র হাই কমান্ডকে গত কয়েক মাস আগে বুঝিয়েছে যে তারা দলটি (বিএনপি)’র সাথে এক মঞ্চে আসলে সরকারের ভিত নড়ে যাবে। সরকার ক্ষমতা ছেড়ে চলে যাবে।

একটি সূত্র আরো জানায়, জামায়াতে ইসলামী মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিভিন্ন উদার প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল নাগরিক সমাজের থেকে বিএনপি’কে দূরে সরিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। কিন্ত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বক্তব্যের পর জামায়াতে ইসলামী এখন নড়ে চড়ে বসেছে। পাল্টিয়েছে মত। তারা এখন যেভাবেই হোক বিএনপি’র সাথে এক মঞ্চে না হলেও যুগপৎ কর্মসূচিতেই থাকতে চায়। আর এব্যাপারে দলটি অতীতের চেয়ে আরো বেশি উঠে পড়ে লেগেছে-এমনটাই পাওয়া গেছে রাজনৈতিক বিভিন্ন সূত্র থেকে। বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য উপহার হিসেবে পাঠানো মৌসুমী ফল জামায়াতে ইসলামী’র এমন রাজনীতিরই আভাস দেয়।

শেয়ার করুন