১৩ মে ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৬:২৫:১১ পূর্বাহ্ন


নির্বাচন প্রশ্নে মাঠে শক্ত অবস্থান জানান দিতে প্রস্তুত বিএনপি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৪-২০২৫
নির্বাচন প্রশ্নে মাঠে শক্ত অবস্থান জানান দিতে প্রস্তুত বিএনপি বিএনপির দলীয় পতাকা


ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ডিসেম্বরে হচ্ছে না-মোটামুটি নিশ্চিত বিএনপি। তবে আগামী বছর জুনের আগেই যেনো সংসদ নির্বাচন যেন অনুষ্ঠিত হয়, সেব্যাপারে বিএনপি কঠোর নজরদারি রেখেছে। পাশাপাশি মাঠে দ্রুত নির্বাচন আদায় করে একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে বিভিন্ন ধরনের সাংগঠনিক কাজ চালু রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপি মে’তে সমাবেশ ও এর পাশাপাশি ‘তারুণ্যের’ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে। এছাড়া দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে সবাইকে বিএনপি’র কাতারে রাখতে মুক্তিযুদ্ধের সকল বাম-ডান-ইসলামী দলগুলির সাথে একের পর এক বৈঠকের পাশপাশি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ বজায় রাখা হচ্ছে। এসব কর্মকান্ডের মূল বার্তা হচ্ছে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের মাঠকে শক্ত অবস্থানে রাখা। রাজনৈতিক মাঠ ঘুরেই এসব তথ্য মিলেছে। 

কি চায় বিএনপি

বিএনপি চায় দেশে দ্রুত একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে। দলটি মনে করে রাজনৈতিক সরকার ছাড়া দেশে সাম্প্রতিক অন্থির পরিস্থিতির কেউ সামাল দিতে পারবে না। এর পাশাপাশি দেশে-বিদেশে বিনিযোগকারীদের আস্থা সৃষ্টি হবে না । সবচেয়ে আশঙ্কা জনক হচ্ছে দ্রুত নির্বাচন না হলে বা রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হলে দলটির জন্য বড়ো ধরনের ইমেজ সঙ্কটে পড়তে হচ্ছে। কেননা বিএনপি’র ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে একশ্রেণীর লোভী দুর্নীতিবাজ বেপরোয়া নেতাকর্মীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে ঠেকানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে। কেননা রাজনৈতিক দলের ছত্রচ্ছায়ায় বিশেষ করে বিএনপি’র মতো দলের ভেতরে এমন প্রভাব ঠেকানো এখন পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দুরূহ মনে হচ্ছে। বিএনপি নেতারা মনে করেন, রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে এসব বেপারোয়া নেতাকর্মীদের শক্ত হাতে দমন করা যেতো। অথচ দিন যতোই যাচ্ছে এধরনের নেতাকর্মীদের অপতৎপরতা বেড়েই চলেছে। এনিয়ে দেশে বিদেশে দিনের পর দিন বিএনপি দুর্নাম বাড়ছে। আর একারণেই বিএনপি মনে করে জনগণ এখন ধীরে ধীরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ঝুঁকে যাচ্ছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। বিএনপি’র নেতাকর্মীরা মনে করেন দ্রুত নির্বাচন আদায় করা না গেলে সামনে দিনের পর দিন সঙ্কট তৈরি হতেই থাকবে। আর সেক্ষেত্রে ‘বিএনপি’ দলটির ইমেজ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। 

‘তারুণ্যের’ সমাবেশের নেপথ্যে

ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় পর্যায়ে ‘তারুণ্যের’ সমাবেশ করবে বিএনপির তিন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের ব্যনারে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এই সমাবেশের আয়োজন করা হবে। আগামী ৯ মে থেকে ২৮ মে পর্যন্ত বিভাগীয় পর্যায়ে ‘তারুণ্যের ভবিষ্যৎ ভাবনা, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনার এবং ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ’ করবে বিএনপির এই তিন সহযোগী সংগঠন। বিএনপি’র একটি সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকার যখন ভোটাধিকার হরণ করে একের পর এক নির্বাচন করে যাচ্ছিল তখন বিএনপি এই ধরনের ফ্যাসিবাদি আয়োজনে বিরুদ্ধে প্রতিবাদি হতে তরুণদের মোটিভেশনে নামে। সেসূত্রেই ২০২৩ সালের জুনে সারা দেশে বিভাগীয় শহরে তারুণ্যের সমাবেশে তাদের মুখে তুলে ধরে ‘তরুণ প্রজন্ম দেব ভোট, ভোটের জন্য যুদ্ধ হোক’। বিএনপি’র এব্যাবারে এমন স্লোগান তুলে না দিলেও যে বার্তা দেয়া হবে তা হলো তরুণরা দ্রুত ভোট দিয়ে তাদের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। 

এদিকে আরেকটি সূত্র জানায়, দলটির হাইকমান্ড মনে করে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইমেজকে ধারণ করে নতুন নতুন রাজনেতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এসব রাজনৈতিক দল স্বচ্ছ কমিটেড তারুণ্যের চেতনা নিয়ে সারাদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে যে মেসেজ যাচ্ছে তাতে বলা হচ্ছে যে, মাঠে একটি নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক ইমেজ তৈরি হয়ে আছে। যারা কি-না মাঠে স্বচ্ছ জবাবদিহিমূলক তারুণ্যের নেতৃত্ব নিয়ে আগামী বাংলাদেশ গড়ার ডাক দিচ্ছে। এক্ষেত্রে বিএনপি’র হাই কমান্ড মনে করে তাদের দলটির ইমেজেও যে তারুণ্যের জোয়ার আছে তার একটা জানান দেয়া প্রয়োজন। আর সেজন্য বিএনপি’র হাইকমান্ড মনে করেন, আগামীতে সমাবেশগুলিতে তারুণ্যের শক্তিশালি উপস্থিতি যেভাবেই হোক না কেনো তা তুলে ধরতেই হবে। এসব সমাবেশে দেশের তরুণ ও যুব শ্রেণির সমর্থকদের দিয়ে দ্রুত নির্বাচন চাওয়া ও ভোটাধিকার-গণতন্ত্র রক্ষার ডাককে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হবে বলে মনে করেন নেতারা। এতে একদিকে বিএনপি’র প্রতি যে তরুণ ও যুব শ্রেণির একটি বিরাট অংশের টান আছে তা ফুটিয়ে তোলা হবে। তাই ধরে নেয়া যায় যে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যাপারে গড়ে উঠা নতুন রাজনৈতিক দলগুলির তারুণ্যের পদচারণার বিপরীতে জানান দিতেই এমন সমাবেশ করা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়। এর পাশাপাশি নতুন নতুন গড়ে উঠা রাজনৈতিক দলগুলিকে জানান দেয়া যে বিএনপি’তে তারুণ্যের শক্তি আছে। আর সেই শক্তি দিয়েই দ্রুত নির্বাচনের দাবিটি আদায় করে নেয়া হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার থেকে। 

মে’তে বড়া সমাবেশ করবে বিএনপি

একিই উদেশ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষে আগামী ১ মে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে বিএনপি। এ উপলক্ষে প্রস্তুতি তি শুরু হয়ে গেছে বলে শোনা গেছে। অনুষ্ঠানে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হতে পারেন। বিএনপি’র বিভিন্ন সূত্র থেকে এক্ষেত্রেও বরা হচ্ছে ছাত্র-যুবকদের প্রতি ভোটাধিকার সংগ্রামের বার্তা দেয়ার পাশাপাশি শ্রমিক শ্রেণীর প্রতিও দলটি সুস্পষ্ট বার্তা দিতে চায়। সেজন্যই বিএনপি মে’ দিবসেও শোডাউনে যাচ্ছে। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দলগতভাবে বিচার, নিবন্ধন বাতিল এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবিতে আগামী ২ মে ঢাকায় বড় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি এনসিপি। ঢাকা দক্ষিণ এবং উত্তর মহানগর এনসিপি একত্রে এটির আয়োজন করবে। এতে বড় ধরনের লোক জমায়েত করতে চায় তারা। এ ছাড়া একই দাবিতে সারা দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারো কারো মতে, এনসিপির এমন কর্মসূচির আগে বিএনপি’র সমাবেশটি ওই একিই উদ্দেশ্যেই হচ্ছে।

বিভিন্ন দলের সাথে বৈঠক

ইতোমধ্যে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ৩০ এপ্রিল থেকে ধারাবাহিক বৈঠক শুরু করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১২ দলীয় জোটের বৈঠকের মধ্য দিয়ে ওই আলোচনা শুরু হয়েছে। এছাড়া লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সাথেও বৈঠক হয়। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বাম-ডান-ইসলামী দলগুলির সাথেও বিএনপি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘অনানুষ্ঠানিক বৈঠক’ করে চলেছে। সম্প্রতি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সিপিবিসহ বাম ধারার দলগুলোর সঙ্গে ‘অনানুষ্ঠানিক বৈঠক’ করেন বিএনপি’র নেতারা।

শেষ কথা

মাঠে নানান ধরনের ষড়যন্ত্রের গন্ধ বিএনপি’র নাকে। দ্রুত নির্বাচন নয়, আগে বড়ো ধরনের সংস্কােেরর পক্ষে একটি রাজনৈতিক দলের অবস্থানে বিএনপি বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। কেননা এরা বিএনপি’র সাথে দীর্ঘ বছর ধরে একসাথে কাজ করছে, সরকার গঠনেও ছিল। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক মাঠে এই দলটির সাথে বিএননপি’র দিনের পর দিন দূরত্ব বাড়ছে। সম্প্রতি দলটির শীর্ষ পর্যায়ের সাথে বিএনপি’র সর্বোচ্চ পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে। এমন বৈঠকের পরপরই দৃশ্যপট পাল্টে যায়। দলটি বিএনপি’র সাথে সুর মিলিয়ে বলতে থাকে যে, তারাও দ্রুত নির্বাচন চায়। আবার বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের সাথে সাক্ষাতের দু’দিন পরই মত পাল্টিয়ে ফেলে। বলতে থাকে সংস্কার আগে তারপরে নির্বাচন। জানা গেছে, মাঠে এমন দলের বিভ্রান্তিকর আচরণকে বিএনপি বেশ আমলে নিচ্ছে। ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হন্তান্তরের কথা বলছে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এমন ধারণা বিএনপি’কে দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। তবে একটি সূত্র জানায় বিএনপি’র হাইকমান্ড যেমন মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকার যেমন নির্বাচন দেবে, তেমনি এমন আয়োজনের পথে যেতে অনেক দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। বলা যায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ আরও পরেও হতে পারে। আর একারণে বিএনপি তাদের মাঠের অবস্থান শক্ত রাখতে চায়। যেনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কেউ বিভ্রান্তিতে ফেলে নির্বাচন ইস্যুকে জিরো করে অন্যরকম ফায়দা লুটে নিতে না পারে। তাই বলা চলে, মাঠে ষড়যন্ত্র বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি রুখে দিয়ে নিজেদের শক্ত আবস্থান জানান দিতে বিএনপি নিজেকে বিভিন্নভাবে প্রস্তুত রেখেছে।

শেয়ার করুন