১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০৩:৫৫:৫১ পূর্বাহ্ন


ছাত্রদের রাজনৈতিক দল ঘোষণা ২৮ ফেব্রুয়ারি
ছাত্রদের দল বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি, না বাংলাদেশ সিটিজেনস পার্টি?
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০২-২০২৫
ছাত্রদের দল বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি, না বাংলাদেশ সিটিজেনস পার্টি? নেতৃত্বে থাকা চারজন


‘বাংলাদেশ নাগরিক পার্টি’ না ‘বাংলাদেশ সিটিজেন’স পার্টি’ এ দুইয়ের কোনটি বাছাই করে নেবে ছাত্ররা এ নিয়েও চলছে শেষ মুহূর্তের গবেষণা। দুটির সংক্ষিপ্তরূপ দুইরকম। একটি হয় ‘বিএনপি’ আরেকটি হয় ‘বিসিপি’। নাগরিক পার্টি হলে সংক্ষিপ্ত নামে ক্লেশ খায় বিএনপির সঙ্গে। সমস্যা এখানেই। নতুবা ওই নামটাই যথার্থ। এখনো এ নামের ওপর ভোট বেশি। সংক্ষিপ্ত নামটা না হয় না-ই আনা হলো মুখে। এমন নানা চিন্তাভাবনা শেষ মুহূর্তের। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি, অর্থাৎ ভাষার মাসেই ঘোষণা করে দেওয়া হবে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দলের নাম ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের। 

দীর্ঘ প্রচেষ্টা ও বাংলাদেশের আমজনতার মধ্যে অন্তত ৩ লাখ লোকের মতামত যাচাই-বাছাইয়ের পর দল গঠনের সপক্ষে ব্যাপক সায় লাভ করে জুলাই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীরা। যে চেতনা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম দাঁড় করিয়ে ছাত্ররা শুরু করেছিল আন্দোলন শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। তাতে শেষ পর্যন্ত শুধু ছাত্ররাই থাকেনি, যোগ দেয় জনতা। গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও থেকে যায় তার অনুসারী সর্বত্র। সেটা প্রশাসন থেকে শুরু করে সবপর্যায়ে। ছাত্র-জনতার যে আত্মত্যাগ ও যে উদ্দেশ্যে গণঅভ্যুত্থান সেটা পুরাপুরি বাস্তবায়ন ছাত্রদেরই করতে হবে। কেননা স্বাধীনতার পর যেসব সরকার ক্ষমতায় থেকেছে, তাতে তারা বৈষম্যের মধ্যে থেকেই দেশ শাসন করেছে। ছাত্ররা সমাজ থেকে সে বৈষম্য দূর করতেই রাজনৈতিক দলের প্রয়োজন অনুভব করেছে এবং সে থেকেই উদ্যোগ রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি। 

আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকালে রাজধানীর মানিকমিয়া অ্যাভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ন টাওয়ারে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। জানা গেছে, এ সময় ৩ থেকে ৫ লাখ লোকের উপস্থিতি ঘটাতে চান নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা অনুষ্ঠানে। এজন্যই ওপেন স্পেসে রাখা হয়েছে প্রোগ্রাম।

এ সময় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, যুগেরও অধিক সময় ধরে দুঃশাসন, ২০২৪ সালের ৫ জুন ১৮-এর পরিপত্র বাতিল করা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক প্ল্যাটফর্মের উত্থান, সারাদেশে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ, খুনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন ও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া এবং নতুন এক বাংলাদেশ। এই নতুন বাংলাদেশে মানুষের সবচেয়ে বড় দাবি হচ্ছে, একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গঠন। আমরা আমাদের জায়গা থেকে বিশ্বাস করি, হাজারো শহিদের জীবনের বিনিময় ও অর্ধ লাখ মানুষের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখি, সেটি নতুন প্রজন্মের কাছে উপহার দেওয়া আমাদের একটি আমানত। আমরা আমাদের এ লড়াই করে যেতে চাই। সেই লড়াইকে সামনে রেখে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি ঐক্যবদ্ধভাবে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে জাতীয় সংসদ প্রাঙ্গণ সংলগ্ন মানিকমিয়া অ্যাভিনিউয়ে আমরা আমাদের এই নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি।

এ দেশের ১৮ কোটি মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক যে জাতীয় সংসদ, সেই সংসদকে সামনে রেখে আমরা আমাদের এই শপথটি করতে চাই। বিগত যুগের পর যুগ ধরে এ সংসদকে বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা বাস্তবায়নের ক্ষেত্র না বানিয়ে ব্যক্তিগত, গোষ্ঠীগত ও দলীয় স্বার্থ উদ্ধারের জায়গা বানিয়ে রাখা হয়েছিল। স্বৈরাচারের উৎপাদন ক্ষেত্র বানিয়ে রাখা হয়েছিল। তাই আমরা এই জাতীয় সংসদকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছি। এখানে ব্যক্তি, দলীয়, গোষ্ঠী স্বার্থের ঊর্ধ্বে সাধারণ মানুষের স্বার্থ প্রাধান্য পাবে। আমরা বিশ্বাস করি ২৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নবদিগন্ত উন্মোচনের ইতিহাস হতে যাচ্ছে। 

আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, শহিদ পরিবার, দেশি-বিদেশি কূটনীতিক, প্রবাসী বাংলাদেশি, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত সবাই উপস্থিত থাকবেন বলে তিনি জানান। 

জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, আমরা ‘আপনার চোখে নতুন বাংলাদেশ’ ক্যাম্পিং পরিচালনা করেছি। সেখানে সারাদেশের জনগণের কাছে কয়েকটি বিষয়ে মতামত জানতে চেয়েছিলাম। আমরা প্রথম জানতে চেয়েছিলাম কোন তিনটি কাজ করলে বাংলাদেশ বদলে যাবে। রাজনৈতিক দলের কাছে তারা কোন সমস্যার সমাধান চান, রাজনৈতিক দলের নাম ও প্রতীক কি হতে পারে। আমাদের কাছে মানুষের প্রত্যাশা কি, সেখানে প্রধান যে সমস্যার কথা চিহ্নিত করা হয়েছে, সেটি হলো দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সদা জাগ্রত থাকতে হবে। কোথাও যেন কোনো দুর্নীতি সংঘটিত হতে না পারে, সে ব্যাপারে সর্বাধিক মানুষ দাবি জানিয়েছেন।

মানুষ সুশাসনের কথা বলেছে, কোথাও যেন কেউ ক্ষমতার অপব্যবহার করতে না পারে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে বলেছেন। সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরির কথা বলেছেন। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং সব বৈষম্য হ্রাস করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণের কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, জনগণ রাষ্ট্রীয় সব ধরনের প্রতিষ্ঠান ও নীতিগুলোতে সংস্কারের মাধ্যমে জনবান্ধব নীতি প্রণয়নের কথা বলেছেন। রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানগুলোতে সেবার মান উন্নয়নের জন্য বলেছেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যেন জনবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়, সে বিষয়ে মানুষ আমাদের জানিয়েছে।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী, মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, যুগ্ম-আহ্বায়ক মনিরা শারমীন, আতিক মুজাহিদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ, সমন্বয়ক তারেকুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম প্রমুখ।

নতুন দলে যোগ দিচ্ছেন বিভিন্ন মহলের মানুষ 

ছাত্রদের রাজনৈতিক পার্টিতে শুধু ছাত্ররাই নয়, যোগ দেবেন সাবেক সামরিক অফিসার, আমলা, রাজনীতিবিদসহ ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ। এদের মধ্যে যারা জুলাই আন্দোলনের চেতনার সঙ্গে একমত এবং শেখ হাসিনা ও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর নয়, তাদের মধ্যে আগ্রহীদের যাচাই-বাছাই করে দলভুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে। 

শেয়ার করুন