আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বিভিন্ন ফরম্যাটে ক্রম পতনশীল পারফরম্যান্স, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সদ্য সমাপ্ত টেস্ট সিরিজে মুখরক্ষার সমতা, দেশের ক্রিকেট নানা বিতর্ক এবং কথিত দুর্নীতির অভিযোগ সঙ্গী করে অনিশ্চয়তার দোলক দোলায় দুলছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। ৫ মে সোমবারই খবর এলো র্যাংকিংয়ে ১০ নম্বরে নেমে গেছে বাংলাদেশ তাদের প্রিয় ওয়ানডে ভার্সানে। আফগানিস্তান বাংলাদেশের অনেক উপরে। এমনকি ওয়েস্টইন্ডিজ এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশের পেছনে শুধু জিম্বাবুয়ে।
চলতি মাসেই বাংলাদেশ জাতীয় দল ৫ ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলতে যাবে পাকিস্তানে। তার আগেই শারজায় ইউএইর সঙ্গে খেলবে দুটি টি২০ ম্যাচ। এ বছর এশিয়া কাপ এবং টি২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য সিরিজগুলো গুরুত্বপূর্ণ। সাদা বলের সিরিজ খেলতে বাংলাদেশ সফর করার কথা ভারতের। কিছুটা অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত মিলছে সিরিজ ঘিরে উপমহাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে পড়ায়।
বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফর দিয়ে হবে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ সিরিজের পরবর্তী রাউন্ডে বাংলাদেশের সূচনা। আছে সাদা বলের সিরিজ। মোট কথা ২০২৫ বাকি সময় ব্যাস্ত সময় কাটাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ কতটুকু প্রস্তুত? দলের আইকন খেলোয়াড়রা একে একে বিদায় নেয়ায় এবং তাদের স্থানে বিশ্বমানের খেলোয়াড় উঠে না আশায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতায় খাবি খাচ্ছে।
বয়স ভিত্তিক দল এবং ডেভেলপমেন্ট স্কোয়াড থেকে উন্নত মানের খেলোয়াড়দের পরিকল্পিতভাবে পরিচর্যা করে জাতীয় দলে স্থান দেওয়ার পদ্ধতি বিষয়ে অনেকের ভিন্ন মত আছে। বাংলাদেশ দলের ব্যবস্থাপনা, কোচিং স্টাফের গুণগত মান, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে নানা অভিযোগ এবং বিতর্ক আছে। সবশেষে বলতে হয় ঘরোয়া ক্রিকেটে আদৌ উন্নত বিশ্বমানের ক্রিকেটার সৃষ্টির পরিবেশ নেই। এমনি যখন অবস্থা তখন দেশের ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর মোকাবেলায় ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে। এমন না যে কেউ জানে না কোথায় দুর্বলতা। মিডিয়া (প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক, সোশ্যাল) বিস্তর আলাপ হচ্ছে। বিশ্লেষক, বিশেষজ্ঞ, কনটেন্ট ক্রিয়েটররা প্রচুর লিখছেন। কিছুতেই কুম্ভকর্ণের ঘুম ভাঙছে না।
বিশ্ব ক্রিকেটে উত্থান পতন হয়। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইংল্যান্ড, নিউজিলান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশেও খেলোয়াড়দের প্রজন্ম পরিবর্তন হয়। কিন্তু দেশগুলোতে ক্রিকেট সংস্কৃতি আছে, ঘরোয়া ক্রিকেট সুবিন্যস্ত। অবকাঠামোর কারণেই উন্নত মানের প্রচুর খেলোয়াড় নিয়মিত উঠে এসে শূন্যস্থান পূরণ করে। সব দেশের ক্রিকেট প্রশাসনে দায়বদ্ধতা আছে, নেই শুধু বাংলাদেশে। এই দেশে ব্যর্থতার কারণে কখনো বিসিবি কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন শোনা যায়নি। বিসিবির গঠন প্রণালি, নির্বাচন পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা হলেও দেশব্যাপী ক্রিকেট প্রসারে কোনো ভূমিকায় রাখছে না বিসিবি। বিভাগীয় বা জেলাভিত্তিক ক্রিকেট উন্নয়নের কোনো পথনকশা নেই। বেসরকারি পর্যায়ে কিছু কোচিং সেন্টার বা একাডেমি থাকলেও ঢাকা, সিলেট এবং চট্টগ্রাম ছাড়া আন্তর্জাতিক মানের ভেন্যু নেই। ঘরোয়া ক্রিকেট হয় দায়ছাড়া গোছের। ম্যাচ ফিক্সিং, আম্পায়ারিং বিতর্ক পরিবেশ দূষিত করে রেখেছে। জুলাই আগস্ট পরিবর্তনের পর অনেকের আশা ছিল ক্রীড়াঙ্গন তথা ক্রিকেটে মৌলিক শুভ পরিবর্তন আসবে। হয়নি কিছুই। অন্তর্বর্তী সরকারের অবশিষ্ট সময়ে কিছু হবে মনে হয় না। অনিশ্চয়তাকে সাথি করেই চলতে চলতে হয়তো গতি হারাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট। ওদিকে কিন্তু আফগানিস্তান, জিম্বাবুয়ের মতো দেশগুলো এগিয়ে যাচ্ছে। শুনছি নেপাল বড় পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। আশা করি, সংকটের গভীরতা অনুধাবন করে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগোবে বিসিবি।
টেস্ট শুধু নয়, ওডিআই এবং টি২০ ফরম্যাটেও বাংলাদেশ খাবি খাচ্ছে। কারণটা সবার জানা। উন্নয়নের পথটাও অনেকে বাতলে দিচ্ছে। কিন্তু অভাব সদিচ্ছার, উপযোগী মানসিকতার। কোন ফরম্যাটে, কীভাবে ধারাবাহিক উন্নয়ন করা যাবে তার নীলনকশা তৈরি করে পথনকশা প্রয়োজন। শুধু কথায় চিড়ে ভিজবে না। দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। কেউ না পারলে অন্যকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। ২৫ বছর আইসিসির কুলিন পরিবারের সদস্য হয়েও অর্জন সীমিত থাকা দুঃখজনক। বার বার ব্যর্থ হয়েও শিখছে না বাংলাদেশ। সামনে অনেক দেশের উদাহরণ থাকলেও দীক্ষা নিচ্ছে না বাংলাদেশ।