১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০১:৪১:৩৪ পূর্বাহ্ন


রিকার্সে ইমিগ্রেশন অফিস চালু নিয়ে সিটি কাউন্সিলের চ্যালেঞ্জ
মেয়র অ্যাডামসের বিরুদ্ধে মামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৪-২০২৫
মেয়র অ্যাডামসের বিরুদ্ধে মামলা মেয়র অ্যাডামস


নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল রিকার্স আইল্যান্ডে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট আইস অফিস চালুর বিরুদ্ধে মেয়র এরিক অ্যাডামসের বিরুদ্ধে ১৫ এপ্রিল ম্যানহাটনের স্টেট সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছে। কাউন্সিলের দাবি, মেয়র অ্যাডামস ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একটি দুর্নীতিপূর্ণ চুক্তিতে লিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে থাকা ফেডারেল দুর্নীতির মামলার বিনিময়ে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টকে রিকার্সে অফিস খোলার অনুমতি দিয়েছেন। মামলায় একে ‘স্বার্থের সংঘাতে পূর্ণ অবৈধ সিদ্ধান্ত’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে এবং আদালতের কাছে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা (টিআরও) ও প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করা হয়েছে।

এই এক্সিকিউটিভ আদেশটি ৮ এপ্রিল প্রথম উপমেয়র র‌্যান্ডি মাস্ত্রো স্বাক্ষর করেন। যদিও অ্যাডামস দাবি করেছেন যে তিনি সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছিলেন, মামলায় বলা হয়েছে, তিনি প্রকৃতপক্ষে কোনো লিখিতভাবে দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি এবং কোনো প্রকৃত প্রত্যাহার ঘটেনি। সিটি চার্টার অনুযায়ী, মেয়র যদি কোনো বিষয়ে স্বার্থের সংঘাতে থাকেন, তাহলে তাকে স্পষ্টভাবে তার দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হয়। মামলার বক্তব্য অনুযায়ী, এই আদেশ আসলে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার ফল এবং এটিকে আইনের চোখে বৈধ ধরা যায় না।সিটি কাউন্সিল স্পিকার অ্যাড্রিয়েন অ্যাডামস বলেছেন, মেয়র অ্যাডামস তার নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য পুরো শহরের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছেন। তিনি বলেন, ফেডারেল মামলার অবসান এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের রিকার্সে প্রত্যাবর্তন একটি সরাসরি রাজনৈতিক চুক্তির ফল। ডেপুটি স্পিকার ডায়ানা আয়ালা এটিকে বিপজ্জনক ও বেআইনি হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, নিউইয়র্কবাসীর নিরাপত্তা এভাবে বিক্রি করে দেওয়া যায় না।

মামলার নথিতে বলা হয়েছে, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের পাশাপাশি আরো ছয়টি ফেডারেল সংস্থাকে রিকার্সে অফিস খোলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যাদের অনেককেই ট্রাম্প প্রশাসন নাগরিক অভিবাসন আইনপ্রয়োগে নিয়োজিত করেছে। যদিও প্রশাসনের দাবি, ফেডারেল কর্মকর্তারা শুধু অপরাধ তদন্তে কাজ করবেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যত শহরের সানচুয়ারি আইন ভঙ্গ করছে এবং অভিবাসী সম্প্রদায়ের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, অতীতে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট তাদের লক্ষ্যবস্তুর আশপাশে থাকা ব্যক্তিদেরও গ্রেফতার করেছে, এমনকি যথাযথ পরোয়ানা বা সম্ভাব্য কারণ ছাড়াই। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে অভিবাসীদের মধ্যে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি অবিশ্বাস তৈরি হবে এবং নাগরিকরা অপরাধের তথ্য দিতে বা সাহায্য চাইতে ভয় পাবে, যা পুরো শহরের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে। নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল বলেছে, তারা এই অবৈধ আদেশের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে এবং সানচুয়ারি আইন ও অভিবাসীদের অধিকারের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নেবে। তারা আশা করছে, আদালত এই রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে গৃহীত আদেশ বাতিল করবে এবং শহরের গণতান্ত্রিক নীতিকে সুরক্ষা দেবে।

রিকার্স থেকে ইমিগ্রেশনকে বিতাড়িত করেছিল নিউইয়র্ক সিটি

এখন সেই নীতিকে টিকিয়ে রাখা জরুরি

নিউইয়র্ক সিটির সাবেক কাউন্সিল সদস্য কার্লোস মেনচাকা, মেলিসা মার্ক-ভিভেরিতো এবং ড্যানিয়েল ড্রম এক যৌথ বিবৃতিতে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলকে আহ্বান জানিয়েছেন যাতে তারা রিকার্স আইল্যান্ডে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর প্রবেশ ঠেকিয়ে রাখে এবং মেয়র এরিক অ্যাডামসের নতুন নির্বাহী আদেশের বিরোধিতা করে উদ্যোগ গ্রহণ করতে। সাবেক কাউন্সিল সদস্যরা বলেন, আমরা যখন এক দশক আগে আইসকে রিকার্স থেকে সরিয়ে দিয়েছিলাম, তখন আমাদের লক্ষ্য ছিল পরিবারগুলোকে রক্ষা করা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা- কাউকে তার দিনটুকু আদালতে পাওয়ার সুযোগ ছাড়া নির্বাসিত হতে না দেওয়া। বিবৃতিতে তারা আরো বলেন, ছোটখাটো অপরাধ যেমন গাড়ির টেইল লাইট খারাপ থাকা বা লাইসেন্সবিহীন হটডগ বিক্রির মতো ঘটনায় মানুষ গ্রেফতার হচ্ছিল, এরপর কোনো বিচার ছাড়াই আইসের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছিল। কোনো আইনজীবী নয়, কোনো শুনানি নয়- মানুষ হঠাৎ করেই গায়েব হয়ে যাচ্ছিল।

২০১৪ সালে সিটি কাউন্সিল একটি সুস্পষ্ট নীতি গ্রহণ করে যাতে কোনো অভিবাসীকে আইসের হাতে তুলে দিতে হলে আদালতের স্বাক্ষরিত ওয়ারেন্ট থাকতে হবে। তার আগে নয়। তবে এখন মেয়র অ্যাডামসের প্রশাসন সেই নীতিকে পাশ কাটিয়ে আইসকে আবার রিকার্সে প্রবেশের পথ খুলে দিতে চাইছে। সাবেক কাউন্সিল সদস্যদের অভিযোগ, এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে কোনো জনসম্মুখ আলোচনা ছাড়াই। তারা বলেন, আইস অতীতে এই নীতির অপব্যবহার করেছে। মানুষকে বেআইনিভাবে হেফাজতে রাখা হয়েছে যাতে আইস তাদের নিতে পারে। পরিবারগুলোকে কোনো সতর্কতা ছাড়াই বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।

মেয়রের দাবি নতুন আদেশ শুধু ‘ক্রিমিনাল এনফোর্সমেন্ট’সংক্রান্ত তথ্য ভাগাভাগির অনুমতি দিয়েছে, কিন্তু অভিজ্ঞ কাউন্সিল সদস্যদের মতে, এই বিভাজন বাস্তবে কার্যকর হয় না। তারা বলেন, আইসের নিজস্ব নিয়ম চলে এবং একবার তাদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হলে তারা তা সীমিত রাখে না। এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে অপরাধী নয়, এমন অভিবাসীরা বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে বলে সতর্ক করেন তারা। কেউ কেউ যারা কেবল আদালতের তারিখের জন্য অপেক্ষা করছেন, তারা হঠাৎ করেই গ্রেফতার হয়ে নির্বাসিত হতে পারেন এই আদেশের ফলে বিচার ছাড়াই।

সাবেক কাউন্সিল সদস্যরা আরো বলেছেন, আমরা এক সময় সম্মিলিতভাবে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমাদের জেলগুলোকে আইসের মাধ্যমে নির্বাসনের পাইপলাইন হতে দেবো না। এখন সেই সিদ্ধান্তকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। আর সেটা হচ্ছে জনসম্মুখে কোনো আলোচনা ছাড়াই। তারা আরো বলেন, যখন অভিবাসীরা পুলিশকে কল করতে বা আদালতে যেতে ভয় পান, তখন আমাদের সবার নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। যখন পরিবারগুলো রাতারাতি উধাও হয়ে যায়, তখন পুরো মহল্লা সরকারে আস্থা হারায়। তাদের আহ্বান, আমাদের উত্তরসূরি সিটি কাউন্সিল সদস্যদের এখনই এগিয়ে আসতে হবে, এ চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে- ন্যায়বিচারকে পাশ কাটানোর আগে।আমরা অতীতে সেই ভুল দেখেছি। জানি এর পরিণাম কী। এখন আমাদের বেছে নিতে হবে- সেই ভুল আবার করবো, নাকি দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকবো এবং নিউইয়র্ককে শক্তিশালী করবো।

শেয়ার করুন