১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৬:১১:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জ এখন মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে- নাহিদ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ চারজন নিহত নিউইয়র্কে ২০ লাখ মানুষ মেডিকেইড ও ৩ লাখ পরিবার স্ন্যাপ সুবিধা হারাবে নতুন ভিসা ফিতে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়বে আড়াই গুণ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি মাহমুদ খলিলের টেক্সাসের অভিবাসন আইন এসবি ৪ অসাংবিধানিক ঘোষণা ফ্লোরিডার ‘সিনেট বিল ৪-সির কার্যকারিতা বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নতুন নীতি ঘোষণা : ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন এনসিপিসহ ১৪৪ নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের তথ্যে ঘাটতি


ড. নুরুন নবীর পদত্যাগ ও মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের নীতিগত অবস্থান
৩৪ বছর বঙ্গবন্ধুর ‘পূজা করে’ও রাজাকারের তকমা!
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৫-২০২৫
৩৪ বছর বঙ্গবন্ধুর ‘পূজা করে’ও রাজাকারের তকমা! মুক্তধারা বইমেলা ও ফাউন্ডেশনের লগো


মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের আয়োজনে গত ৩৩ বছর ধরে নিউইয়র্কে বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই বইমেলার সঙ্গে শুরু থেকেই ড. নুরুন নবীসহ অন্যরা জড়িত ছিলেন। ড. নুরুন নবী শুধু জড়িত ছিলেন বললেই হবে না, তিনি নীতিনির্র্ধারকদের একজন ছিলেন। বেশ কয়েকবার বইমেলার আহ্বায়কও ছিলেন। এই বইমেলার ৩৩ বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পূজা করেছে, তার বন্ধনা করেছে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলেছে। প্রতিটি বইমেলায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্য কোনো রাজনৈতিক নেতাকে নিয়ে আলোচনার সুযোগ ছিল না। হঠাৎ করে এমন কী হলো যে, ড. নুরুন নবী মুক্তধারা ফাউন্ডেশন থেকে পদত্যাগ করেছেন। শুধু পদত্যাগ নয় মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের রাজাকারের তকমা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বইমেলাকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র করেছেন। বঙ্গবন্ধুর নামে নতুন বইমেলার ঘোষণা দিয়েছেন। ৩৩ বছর বঙ্গবন্ধুর পূজা করেও বিশ্বজিত সাহা ও মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাদের রাজাকারের তকমা লাগানো হলো। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন থেকে ড. নুরুন নবীর পদত্যাগ, বিবৃতি এবং মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের পাল্টা বিবৃতি কমিউনিটিতে টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়েছে। দলবাজিতেই বিভক্ত হলো নিউইয়র্ক বইমেলা। নিউইয়র্ক বইমেলা বাংলাদেশের বাইরে সবচেয়ে বড় বইমেলা ছিল। সেই বইমেলাকেও দলীয়করণ করা হলো। অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, এটা নোংরামি। এদের কাছে বইমেলা বড় নয়, বড় হচ্ছে দল। এই দলবাজির কারণে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা। সবাই যদি দলকে নয় দেশকে ভালোবাসতো, তাহলে এমন দিন দেখতে হতো না।

ড. নুরুন নবীর পদত্যাগ

মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সভাপতির পদ থেকে ড. নুরুন নবী পদত্যাগ করেছেন। ২০২৫ সালের বইমেলা পর্যন্ত তারই সভাপতিত্বে এই ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ছিল। ২০২৫-এর মুক্তধারা নিউইয়র্ক বইমেলার আহ্বায়ক সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার। 

৫ আগস্ট ২০২৫ একটি ঘৃণ্য পরিকল্পনার মাধ্যমে ম্যাটিকিউলিয়াস ডিজাইন প্ল্যানে বাংলাদেশের বর্তমান দখলদার ড. ইউনূসের রাষ্ট্রক্ষমতায় বসার পর থেকেই মুক্তধারা ফাউন্ডেশনে একটি চরম স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল। জাতির পিতাকে অবমাননা, ৩২ নম্বর পুড়িয়ে দিয়ে নগ্ন উল্লাস, সাম্প্রদায়িক আক্রমণ, খুন, ধর্ষণ, মব চক্রের মাধ্যমে পরিকল্পিতগণহত্যা ইত্যাদিকে সমর্থন করে আসছিলেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের একটি চক্র! এর প্রতিবাদে ড. নুরুন নবী ছিলেন সবসময়ই সোচ্চার।

একাত্তরের পরাজিত শক্তির ছত্রছায়ায় এই ফাউন্ডেশনের একটি পক্ষের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। তারা যে কোনোভাবেই এবারের বইমেলা দখলের জন্য ছিল বিশেষভাবে তৎপর। শেষ পর্যন্ত তাদের হাতেই বন্দি হতে চলেছে ৩৪ বছর ধরে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী বইমেলা। এবারের বইমেলায় অবৈধ ইউনূস সরকারের পদলেহিদের দ্বারা অনুষ্ঠানমালা তৈরি হওয়ার প্রতিবাদে, নিউইয়র্কের সাংস্কৃতিক মোর্চা ‘একাত্তরের প্রহরী’ একটি সভা আহ্বান করে। সেই সভায় নিউইয়র্কের লেখক-সাংবাদিক-আবৃত্তিশিল্পী-মুক্তিযোদ্ধা-সাংস্কৃতিক কর্মী-নাট্যজন-পেশাজীবী-সংগঠকসহ একটি বড় সংখ্যক অভিবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে মিলিত হন ড. নুরুন নবী। তিনি সেখানে এক বিবৃতিতে বলেন, মুক্তধারা বইমেলার ঐক্য ধরে রাখার জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আমাদের দাবি ছিল একটাই, বইমেলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রেখে এগিয়ে যাবে। যা এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই চলে আসছে। কিন্তু খুবই পরিতাপের বিষয়, মুক্তধারা গ্রন্থবিতানের মালিক ও তার কিছু অনুসারী দখলদার ইউনুস সরকারের প্রতি নগ্ন আনুগত্য স্বীকার করে এই চেতনা ও মূল্যবোধকে বিসর্জন দিয়েছেন। একই সঙ্গে বইমেলার নামে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িক শক্তির পৃষ্ঠপোষক অবৈধ ইউনূস সরকারের রাষ্ট্রীয় অন্যান্য সাহায্য পাওয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি একাত্তরের চেতনাবিরোধীদের হাতে বইমেলাকে ‘নয়া-বন্দোবস্ত’ দিয়েছেন।

ড. নবী বলেন, বাংলাদেশের আজকের পরিস্থিতি আমাদের কারোই অজানা নয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে দখলের দিকে ঠেলে দিয়েছে এই অবৈধ সরকার। সেন্টমার্টিন ইস্যু, আরাকান করিডোর, চট্টগ্রাম বন্দর অবৈধ ও গোপনে লিজ দেওয়ার অনেক কিছুই এগিয়ে এনেছে এই দখলদার চক্র। এই সময়ে অবৈধ সরকার, শিল্প-সাহিত্য সংস্কৃতিকে অধিগ্রহণ করতে মরিয়ে হয়ে আছে। নিউইয়র্ক বইমেলা নতজানু নীতি নিয়ে তাদের পদযুগলেই সমর্পিত হয়েছে। 

উল্লেখ্য, মুক্তধারা আয়োজিত ২০২৫-এর ৩৪তম বইমেলায় ৪০ বছর বয়সী একজন তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনকে আনা হচ্ছে উদ্বোধক হিসেবে। সাদাত হোসাইন সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী লেখকদের প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় চিহ্নিত। তিনি ৭.৬২ মার্কা জুলাই সন্ত্রাসের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন। রাজপথে মাইক হাতে নেমে দখলদার ইউনুসের গভীর ষড়যন্ত্রকে সমর্থন করেছিলেন। আগস্ট থেকে এই অবৈধ সরকারের দোসর হিসেবে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। এই বইমেলার ধারাবাহিক ঐতিহ্যের সঙ্গে চরম বরখেলাপ ঘটিয়ে একজন অখ্যাত সাম্প্রদায়িক তরুণের হাতে উদ্বোধনের দায়িত্ব দেওয়াকেও ম্যাটিকিউলিয়াস ডিজাইনের অংশ বলছেন কেউ কেউ। 

সভায় বিস্তারিত আলোচনার পরে, সর্বসম্মতিক্রমে আগামী ২৪ ও ২৫ মে উইকেন্ডে নিউইয়র্কে ‘বঙ্গবন্ধু বইমেলা’ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। বিভিন্ন সেক্টর বন্টন করে নির্ধারিত ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সভায় যোগ দেওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সমস্বরে বলেন, মুক্তধারা গ্রন্থবিতানের মালিক ও একাত্তরের চেতনাবিরোধী সহযোগীদের কার্যক্রম খুবই ঘৃণ্য বিষয়। এরা একাত্তরের ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেই এগোতে চাইছে। তাদের মূল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে ৫ আগস্টের পর। সর্বসম্মতিক্রমে ড. নুরুন নবীকে ‘বঙ্গবন্ধু বইমেলা ২০২৫’-এর আহ্বায়ক নির্বাচিত করা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটি অভিবাসী সমাজের বিভিন্ন স্তরে ক্রমাগতভাবে মতবিনিময় অব‌্যাহত রাখবে। মেমোরিয়াল ডে উইকেন্ডে ‘বঙ্গবন্ধু বইমেলা’; সফল করার জন্য সবার প্রতি সবিনয় অনুরোধ জানিয়েছেন আহ্বায়ক ড. নুরুন নবী।

মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের বিবৃতি

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং পত্রপত্রিকায় ড. নুরুন নবী মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসনের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে বিবৃতি দিয়েছেন। পদত্যাগ করা তার অধিকার, কিন্তু এই বিবৃতিতে তিনি মুক্তধারা ফাউন্ডেশনকে নিয়ে এমন কিছু গুরুতর অভিযোগ এনেছেন যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন এবং মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের গত ৩৩ বছরের ঐতিহ্য এবং আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তার এই বিবৃতি পড়ে অনেকেই বিভ্রান্ত ও বিভাজিত হতে পারেন মনে করে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন তাদের অবস্থান পরিষ্কারভাবে তুলে ধরার প্রয়োজনবোধ করছে।

গত ৩৩ বছর ধরে বাঙালির হাজার বছরের গৌরবোজ্জ্বল সংস্কৃতি, বাংলা ভাষা এবং বাংলা সাহিত্যকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে যে সংগঠনটি সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে তার নাম মুক্তধারা ফাউন্ডেশন। শুধু বাংলা সাহিত্য, সংস্কৃতিই নয় এই সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে প্রবাসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের আত্মায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে।

প্রায় প্রতিটি বইমেলায় মুক্তধারা ফাউন্ডেশন সম্মাননা প্রদান করেছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, আয়োজন করেছে বায়ান্ন ও একাত্তরের ওপর বিশেষ সেমিনার এবং চিত্র প্রদর্শনী। এই বইমেলাতেই শিশু-কিশোররা ছবি এঁকেছে মুক্তিযুদ্ধের, ছবি এঁকেছে বাংলাদেশের বিজয়ের, ছবি এঁকেছে বঙ্গবন্ধুর। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন আয়োজিত শিশু-কিশোর মেলায় নতুন প্রজন্ম বানিয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য। প্রতি বছরের মতো এবছরের বইমেলায়ও থাকছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। একটি পর্বে যোগ দিচ্ছেন ক্যাপ্টেন (অব.) সীতারা বেগম, বীরপ্রতীক। অতএব এই সংগঠনকে ‘মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী’ তকমা দেওয়া মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী চক্রকে শক্তিশালী করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় পরিচালিত একটি সংগঠনকে দুর্বল করতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী চক্রই লাভবান হবে।

ড. নুরুন নবী মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ছিলেন, আহ্বায়ক ছিলেন তিনটি বইমেলার। কারণ, ড. নুরুন নবী একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বলেই মুক্তধারা ফাউন্ডেশন একজন মুক্তিযোদ্ধাকে পথচলার সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, তিনি তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বিবৃতিতে এমন কিছু অভিযোগ এনেছেন যা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অনভিপ্রেত। তিনি মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সিইও ও ইসি কমিটির সদস্যদের ‘একাত্তরের চেতনা বিরোধী’ বলে আখ্যা দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেননি। অথচ বাস্তবতা হলো এই যে, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের বর্তমান চেয়ারপারসন ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদসহ এই ফাউন্ডেশনের প্রায় অর্ধ ডজন কর্মীই মুক্তিযোদ্ধা অথবা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। ড. নুরুন নবীর এই মিথ্যা অভিযোগ এবং দূরভিসন্ধিমূলক বক্তব্যকে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন নীতিগতভাবে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের ইসি কমিটির মেয়াদ শেষ হলে মুক্তিযোদ্ধা ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে নতুন ইসি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু, ড. নুরুন নবী ২০২৫ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য ৩৪তম বইমেলা পর্যন্ত দায়িত্বে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করলে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে এই প্রস্তাবে রাজি হয় এবং ইসি কমিটির মেয়াদ ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত বর্ধিত করে। কারণ একই ড. নুরুন নবী একজন মুক্তিযোদ্ধা। ২০২৪ সালের ছাত্র আন্দোলনে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ শাসিত সরকারের পতনের পর ড. নুরুন নবী দলটির পুনর্বাসন নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন। এটা তার ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মুক্তধারা ফাউন্ডেশন একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। একই সঙ্গে একটি অরাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়া এবং একটি রাজনৈতিক দলের পুনর্বাসনে কাজ করতে গেলে যে ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ (স্বার্থের দ্বন্দ্ব) তৈরি হয় এখানেও তাই হয়েছে। এই ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ সম্পর্কে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি রাজনৈতিক দলের পুনর্বাসনে কাজ করাকে প্রাধান্য দেন এবং ২৬ এপ্রিল থেকে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের মেয়াদ বর্ধিত ইসি কমিটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করা থেকে বিরত থাকার কথা ব্যক্ত করেন। আসন্ন বইমেলার আগেই পদত্যাগ করা অথবা মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সরাসরি বিরোধিতা করার মতো কোনো মন্তব্য তিনি করেননি।

তিনি অন্যায়ভাবে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সিইও বিশ্বজিত সাহার প্রবাসে বাংলা বইমেলা শুরু করার মতো এক অসামান্য কৃতিত্ব, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সংস্কৃতি এবং ভাবমূর্তি তুলে ধরার জন্যে তার আজীবনের অবদানকে অবমূল্যায়ন করেছেন। নিজ স্বার্থের প্রয়োজনে অথবা নিজের রাজনৈতিক লাভের জন্যে ৩৪ বছরের একটি ঐতিহ্যকে হেয় করে বিভাজন তৈরি করার অপচেষ্টা করেছেন। আমরা আশা করবো অচিরেই যেন তার শুভবুদ্ধির উদয় হয়।

তাছাড়া তিনি কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইনকে নিয়েও ড. নুরুন নবী অনেক মিথ্যা তথ্য ছড়িয়েছেন। উল্লেখ্য, সাদাত হোসাইন এবারের ৩৪তম নিউইয়র্ক আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলার আমন্ত্রিত অতিথি এবং তিনি বইমেলার উদ্বোধন করবেন। তিনি এই সময়ের একজন জনপ্রিয় লেখক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তার আদর্শ। কথাসাহিত্যিক সাদাত হোসাইন সম্পর্কে যারা জানতে চান তারা খুব সহজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং অন্তর্জালে এই সত্যতা যাচাই করতে পারবেন।

গত ৩৩ বছর ধরে যারা মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের পাশে ছিলেন, তাদেরকে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন নিশ্চিত করতে চায় যে, ড. নুরুন নবীর সঙ্গে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে তফাৎ শুধু এই যে, তারা রাজনৈতিক আদর্শে একে ব্যবহার করার বিরুদ্ধে। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কেবল বাংলাদেশ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ব্যক্তিবর্গই ইসি কমিটির সদস্যপদ পেতে পারেন। গত তেত্রিশ বছরে বাংলাদেশ অনেক রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে, কিন্তু মুক্তধারা ফাউন্ডেশন কখনোই কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি সমর্থন প্রদর্শন করেনি, এবং এটি কখনোই কোনো রাজনৈতিক দলের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হবে না। মুক্তধারা ফাউন্ডেশন সব সময় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে।

এই বিবৃতি কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনকে উদ্দেশ্য করে নয়। এই বিবৃতি মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের সব শুভাকাক্সক্ষী ও শুভানুধ্যায়ী, যারা গত ৩৩ বছর পথচলার সঙ্গী ছিলেন, তাদের জন্যে। এই বিবৃতির মাধ্যমে মুক্তধারা ফাউন্ডেশন তাদেরকে নিশ্চিত করতে চায় যে, মুক্তধারা ফাউন্ডেশন এখনো একই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে, যে লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে প্রথম বইমেলা শুরু করেছিল। ২৩ মে শুরু হচ্ছে ৩৪তম বইমেলা। মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সবাইকে বইমেলায় আমন্ত্রণ।

বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে বিশিষ্টজনদের বিবৃতি

বর্তমান দখলদার ইউনূস সরকারের নগ্ন সমর্থক নিউইয়র্কের একটি বইমেলার আয়োজক মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের তিন কর্মকর্তা চরম মিথ্যাচারমূলক একটি বিবৃতি দিয়েছেন। ফাউন্ডেশনের তিনজন কর্মকর্তা রোকেয়া হায়দার, ডা. জিয়াউদ্দিন আহমদ ও বিশ্বজিত সাহা। ড. নুরুন নবীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হেয় করার অপচেষ্টা চালিয়েছেন। ড. নবী মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রশ্নে দ্বিমত পোষণ করে ফাউন্ডেশনের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করে কিছু স্পষ্ট কথা মিডিয়ায় বলার পর তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। ড. নুরুন নবীর বিরুদ্ধে এহেন মিথ্যা অপপ্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবাদ করে বিবৃতি দিয়েছেন দেশ ও প্রবাসের বিশিষ্টজনেরা।

তারা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ড. নবী গত ৩৩ বছরের বইমেলার প্রথমদিন থেকে মেলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি তিনটি বইমেলার আহ্বায়ক ছিলেন। একই সঙ্গে মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসনের দায়িত্ব কৃতিত্বের সঙ্গে পালন করেছেন। ২০২৫-এর বইমেলাও তারই নেতৃত্বে হওয়ার কথা ছিল। এই বিষয়ে মেলা কমিটির সব সদস্য একমত ছিলেন। তাকে সেই দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল, সর্বসম্মতভাবে। সিদ্ধান্ত ছিল, চলমান দখলদার সরকারের এই চরম মবোক্রেসিকে সমর্থন করেন- এমন কেউ বইমেলার সঙ্গে যুক্ত হতে পারবেন না। কিন্তু এই সিদ্ধান্তকে চরম উপেক্ষা করে সাদাত হোসাইন নামের একজন লেখককে এবারের বইমেলায় উদ্বোধকের দায়িত্ব দেওয়া হয়, যিনি সরাসরি ইউনূস সরকারের ম্যাটিকিউলিয়াস ডিজাইন প্ল্যানের দোসর ও বেনিফিশিয়ারি। 

বিবৃতিদাতারা বলেন, ড. নুরুন নবী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি রণাঙ্গনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ‘ব্রেন’ বলে খ্যাতিমান ছিলেন। এর দলিলপত্র জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষিত আছে। তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অকুতোভয় সেনানী। ১৯৯২ সালে শহিদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটির উত্তর আমেরিকা চ্যাপ্টারের যৌথ আহ্বায়কের দায়িত্ব কৃতিত্বের সঙ্গে পালন করেছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখালেখির জন্য তিনি একুশে পদকে ভূষিত হয়েছেন। তার লেখা গ্রন্থের সংখ্যা পঁচিশের অধিক। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদ উত্তর আমেরিকার দীর্ঘকালীন সভাপতি। না, তিনি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন। তবে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক আদর্শ, জাতির পিতার নীতিমালা, ন্যায় ও সাম্যের বাংলাদেশের উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা তিনি। বিবৃতিদাতারা বেদনার সঙ্গে বলেন, ড. নবীকে একটি রাজনৈতিক দল পুনর্বাসনে সক্রিয় বলে যে বানোয়াট অপবাদ দেওয়া হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক। 

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা বলেন, মনে রাখা দরকার, ১৯৯২ সালে এই বইমেলা যখন বাঙালির চেতনা মঞ্চ নামে একটি সংগঠনের মূল উদ্যোগে শুরু হয়।

তখন মুক্তধারা বইয়ের দোকানটিকে মূলত বই বিক্রির জন্য যুক্ত করা হয়েছিল। ওই সময়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল বিএনপি। ওই প্রতিতূল সময়ে মূলত বাঙালী জাতীয়তাবাদ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধকে ধারণ করেই বইমেলা যাত্রা শুরু করেছিল। সেখানে একক কোনো কৃতিত্ব মুক্তধারা গ্রন্থবিতানের ছিল না। সেই বইমেলা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়েই এগিয়েছে গত ৩৩ বছর। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে যখন ৩২ নম্বর গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো, তখনও বইমেলার প্রায় সকলেই ছিলেন নীরব। বিবৃতিদাতারা ড. নুরুন নবীর বিরুদ্ধে সকল অশুভ অপপ্রচার বন্ধের আহ্বান জানান।

বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন- ড. জিনাত নবী, তাজুল ইমাম, তাজুল মোহাম্মদ, ড. এবিএম নাসির, রাফায়েত চৌধুরী, ডা. সেজান মাহমুদ, ড. দেলওয়ার আরিফ, মিথুন আহমেদ, লুৎফুন নাহার লতা, রানা হাসান মাহমুদ, ড. হাসান মামুন, ড. আতাউল করিম, সাফেদা বসু, ড. নাহিদ হাসান, স্বপ্না ইমাম, ফকির ইলিয়াস, দস্তগীর জাহাঙ্গীর, ড. দিলীপ নাথ, জি এইচ আরজু, স্বীকৃতি বড়ুয়া, দেলওয়ার এলাহী, মিনহাজ আহমেদ, ফারহানা ইলিয়াস তুলি, বাশিরুল হক, আল আমিন বাবু, আরিফা রহমান রুমা, গোপাল সান্যাল, ফারজানা রহমান শাওন, গোপন সাহা, সুতপা মন্ডল, জাকারিয়া চৌধুরী, আব্দুল কাদের মিয়া, রওশন আরা নীপা, সাবিনা নীরু, এ্যানি ফেরদৌস, জাফর ফেরদৌস, তাহরীনা পারভীন প্রীতি, স্বপ্নীল ফিরোজ, মনজুর কাদের, মিল্টন আহমেদ, পংকজ তালুকদার, জুয়ানা চৌধুরী, পিনাকি তালুকদার, সৈয়দ আতিক, খালেদ সরফুদ্দীন, সিসিলিয়া মোরাল, আবু সাঈদ রতন, স্বাধীন মজুমদার, আনোয়ার সেলিম, কামাল হোসেন মিঠু, আসলাম আহমদ খান, স্মৃতি ভদ্র, বিলকিস রহমান দোলা, পারভীন সুলতানা, জয়তূর্য চৌধুরী, ঝর্ণা চৌধুরী প্রমুখ।

শেয়ার করুন