১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০১:৫৯:০৫ পূর্বাহ্ন


ডমিনোজ পিজার বিরুদ্ধে শূকরের মাংস মিশিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৬-২০২৫
ডমিনোজ পিজার বিরুদ্ধে শূকরের মাংস মিশিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মামলা ডমিনোজ পিজা


মিশিগান স্টেটের ওয়াটারফোর্ড টাউনশিপ সিটিতে ডমিনোজ পিজার একটি শাখার বিরুদ্ধে গত ৯ মে মুসলিম পরিবারের প্রতি বৈষম্য, ধর্মীয় অপমান ও খাদ্যদ্রব্যে ইচ্ছাকৃত শূকরের মাংস দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। দুই মুসলিম নারী ও তাদের সন্তানরা গত ১১ মার্চ সন্ধ্যায় এই ঘটনায় শিকার হন। সংগঠনটি মিশিগান ডিপার্টমেন্ট অব সিভিল রাইটসের কাছে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করেছে। যদিও সোমবার পর্যন্ত অভিযোগটি অফিসিয়াল ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন এটি তাদের ই-মেইল ইনটেক সিস্টেমে থাকতে পারে।

পরিবারটি ওয়াটারফোর্ড টাউনশিপ পুলিশ ডিপার্টমেন্টে একটি পৃথক অভিযোগও দায়ের করে। পুলিশ বিভাগ জানায়, তারা তদন্ত শেষ করে মামলার চার্জের অনুরোধ জমা দিয়েছে ওকল্যান্ড কাউন্টি প্রসিকিউটর অফিসে। পুলিশ প্রধান স্কট আন্ডারউড বলেন, এখনো প্রসিকিউটরের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনার সময় এক মুসলিম নারী ও এক শিশু হিজাব পরিহিত ছিলেন। তখন ডমিনোজ পিজার ওয়াটারফোর্ড শাখার এক কর্মচারী তাদের নিয়ে ইসলামবিদ্বেষী ও বর্ণবিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেন। এই বক্তব্য অন্য এক গ্রাহক শুনে সঙ্গে সঙ্গে ওই কর্মচারীকে প্রতিহত করেন। অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, ওই কর্মচারী ইচ্ছাকৃতভাবে নারীদের অর্ডার করা দুটি পিজার মধ্যে শুয়োরের মাংস, যা ইসলামে নিষিদ্ধ (বেকন), মিশিয়ে দেন, যদিও তারা স্পষ্টভাবে ‘নো পর্ক’ অনুরোধ করেছিলেন। এক পিজার চিজের নিচে একটি চুলও পাওয়া যায়।

পরিবারটি খাবার নিয়ে বাসায় ফিরে খাওয়ার সময় এসব বিষয় লক্ষ করে। এরপর তারা ডমিনোজের করপোরেট ওয়েবসাইটে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করে এবং স্থানীয় দোকান ম্যানেজার ও এরিয়া সুপারভাইজারের সঙ্গে যোগাযোগ করে। যদিও তারা জানায় একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত করা হয়েছে, তবে পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে প্রতিষ্ঠানটি কোনো দায় স্বীকার করেনি। এপ্রিল মাসে মুসলিম সিভিল রাইটস সংগঠন কেয়ার- মিশিগান ডমিনোজ করপোরেট অফিসে একটি চিঠি পাঠিয়ে বিষয়টি তদন্তের দাবি জানায়, কিন্তু কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। বাদীদের অ্যাটর্নি অ্যামি ভি. দুকোর বলেন, এটি শুধু একটি ভুল অর্ডারের বিষয় নয়। এটি হচ্ছে ধর্মীয় বিদ্বেষকে প্রশ্রয় না দিয়ে সব ধর্মাবলম্বীর জন্য নিরাপদ সেবাপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করার প্রশ্ন। যারা ইসলামবিদ্বেষী আচরণ সহ্য করে কিংবা গুরুত্ব না দিয়ে পাশ কাটিয়ে যায়। মুসলিম পরিবারগুলোর নিরাপদে ও সম্মানজনকভাবে জনসাধারণের সেবা ও স্থান ব্যবহারের অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি দাবি করেন, এই ঘটনার যথাযথ বিচার হবে এবং ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক আচরণ না ঘটে, সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

কেয়ার-মিশিগানের নির্বাহী পরিচালক দাউদ ওয়ালিদ বলেন, এটি নিছক একটি ভুল কিংবা গ্রাহকসেবা সংক্রান্ত সমস্যা নয়, বরং একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ধর্মীয় বৈষম্য, যা একটি মুসলিম পরিবারকে অপমানিত ও বিপদের মুখে ফেলেছে। আমরা ডমিনোজ পিজার কাছ থেকে পূর্ণ জবাবদিহি চাই।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্পষ্ট যে, ধর্মীয় বৈষম্য ও বিদ্বেষ শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানেও ছড়িয়ে পড়ছে, যা গভীর উদ্বেগের বিষয়। মুসলিম পরিবার কর্তৃক গৃহীত আইনি পদক্ষেপগুলো কেবল একটি ঘটনার বিচার চাওয়ার নয়, বরং মুসলমানদের বৃহত্তর সামাজিক ন্যায়বিচার ও ধর্মীয় সহনশীলতা প্রতিষ্ঠার দাবিও বয়ে আনে। এখন প্রয়োজন, যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভবিষ্যতে যেন কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায় এ ধরনের অবমাননার শিকার না হয়, সে বিষয়ে প্রশাসনিক ও করপোরেট স্তরে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা।

শেয়ার করুন