১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৬:৩৫:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জ এখন মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে- নাহিদ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ চারজন নিহত নিউইয়র্কে ২০ লাখ মানুষ মেডিকেইড ও ৩ লাখ পরিবার স্ন্যাপ সুবিধা হারাবে নতুন ভিসা ফিতে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়বে আড়াই গুণ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি মাহমুদ খলিলের টেক্সাসের অভিবাসন আইন এসবি ৪ অসাংবিধানিক ঘোষণা ফ্লোরিডার ‘সিনেট বিল ৪-সির কার্যকারিতা বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নতুন নীতি ঘোষণা : ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন এনসিপিসহ ১৪৪ নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের তথ্যে ঘাটতি


উচ্ছ্বাসে বিএনপি কি দিশেহারা নাকি ষড়যন্ত্র
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৬-২০২৫
উচ্ছ্বাসে বিএনপি কি দিশেহারা নাকি ষড়যন্ত্র সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উপর হামলা


ভয়-ভীতি দেখিয়ে জনগণের ভোট ছাড়া নির্বাচন করার অভিযোগে সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে গত ২২ জুন রোববার দুপুরে মামলা করেছিল বিএনপি। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আরও দুই প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও ১০ নির্বাচন কমিশনার, পুলিশের কর্মকর্তাও আসামি। এতে অজ্ঞাত আসামিও রয়েছে। ওই মামলায় আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। তারা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করে উল্টো ভয়-ভীতি দেখিয়ে জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচন করে ফৌজদারি অপরাধ করেছেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। 

কিন্ত গণমাধ্যমের খবরে বলা হয় মামলার কয়েক ঘণ্টা পর ওইদিন ই সন্ধ্যায় ‘মব’ সৃষ্টি করে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার উত্তরার বাসা ঘেরাও করে স্থনীয় কিছু ‘জনতা’। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁকে হেফাজতে নেয় উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। এর পর নূরুল হুদাকে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়ার পর গ্রেপ্তার দেখানো হয় বিএনপির মামলায়। ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কিছু লোক সাবেক সিইসির বাসা ঘিরে রেখেছে- এমন খবর পেয়ে পুলিশ পাঠানো হয়। জনতা তাঁকে আটক করে রেখেছিল। নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁকে হেফাজতে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। শেরেবাংলা নগর থানায় করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।’ কে এম নূরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। অভিযোগ আছে- সেই ভোটের আগের রাতে ভরে রাখা হয় ব্যালট বাক্স। 

সরকার ও বিএনপি’র দায়সাড়া বক্তব্য

এদিকে ‘মব’ সৃষ্টি করে উচ্ছৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারী সবাইকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। রাতে এক বিবৃতিতে সরকার জানায়, নূরুল হুদাকে একটি সুনির্দিষ্ট মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ সময় ‘মব’ সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি ও অভিযুক্তকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে। সরকার দেশের সব নাগরিকের প্রতি আবারও আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছে। অন্যদিকে এদিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, ‘মব জাস্টিস কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁর সঙ্গে (সাবেক সিইসি নূরুল হুদার) যেটা হয়েছে, মানে গলায় এটা–সেটা পরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমন কোনো কিছু থাকলে আমাদের জানাবেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রপার অ্যাকশন নেবে।’

এদিকে নূরুল হুদাকে লাঞ্ছিত করার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ‘কারা এটা করেছে জানি না। তবে এসব নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমেই দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোটা ধ্বংস হয়েছে বিগত দিনে।’ অন্যদিকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার অবমাননার সঙ্গে বিএনপির কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে ডিসিপ্লেনারি অ্যাকশন নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। বিএনপি কখনই মব জাস্টিসকে প্রশ্রয় দেয় না, ভবিষ্যতেও দেবে না’- এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক।

ঘটনা দুই

নারায়ণগঞ্জের বন্দরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের বিরোধের জেরে দুজন নিহতের পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ আছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ২২ জুন রোববার। গণমাধ্যম থেকে পাওয়া খবরে দেখা যায় যে, গত ২১ জুন শনিবার রাত ৯টার দিকে বন্দর শাহী মসজিদ এলাকায় ও রাত সাড়ে ১১টায় হাফেজীবাগ এলাকায় দুজন নিহত হন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ও র‌্যাব। নিহত দুজন হলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের হাফেজীবাগ এলাকার আবদুল কুদ্দুস (৭০) ও বন্দর শাহী মসজিদ এলাকার প্রয়াত আবদুল জলিলের ছেলে মেহেদী হাসান। আবদুল কুদ্দুস পেশায় রাজমিস্ত্রী ও মেহেদী হাসান বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। তিনি মাছ ব্যবসায়ী বলে স্বজনেরা জানিয়েছেন। পুরো এলাকা থমথমে অবস্থা। আতঙ্কে এলাকার লোকজন দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন। 

এর আগেও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর পুঠিয়ায় বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে অন্তত ৮ জন আহতের খবর পাওয়া গেছে। এসময় স্থানীয় একটি বিএনপি অফিসে ও তিনটি মোটরসাইকেলে আগুন দেওয়া হয়। বুধবার (১৪ মে) রাতে পুঠিয়া বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর আগে বুধবার বিকেলে রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলা চত্বরে স্থানীয় পুকুর এবং দীঘি টেন্ডার নেওয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। 

একটি পরিসংখ্যান

বিএনপিতে রাজনৈতিক অর্ন্তকোন্দল দৃশ্যমানভাবে বেড়েছে বিএনপির তৃণমূলে ৮ মাসে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর মৃত্যু দলীয় কোন্দল বাড়ছে বিএনপিতে। বিবদমান বিভিন্ন গ্রুপের সংঘর্ষে কেবল এপ্রিলেই দলটির অন্তত খবর এসেছে গণমাধ্যমে।

উচ্ছ্বাসে বিএনপি কি দিশেহারা নাকি ষড়যন্ত্র

সম্প্রতি লন্ডনে অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠক হয়েছে। এরপরপর আরও শোনা যাচ্ছে, আগামী ৫ আগস্টের আগেই দেশে ফিরতে পারেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গণমাধ্যমের খবরে জানা গেলো যে, প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যে বৈঠক শেষে লন্ডনে পার্ক লেনের হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফিরতে কোনো বাধা নেই। তিনি যখন খুশি দেশে ফিরতে পারেন। সময়মতো তিনি এ সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রশ্ন হচ্ছে এত্তোসব খবরে বিএনপি’র নেতাকর্মী উচ্ছসিত হয়েই কি বিএনপি’র নেতাকর্মীরা মব, চাঁদাবাজি, দলাদলি, সংঘাত সহিংসতা আধিপত্য রক্ষায় জড়িয়ে পড়িয়েছে। কেননা দীর্ঘ ১৭ বছর পর আন্দোলন সংগ্রামের পর ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নেয়। ফ্যাসিবাদ পতনের পর সে-সময়ে বিএনপি’র একেবারে সর্ব্বোচ্চ পর্যায় থেকে কিছু সু-বার্তা আসে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দীর্ঘ ছয় বছর পর বিএনপির সমাবেশে ভাষণ দিয়ে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ভুলে শান্তিপূর্ণ দেশ গড়ার বার্তা দেন নেতাকর্মীদের। অন্যদিকে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে অনেক ত্যাগ স্বীকার করে এককভাবে পরিচালিত করে প্রবীন, সিনিয়র, জুনিয়র সব কাতারের নেতাকর্মীদের নিয়ে যিনি দলকে এই পর্যায়ে আনলেন, বিএনপির সেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান-ও দেন সু-বার্তা। ২০২৪ সালে ৭ আগস্ট বিকালে নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্যে তিনি দলের নেতাকর্মী সর্বোপরি দেশবাসীর কাছে শান্তি রক্ষায় উদাত্ত আহবান জানান। এনিয়ে দেশে-বিদেশে প্রশংসা কুড়ান। রাজনীতিতে ভেদাভেদ ভুলে দলের এক অহিংসা বার্তায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেদিন বলেছিলেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রে উত্তরণের চলমান প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে সারা দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির ষড়যন্ত্র স্পষ্ট হয়ে উঠছে। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করুন। বলেছিলেন, ধর্ম-বর্ণ পরিচয়ের কারণে কেউ যেন নিরাপত্তাহীনতায় না থাকে, সবার আগে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’ সবচেয়ে বড়ো বার্তাটি ছিলো তা-হলো তিনি বলেন, আপনারা যে যেখানে বসবাস করেন সেখানে আপনার বন্ধু কিংবা পাড়া প্রতিবেশী- তিনি মুসলমান-বৌদ্ধ-হিন্দু-খৃষ্টান যে ধর্মীয় পর্যায়ের যেই হোক না কেন, বিশ্বাস যাই হোক না-তার নিরাপত্তায় দেয়াল হিসেবে দাঁড়িয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। এরপর অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলেন, ‘দেশবাসীর প্রতি আমার বিনীত আহ্বান, কেউ দয়া করে নিজের হাতে আইন তুলে নেবেন না। প্রতিহিংসা-প্রতিশোধে লিপ্ত হবেন না। বিচারের ভার নিজ হাতে দয়া করে নেবেন না।’ এখন প্রশ্ন খোদ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যার পুরো একক নেতৃত্বে দলটি পরিচালিত হচ্ছে তার পক্ষ থেকে সর্বত্র এমন শান্তির বার্তার পর আসলে দেশবাসী কি দেখছে। তাদের মনে প্রশ্ন জাগছে বিএনপি’র এক শ্রেণীর নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে মব সৃষ্টি, চাঁদাবাজি আর দলীয় কোন্দল গা ভাসিয়ে দেয়ার পেছনে কি অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস। এমন উচ্ছ্বাসে আসলে আন্তরিকতা না-কি রয়েছে ষড়যন্ত্রের জাল..। বিষয়টি কি এরকম কি-না যে লন্ডনে ফয়সালা হয়ে গেছে তারেক রহমান ক্ষমতায় আসছেন? হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী? অন্যদিক থেকে দেখলে কি এমনটা বলা যায় না লন্ডনের ড. ইউনুস আর তারেক রহমানের বৈঠকের পর দেশে একটি পক্ষ উচ্ছ্বাস প্রকাশের নামে গোপন ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন। সর্বত্র কি এই মেসেজ দেয়া হচ্ছে না যে, দেখো.. দেখো.. দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ক্ষমতায় না বসতেই কি করছে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা? সর্বত্র কি বলাবলি হচ্ছে না‘ শুরু হয়ে গেছে তাণ্ডব’..। এরা ক্ষমতায় এসে কি আর দেবে? এমন প্রশ্ন কি এখন সর্বত্র ভেসে বেড়াচ্ছে না? দলের ভেতরে-বাইরে অনেকের মনে এমন প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। আর বাতাসে গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে এর পেছনে রয়েছে গভীর ষড়যন্ত্র..-এমনটাই বিশ্লেষকরা..।

শেয়ার করুন