ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর নতুন বাংলাদেশ গড়তে গত ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই ঘোষণাপত্র পাঠের উদ্যোগ নিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার সবার সঙ্গে আলোচনা করে জুলাই ঘোষণাপত্র তৈরির আশ্বাস দেওয়ায় তখন সে কর্মসূচি স্থগিত করে সংগঠনটি। কিন্তু এরপর ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও সরকারের তরফ থেকে জুলাই ঘোষণাপত্র আসেনি। এই অবস্থায় সরকার ব্যর্থ হয়েছে জানিয়ে আগামী ৩ আগস্ট ছাত্র-জনতার জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে মাসজুড়ে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে এনসিপি। ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে দলটির স্মরণসভা, ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ এবং পদযাত্রা। গত ২৯ জুন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কর্মসূচির ঘোষণা দেন এনসিপির আহ্বায়ক মো. নাহিদ ইসলাম।
ঘোষণা অনুযায়ী, ১ থেকে ৩০ জুলাই ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’, ১৬ জুলাই ‘বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস’, ৩ আগস্ট ছাত্র-জনতার ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও ইশতেহার পাঠ’ এবং ৫ আগস্ট ‘ছাত্র-জনতার মুক্তি দিবস’ পালন করবে এনসিপি।
জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাইয়ের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, সাংবিধানিক স্বীকৃতি, শহীদের স্বীকৃতি ইত্যাদি নিশ্চিত করার জন্য আমাদেরই জুলাই ঘোষণাপত্রটি প্রয়োজন। সরকার যেহেতু বলেছিল সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের মাধ্যমে এটি দেবে। কিন্তু প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরও সরকার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। সারা দেশের মানুষের আকাক্সক্ষা এবং তাদের প্রত্যাশা শুনে, তাদের সঙ্গে নিয়ে আমরা ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার জুলাই ঘোষণাপত্র এবং ইশতেহার পাঠ করবো।’
নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, ‘যেহেতু সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল, ফলে ব্যর্থতার দায় সরকারকে নিতে হবে। সরকারকে স্পষ্ট করতে হবে, কোথা থেকে বাধা পাচ্ছে, কাদের জন্য এটি হচ্ছে না। সরকার যেহেতু স্পষ্ট করেনি, আমাদের মনে হয় সরকারের ওপর নির্ভরশীল না থেকে আমাদের জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করা উচিত। পরবর্তী সময়ে সরকারের দায়িত্ব থাকবে এটাকে কীভাবে আইনি প্রক্রিয়ায় রূপান্তর করা। আমাদের অবশ্য দাবি থাকবে, এ ঘোষণাপত্র সংবিধানে যুক্ত করার।’
‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি নিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, এ কর্মসূচির মাধ্যমে দেশব্যাপী সাধারণ ছাত্র ও জনতার সঙ্গে সংলাপে মিলিত হবে এনসিপি। শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারতের মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ কর্মসূচি। ৬৪টি জেলায় এমন পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, ‘সাধারণ ছাত্র-জনতার সঙ্গে কথা বলবো, জুলাইয়ে তাদের আকাক্সক্ষার কথা শুনবো। জুলাইকে সাধারণ মানুষের কাছে নিয়ে স্মরণ করতেই এ কর্মসূচি। এনসিপি এবং অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দ সবাই একসঙ্গে এ পদযাত্রা শুরু করবে। নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ, রাষ্ট্র পুনর্গঠনের কাজটি এখনো চলমান। সে দেশ গড়তেই আমাদের এই জুলাই পদযাত্রা।’
বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবসে শহীদ আবু সাঈদসহ অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সারা দেশে দোয়া মাহফিল, স্মরণসভা ও আলোচনার আয়োজন করবে এনসিপি। এ বিষয়ে নাহিদ বলেন, ‘১৬ই জুলাই যেদিন আবু সাঈদ শহীদ হন, তার শহীদ হওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের মিছিল শুরু হয়েছিল। সেদিনকে আমরা বৈষম্যবিরোধী শহীদ দিবস হিসেবে পালন করবো।’
আগামী ৩ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার পক্ষে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ‘ইশতেহার’ পাঠ করা হবে জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ফ্যাসিবাদবিরোধী এক দফা ঘোষণা করা হয়েছিল। এ বছর ৩ আগস্ট শহীদ মিনারে ছাত্র-জনতার জুলাই ঘোষণাপত্র ইশতেহার পাঠ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।’
অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে এনসিপি ছাত্র-জনতার মুক্তি দিবস পালন করবে জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘এদিন শেখ হাসিনা পলায়নের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান প্রাথমিক বিজয় অর্জন করেছিল এবং বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে স্বাধীনতা এবং মুক্তি লাভ করেছিল। সেই মুক্তি উদযাপনে আমরা ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার মুক্তি দিবস উদযাপন করবো।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, কর্মসূচি ও বাস্তবায়ন সেলের সম্পাদক অনিক রায়, যুগ্ম সদস্যসচিব লুৎফর রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।