০২ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:৩৩:৬ অপরাহ্ন


এনওয়াইপিডির প্রশিক্ষণে কেফিয়াহ ও তরমুজকে ঘৃণার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৫-২০২৫
এনওয়াইপিডির প্রশিক্ষণে কেফিয়াহ ও তরমুজকে ঘৃণার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত কেফিয়াহ


নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি প্রশিক্ষণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে প্যালেস্টাইনি সাংস্কৃতিক প্রতীক যেমন কেফিয়াহ এবং তরমুজকে ‘ঘৃণার প্রতীক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই প্রশিক্ষণটি কমব্যাট অ্যান্টিসেমিটিজম মুভমেন্ট (ক্যাম) এবং জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রাম অন এক্সট্রিমিজম (পো) দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল। মুসলিম নাগরিক অধিকার এবং অ্যাডভোকেসি সংগঠন, কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (কেয়ার), ২৫ এপ্রিল নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের (এনওয়াইপিডি) প্রশিক্ষণের তীব্র নিন্দা জানায়, যেখানে প্যালেস্টাইনি সাংস্কৃতিক চিহ্ন যেমন কেফিয়াহ (একটি শতাব্দী পুরোনো প্যালেস্টাইনি ঐতিহ্যগত প্রতীক) এবং তরমুজকে ‘ঘৃণার প্রতীক’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

এই ঘটনা এনওয়াইপিডি কর্তৃক মুসলিম, আরব এবং প্যালেস্টাইনি সম্প্রদায়গুলোর প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের দীর্ঘ ইতিহাসের অংশ এবং এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ, সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্ব এবং নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করছে। এনওয়াইপিডির প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্যালেস্টাইনি সাংস্কৃতিক প্রতীকগুলোকে ঘৃণার সঙ্গে সম্পর্কিত করার পরিণতি বিশ্লেষণ করে এবং এটি কীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে বৈষম্য এবং ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে পারে, তাও স্পষ্ট হয়েছে। মুসলিম নাগরিক অধিকার সংগঠন কেয়ার-নিউ ইয়র্কের তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট। এই ধরনের আচরণ প্যালেস্টাইনি-আমেরিকানদের নাগরিক অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, ইসলামোফোবিয়া এবং আরব-বৈষম্যকে উসকে দেয় এবং এমন ন্যায়বিচারের নীতিকে হুমকির মুখে ফেলে যা পুলিশ বিভাগে সম্মানিত।

কেয়ার দাবি করেছে যে, এই প্রশিক্ষণটি যা কসব্যাট আন্টিসেমিটিজম মুভমেন্ট (ক্যাম) এবং জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রাম ও এক্সট্রিমিজম (পো) দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, তা দ্রুত বাতিল করা উচিত এবং ভবিষ্যতে এনওয়াইপিডি এমন ঘৃণামূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকবে।

কেয়ার আরো দাবি করেছে, নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ প্যালেস্টাইনি-আমেরিকানদের নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত রাখবে এবং এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মুসলিম, আরব এবং প্যালেস্টাইনি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতা বিপদে পড়বে। তারা বলেছে যে, প্যালেস্টাইনি সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত করার এই বিপজ্জনক ভুল ধারণা ইসলামোফোবিয়া, আরব-বিদ্বেষ, মতাদর্শগত বৈষম্য এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক অভিব্যক্তির অপরাধীকরণকে আরো উৎসাহিত করবে।

কেয়ার নিউইয়র্ক এর নির্বাহী পরিচালক আফাফ নাসের, এসকিউ বলেছেন, ‘আমরা তীব্রভাবে নিন্দা জানাচ্ছি যে, নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগ এমন ঘৃণামূলক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেছে, যা প্যালেস্টাইনি কেফিয়াহ এবং তরমুজকে ঘৃণার প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই ধরনের প্রশিক্ষণ পুলিশ অফিসারদের মধ্যে সরাসরি বর্ণবাদ এবং ইসলামোফোবিয়া ছড়াবে। তিনি আরো বলেন, ‘এনওয়াইপিডি এ প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করছে, যেখানে মুসলিম, আরব এবং প্যালেস্টাইনি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে এবং তাদের স্বাধীনতা বিপদে পড়বে।’

কেয়ার নিউইয়র্কের পক্ষ থেকে এনওয়াইপিডিকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবি জানানো হয়েছে। প্রথমত, এনওয়াইপিডিকে ভবিষ্যতে কমব্যাট অ্যান্টিসেমিটিজম মুভমেন্ট (ক্যাম), জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির প্রোগ্রাম ও এক্সট্রিমিজম (পো) বা অন্য কোনো সংগঠনের সঙ্গে প্রশিক্ষণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হবে, যা প্যালেস্টাইনি পরিচয় বা সমর্থনকে ঘৃণা বা চরমপন্থার সঙ্গে তুলনা করে। দ্বিতীয়ত, এনওয়াইপিডি জনসমক্ষে ঘোষণা করুক যে কেফিয়াহ, প্যালেস্টাইনি পতাকা বা তরমুজকে কখনোই ঘৃণা বা চরমপন্থার চিহ্ন হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। তৃতীয়ত, নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল এবং মেয়রের অফিসের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে যে, তারা এ প্রশিক্ষণের অনুমোদন এবং উপস্থাপন প্রক্রিয়া নিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চালাক।

কেয়ার আরো উল্লেখ করেছে যে, এ ঘটনা এনওয়াইপিডির দীর্ঘদিনের ঐতিহাসিক বৈষম্যপূর্ণ আচরণের একটি নতুন উদাহরণ। এনওয়াইপিডির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে নজরদারি, প্রোফাইলিং এবং বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে। ২০১২ সালে কেয়ার এবং অন্যান্য সংগঠন এনওয়াইপিডি কমিশনার রে কেলির পদত্যাগের জন্য দাবি জানিয়েছিল। কারণ তারা ‘দ্য থার্ড জিহাদ’ নামক একটি বর্ণবাদী ভিডিও প্রশিক্ষণে ব্যবহার করেছিল। এছাড়াও গত দুই বছরে, কেয়ার কিছু নতুন নৃশংস ঘটনাও দলিলবদ্ধ করেছে, যেমন গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করতে গিয়ে মুসলিম নারীদের ওপর এনওয়িপিডির নিষ্ঠুর আক্রমণ। এক মহিলা অভিযোগ করেছেন, তাকে তার হিজাব দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয়েছে, যা তার ধর্মীয় অধিকার লঙ্ঘন করেছে।

কেয়ার তাদের বিবৃতিতে বলেছে, আমরা কখনোই প্যালেস্টাইনি পরিচয়, ভাষা বা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে সন্ত্রাসবাদ বা ঘৃণা হিসেবে গণ্য করতে পারি না। তারা আরো দাবি করেছে, এনওয়াইপিডিকে কেবল নিরাপত্তা নয়, সমতা এবং ন্যায়বিচারের আদর্শে কাজ করতে হবে। তারা নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের কাছে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমা এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের বৈষম্যমূলক প্রশিক্ষণ বাতিল করার দাবি জানিয়েছে। সংগঠনটি সব নিউইয়র্কবাসীর জন্য নিরাপদ এবং বৈষম্যমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে এনওয়াইপিডি থেকে দ্রুত পদক্ষেপ আশা করছে।

শেয়ার করুন