০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০১:৩২:১৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


হিজাব পরায় ক্যাথি হোকুলকে সিনেটর টেড ক্রুজের কটূক্তি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৮-২০২৫
হিজাব পরায় ক্যাথি হোকুলকে সিনেটর টেড ক্রুজের কটূক্তি মসজিদের ভেতরে মাথা ঢাকা স্কার্ফ পরেছিলেন নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল


টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুলকে তার পুলিশ কর্মকর্তার দাফনে হিজাব পরার জন্য কটূক্তি করেছেন। তার এ বিকৃত রুচির কটূক্তি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। গভর্নর হোকুল যখন নিহত অফিসার দিদারুল ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মসজিদের ভেতরে মাথা ঢাকা স্কার্ফ পরেছিলেন, তখন ক্রুজের ওই মন্তব্য সামাজিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনার ঝড় তোলে। মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা সংগঠনসহ অনেকেই ক্রুজের মন্তব্যকে অসম্মানজনক ও বিদ্বেষপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন। এর ফলে রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় সংবেদনশীলতার মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। গত ১ আগস্ট টুইটারে টেড ক্রুজ গভর্নর হোকুলের সেই ছবি দেখে প্রথমে লিখেন-‘উম, কি?’ যেখানে গভর্নর হোকুল নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস এবং অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে ধর্মীয় পোশাকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে ক্রুজ ব্যঙ্গ করে লেখেন, আপনাকে প্রতিদিন হিজাব পরা উচিত কারণ আপনি খুবই ‘দামন’ (শালীন)। নিউইয়র্কের নারীদের অধিকার নিয়ে ভাবার দরকার নেই, সেটা আপনার বিষয় নয়।

ঘটনাটি ঘটে যখন গভর্নর হোকুল পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলামকে শ্রদ্ধা জানাতে মাথা ঢাকা স্কার্ফ পরেছিলেন। দিদারুল ইসলাম একটি মিডটাউন ভবনে গুলিতে নিহত হন এবং তার ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী এই ধরনের পোশাক পরা হয়। গভর্নর পরে বলেন, দুঃখী পরিবারের বিশ্বাসকে সম্মান জানানো হলো যা একজন নেতার এবং সাধারণ শালীনতার পরিচায়ক। এই মন্তব্যের পর মুসলিম অধিকার প্রতিষ্ঠা করে এমন সংগঠন কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস টেড ক্রুজের কটূক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তাকে ক্ষমা চাইতে বলেছে। কেয়ার-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যদি টেড ক্রুজের মধ্যে কিছু মানবিকতা বাকি থেকে থাকে, তাহলে তিনি নিহত পুলিশ অফিসার দিদারুল ইসলামের পরিবার এবং গভর্নর হোকুলের কাছে তার এ ঘৃণ্য ও অসম্মানজনক আচরণের জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত।

কেয়ার আরো বলেছে, টেড ক্রুজ একজন খ্রিস্টান হলেও ২০১৬ সালে ব্রুকলিনে একটি ইহুদি অনুষ্ঠানে তিনি ইহুদি ধর্মীয় টুপি ‘ইয়ারমুলকে’ পরেছিলেন। সংগঠনটি উল্লেখ করেছে, যেখানে ক্রুজ ইহুদি ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন, সেখানে একইভাবে মুসলিমদের ধর্মীয় স্থানকে সম্মান জানানোতে গভর্নর হোকুলের বিরুদ্ধে তার এ আক্রমণ আরো বেশি দুঃখজনক ও ছলনাপূর্ণ। এছাড়া কেয়ার আরো বলেছে, পরের বার ক্রুজ যদি কোনো ক্যাথলিক গির্জায় যান, তাহলে তিনি যিশুর মাতা মেরির মূর্তি দেখবেন, যিনি একটি স্কার্ফ পরেছেন, তখন তিনি নিজেকে জিজ্ঞাসা করবেন কেন তিনি হিজাব দেখলে এতো ঘৃণা অনুভব করেন।

টেড ক্রুজ কেন নারীদের অধিকার নিয়ে গভর্নর হোকুলকে ‘অসংযুক্ত’ বা ‘অবহেলা’ করছেন তা স্পষ্ট নয়। ক্রুজ ট্রান্সজেন্ডার মহিলা অ্যাথলেটদের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে বিধিনিষেধের পক্ষে ছিলেন। অন্যদিকে গভর্নর হোকুল এ ধরনের বিধিনিষেধের বিরোধিতা করেছেন এবং এলজিবিটিকিউআইএ+ সম্প্রদায়ের অধিকারের জন্য কাজ করেছেন। এ বিষয়টিও বিতর্ককে আরো তীব্র করেছে।

এ ঘটনায় ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, রাজনৈতিক বিতর্ক এবং নারীর অধিকার নিয়ে আমেরিকার সমাজে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ধর্মীয় মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধার গুরুত্ব নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের মন্তব্য শুধু ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং এটি একটি বড় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংকটের প্রতিফলন, যেখানে ধর্মীয় ভেদাভেদ এবং রাজনৈতিক মতবিরোধ একসঙ্গে ফুটে উঠছে। তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতে আমেরিকান নেতারা পারস্পরিক সম্মান ও সমঝোতার ভিত্তিতে কাজ করবেন এবং সমাজে বিভাজন তৈরি করা থেকে বিরত থাকবেন।

নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল এবং টেড ক্রুজ উভয়ই দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হওয়ায় তাদের মন্তব্যের প্রভাব দেশের বিভিন্ন স্তরে অনুভূত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে এবং বিভিন্ন পক্ষ থেকে সমর্থন ও সমালোচনার ঝড় বইছে।

শেয়ার করুন