যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের জামিন (বন্ড) পাওয়ার অধিকার হরণ করে ট্রাম্প প্রশাসনের জারি করা নতুন নীতির বিরুদ্ধে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন (এসিএলইউ) ও অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনগুলো ২৮ জুলাই ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালতে একটি ক্লাস অ্যাকশন মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি ট্রাম্প প্রশাসন ও যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে।
গত ৮ জুলাই ট্রাম্প প্রশাসন একটি নতুন নির্দেশনা জারি করে, যার মাধ্যমে অভিবাসীদের জামিন চাওয়ার সুযোগ কার্যত বাতিল করা হয়। এ নীতির ফলে অভিবাসীরা, যারা যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন কিংবা সদ্য প্রবেশ করেছেন এবং যাদের অপরাধমূলক রেকর্ড থাকুক বা না থাকুক, জামিনের জন্য আবেদন করার অধিকার থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হবেন। এর অর্থ হচ্ছে, তারা মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর বিচার প্রক্রিয়ার অপেক্ষায় বন্দি অবস্থায় থাকতে বাধ্য হবেন। এসিএলইউয়ের মতে, এ নীতির ফলে অভিবাসীদের একটি বিশাল অংশকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখা হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পরিপন্থী এবং মানবাধিকারবিরোধী।
মামলাটি দায়ের করা হয়েছে দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাডেলান্তো আইসিই প্রসেসিং সেন্টারে আটক থাকা ব্যক্তিদের পক্ষে, যাদের আইসিই এবং ইমিগ্রেশন আদালত জামিন শুনানির সুযোগ না দিয়েই আটক রেখেছে। এটি একটি পূর্বের হ্যাবিয়াস করপাস আবেদনের সংশোধিত রূপ, যার আওতায় আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে বাদীদের আগামী সাতদিনের মধ্যে জামিন শুনানি প্রদান করতে হবে। মামলায় বাদীরা শুধু নিজেরাই নয়, বরং সারাদেশের সেসব অভিবাসী বন্দিদের পক্ষেও প্রতিনিধিত্ব করছেন, যারা একই ধরনের জামিনবিহীন আটকাদেশের শিকার।
মামলার বাদীদের প্রতিনিধিত্ব করছে এসিএলইউ, এসিএলইউ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া, নর্থওয়েস্ট ইমিগ্র্যান্ট রাইটস প্রজেক্ট এবং আইনজীবী নিয়েলস ফ্রেঞ্জেন ও জিন রেইস। এসিএলইউ জানিয়েছে, আইসিই বর্তমানে এমন অবস্থান নিয়েছে, যারা অনুমতি ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন, তারা জামিন শুনানির যোগ্য নন, যা একাধিক ফেডারেল আদালতের রায় এবং বিদ্যমান অভিবাসন আইনের পরিপন্থী।
নর্থওয়েস্ট ইমিগ্র্যান্ট রাইটস প্রজেক্টের আইনি পরিচালক ম্যাট অ্যাডামস বলেন, এ নীতি গত তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রচলিত অভিবাসন আইনের সরাসরি লঙ্ঘন। আমাদের মক্কেলরা শুধু নিজেদের জন্য নয়, বরং হাজার হাজার অভিবাসীর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন এবং আইনি অধিকার অনুযায়ী পৃথক হেফাজত নির্ধারণের শুনানির সুযোগ পাওয়ার কথা।
মাইকেল তান, আইসিইর ইমিগ্র্যান্টস রাইটস প্রজেক্টের ডেপুটি ডিরেক্টর বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন সংবিধানের মূল ভিত্তিকে নতুন করে লিখতে চায়। একক একটি মেমোর মাধ্যমে তারা অভিবাসীদের পরিবার থেকে আলাদা করে দীর্ঘদিন ধরে বন্দি করে রাখার একটি নিষ্ঠুর কৌশল গ্রহণ করেছে। তিনি আরো বলেন, এ নীতির মাধ্যমে সরকার হাজার হাজার মানুষকে ফর প্রোফিট ডিটেনশন সেন্টারে আটকে রাখার পরিকল্পনা করছে। ইভা বিট্রান, আইসিই সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়ার সিনিয়র স্টাফ অ্যাটর্নি বলেন, অভিবাসীদের অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখা শুধুই নির্মম নয়, বরং এটি সরাসরি অবৈধ। এ মামলা সেই মূল নীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা, যা বলে-রাষ্ট্রের হেফাজতে থাকা প্রত্যেক মানুষকে তার আটক হওয়ার বৈধতা নিয়ে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।
মামলার মূল দাবি হলো, যারা অভিবাসন কর্তৃপক্ষের হেফাজতে আছেন, তাদের অন্তত একটি জামিন শুনানির অধিকার থাকা উচিত, যেখানে তারা নিজেকে ফ্লাইট রিস্ক বা জননিরাপত্তার জন্য হুমকি নয় প্রমাণ করতে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ডুয়ো প্রসেস ক্লাউসে অনুযায়ী, রাষ্ট্রের সীমানার মধ্যে অবস্থানরত প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের নাগরিকত্ব যাই হোক না কেন ন্যায়বিচারের অধিকার লাভ করেন।
আইনি প্রতিনিধিদের মতে, এ নীতি বহাল থাকলে, তা হাজার হাজার নতুন অভিবাসীকে বছরের পর বছর ধরে লাভজনক বেসরকারি ইমিগ্রেশন কারাগারগুলোতে আটকে রাখবে। মামলাটি বর্তমানে আদালতের বিবেচনাধীন রয়েছে এবং এটি ভবিষ্যতে অভিবাসীদের জামিনের অধিকার নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনগত দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।