০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:২৫:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


দুঃশাসন হটাতে গণসংগ্রামের আহ্বান সিপিবির
নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৭-২০২৪
দুঃশাসন হটাতে গণসংগ্রামের আহ্বান সিপিবির মঞ্চে সিপিবির নেতৃবৃন্দ


বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় বলা হয়েছে, দেশে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে, ছাত্রসমাজ রাজপথে, মূল্যবৃদ্ধিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের জীবনের সংকট বাড়ছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভয়াবহ সংকট দেখা যাচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষ অনেক জায়গায় বেতন বঞ্চিত হচ্ছে। নিরবে কর্মহানী ঘটছে অনেক জায়গায়। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলাবদ্ধতা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সরকারি তথ্যই বলছে দেশের ২৬ শতাংশ পরিবার ধার করে মৌলিক চাহিদা পূরণ করছে। সভায় বলা হয়, ভোটের অধিকার হরণকারি ‘আমি ও ডামি’র ভোটের সরকার আগের মত সব কিছু ঠিক আছে পার পাচ্ছে না। মাঝে মধ্যে সংকটের কথা বললেও, ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে সর্বত্র আধিপত্য বজায় রাখতে সারাদেশে ভয়ের রাজত্ব অব্যাহত রেখেছে।

সভায় বলা হয়, নানা সংকটের মধ্যেও মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর আঘাতে শ্রমজীবী-পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের রুখে দাঁড়ানোর প্রবণতা আগের থেকে বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষের ক্ষুব্ধতার প্রকাশ একেক জায়গায় একেক রকমভাবে প্রকাশিত হচ্ছে। সভায় চলমান দুঃশাসনের অবসান ও ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করতে সারাদেশে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

সভায় দুঃশাসনের অবসানে চলমান আন্দোলন, বিভিন্ন শ্রেণিপেশার দাবি ও দুর্নীতিবিরোধী গণআন্দোলন গড়ে তুলতে দেশব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী গণজাগরণ অভিযান, উপজেলা-জেলা-অঞ্চলে সভা-সমাবেশ এবং এ বছরের শেষে মহাসমাবেশের কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়।

সভায় সাংগঠনিক ও পার্টির শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে কতগুলি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

দুইদিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কমিটির সভা গত ১২ জুলাই ২০২৪ বেলা ১২টায় মুক্তিভবনস্থ পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে শুরু হয়ে ১৩ জুলাই রাত পর্যন্ত চলে। পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয় বিষয়ক বক্তব্য উত্থাপন করেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। সাংগঠনিক কর্মকান্ডের রিপোর্ট উত্থাপন করেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন লাকি আক্তার।

সভায় অধ্যাপিকা এ এন রাশেদা, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, মোতালেব মোল্লা, পরেশ কর, অ্যাড. আনোয়ার হোসেন রেজা, অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহমান, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, রফিকুজ্জামান লায়েক, অনিরুদ্ধ দাশ অঞ্জন, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, অধ্যাপক এম এম আকাশ, আহসান হাবিব লাবলু, জলি তালুকদার, মৃণাল চৌধুরী, অ্যাড. মণ্টু ঘোষ, ডা. দিবালোক সিংহ, মনিরা বেগম অনু, অ্যাড. সোহেল আহমেদ, কাজী রুহুল আমিন, এস এ রশীদ, রাগিব আহসান মুন্না, ডা. মনোজ দাশ, অ্যাড. হাসান তারিক চৌধুরী, ডা. সাজেদুল হক রুবেল, লুনা নূর, মো. কিবরিয়া, আবিদ হোসেন, অ্যাড. আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, অ্যাড. মহসীন রেজা, প্রকৌশলী নিমাই গাঙ্গুলী, মানবেন্দ্র দেব, লাকী আক্তার, হাফিজুল ইসলাম, আশরাফুল আলম, মোহাম্মদ আলতাফ হোসাইন, মো. ইসমাইল হোসেন, ইদ্রিস আলী, জাহিদ হোসেন খান, মোসলেহ উদ্দিন, হাসিনুর রহমান রুশো, সাদেকুর রহমান শামীম, নলিনী সরকার, পিযূষ চক্রবর্তী, সাজিদুল ইসলাম প্রমুখ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারম্যান মাহাবুবুল আলম বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাড. মাকছুদা আখতার লাইলি, সংগঠক অ্যাড. রফিকুল ইসলাম, ফররুখ হাসান জুয়েল এবং কন্ট্রোল কমিশনের সদস্য কাজী সোহরাব হোসেন, অধ্যাপক ডা. এম এ সাঈদ ও সুজাত আলী।

সভায় সকলের জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি ও কোটা সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা চলবে না। আবার মুক্তিযোদ্ধা কোটার নামে তার সন্তানের বাইরে অন্য প্রজন্মের জন্য কোটা রাখার প্রয়োজন নেই। এজন্য আলাপ আলোচনার মধ্য দিয়ে যুক্তিসঙ্গতভাবে এর সংস্কার করতে হবে।

সভায় মিরনজিল্লাহ হরিজন সম্প্রদায়ের উচ্ছেদ ও হামলার নিন্দা জানিয়ে তাদের স্থায়ী আবাসনের নিশ্চয়তার দাবি জানানো হয়।

সভায় ন্যাশনাল কেমিক্যাল এবং এবিকো ইন্ডাস্ট্রিজের শ্রমিকদের আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে তাদের ৫ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানানো হয়।

সভায় বাম জোট আহূত আগামী ১৬ জুলাই দুদক কার্যালয়ের সামনে অবস্থানসহ দুর্নীতিবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।

সভায় গণতন্ত্রহীনতা, লুটপাটতন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ-আধিপত্যবাদের হাত থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করতে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম অগ্রসর করার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, আওয়ামী সরকার ও শাসকশ্রেণিকে পরাজিত করে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় যেতে হবে। এজন্য সর্বত্র শ্রেণিপেশার মানুষকে সচেতন ও সংগঠিত করে আন্দোলনে টেনে আনতে হবে।

সভায় বলা হয়, “বামপন্থার পথ ধরো, দুঃশাসন হটাও-ব্যবস্থা বদলাও-দুর্নীতি হটাও-দেশ বাঁচাও” এই স্লোগানকে সামনে রেখে দেশব্যাপী গণজাগরণ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। নীতি-নিষ্ঠ বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।

সভায় বলা হয়, সম্প্রতি চীন সফরের আগে সরকার প্রধানের ভারত সফর এবং ওই সফরে দেশের ৫৪টি নদীর অভিন্ন উৎস থেকে আসা পানির প্রবাহ, তিস্তার পানি বণ্টন, অসম বাণিজ্য, সীমান্ত হত্যা, গণবিরোধী রামপাল চুক্তি বাতিলসহ জাতীয় স্বার্থের আলোচনা না করে রেলের করিডোর দেওয়ার সমঝোতা চুক্তি সরকারের নতজানু নীতিরই বহিঃপ্রকাশ। সভায় বলা হয়, শাসকগোষ্ঠী, ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর স্বার্থের বিপরীতে শ্রমজীবীদের স্বার্থে জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ এবং সাম্রাজ্যবাদ-আধিপত্যবাদী শক্তিকে রুখতে হবে। সভায় বলা হয়, আমাদের শাসকগোষ্ঠী ও ভারতের শাসকগোষ্ঠীর ভূমিকা দেশের ওপর আধিপত্যের থাবা বাড়িয়ে তুলেছে। এ অঞ্চলে সাম্রাজ্যবাদ যে ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া প্রচেষ্টা চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে এ অঞ্চলের দেশগুলোর শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের ঐক্য সংহতি গড়ে তুলতে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। সভায় বলা হয়, দেশে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নির্বিঘ্নে তাদের তৎপরতা অব্যাহত রাখছে। এদের প্রতি সরকারের নমনীয় মনোভাব দৃশ্যমান হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপি নির্বাচনের পূর্বে তাদের প্রতি যে মনোভাব প্রকাশ্যে দেখাতে চেষ্টা করেছিল, তার থেকে বেরিয়ে এসে তাদের সাথে নিয়ে চলার ইঙ্গিত স্পষ্ট করছে। এসব অপশক্তি সম্পর্কে সবসময় সতর্ক থাকতে হবে।

সভায় বলা হয়, ব্যাংক সংকট, খেলাপী ঋণ, অর্থ পাচার বেড়েছে চলেছে। রপ্তানি আয়ের ভুয়া তথ্য নিয়ে কথা উঠেছে। সরকারি সমর্থকরাও এসব তথ্য অস্বীকার করতে পারছে না। মুক্তবাজার অর্থনীতির চলমান ধারা অব্যাহত রেখে ব্যাংক একত্রীকরণ, সুদের হার, ডলারের দাম নির্ধারণ-এসব সংকট থেকে মুক্তি দিচ্ছে না। মুদ্রাস্ফীতি অব্যাহত আছে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। এক্ষেত্রে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, পানির মূল্যবৃদ্ধি চলছে সমান তালে। আর সেই সঙ্গে আইএমএফ’র শর্ত মেনে সরকার ঋণ নিয়ে চলেছে। এসব শর্তের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধিসহ ভর্তুকি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলেও খেলাপীঋণ আদায়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ভূমিকা নেই। বরং আইন পরিবর্তন করে এসব ঋণ খেলাপীদের আরও সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।

শেয়ার করুন