৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৩৪:২০ অপরাহ্ন


হারলেমে লেজিওনেয়ার্স রোগে ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ১০৮ জন
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৮-২০২৫
হারলেমে লেজিওনেয়ার্স রোগে ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ১০৮ জন লেজিওনেয়ার্স ভাইরাস


নিউইয়র্ক সিটির হারলেমে লেজিওনেয়ার্স নামক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবে ১৮ আগস্ট সোমবার আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে শহরের স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল পাঁচে। সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনাটি কিছুদিন ধরেই তদন্তাধীন ছিল, যা অবশেষে গত ১৮ আগস্ট (সোমবার) আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রাদুর্ভাবের অংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটি স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাইয়ের শেষ দিকে শুরু হওয়া এ প্রাদুর্ভাবে এখন পর্যন্ত ১০৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে ১৪ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রোগটির উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেন্ট্রাল হারলেমের ১২টি কুলিং টাওয়ার, যেগুলো ১০টি ভবনের অন্তর্গত। এর মধ্যে রয়েছে শহর পরিচালিত হারলেম হাসপাতাল এবং সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের একটি ভবনসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব কুলিং টাওয়ার ইতোমধ্যে খালি করে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে।

প্রাদুর্ভাবটি মূলত হারলেমের পাঁচটি জিপ কোড এলাকায় (১০০২৭, ১০০৩০, ১০০৩৫, ১০০৩৭, এবং ১০০৩৯) সীমাবদ্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসন কুলিং টাওয়ার ব্যবস্থাপনা নিয়ে কঠোর নিয়ম চালুর প্রস্তাব দিয়েছে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষা ও রিপোর্টিং আরও বাড়ানো হবে এবং অনিয়ম করলে ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে জরিমানা আরোপ করা হবে। নিউইয়র্ক সিটিতে লেজিওনেয়ার্স রোগের প্রাদুর্ভাব নতুন নয়। ২০১৫ সালে ব্রঙ্কসে সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাবে ১২০ জন আক্রান্ত ও ১২ জনের মৃত্যু ঘটে, যার উৎস ছিল একটি হোটেলের কুলিং টাওয়ার। এরপর সিটি কাউন্সিল পাস করে লোকাল ল ৭৭, যা কুলিং টাওয়ার রেজিস্ট্রেশন, নিয়মিত পরীক্ষা ও জীবাণুমুক্তকরণ বাধ্যতামূলক করে। তবুও, পরবর্তী বছরগুলোতে একাধিক ছোট-বড় ক্লাস্টার দেখা গেছে-২০১৮ সালে ওয়াশিংটন হাইটসে ২৭ জন আক্রান্ত ও একজনের মৃত্যু হয়, এবং ২০২২ সালে ব্রঙ্কসের হাইব্রিজ এলাকায়ও কয়েকজনের মৃত্যু হয়। এসব ঘটনা প্রমাণ করে, আইন থাকলেও তার কার্যকর বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে।

লেজিওনেয়ার্স রোগ মূলত এক ধরনের নিউমোনিয়া, যা লেজিওনেলা ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ছড়ায়। এই ব্যাকটেরিয়া সাধারণত উষ্ণ ও স্থির পানিতে জন্মায় এবং সেখান থেকে বাতাসে মিশে ক্ষুদ্র জলকণার মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে। তবে এ রোগ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ছড়ায় না। রোগের উপসর্গ অনেকটা ফ্লুর মতো-কাশি, জ্বর, কাঁপুনি, পেশীর ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সংক্রমণের পর উপসর্গ প্রকাশ পেতে ২ থেকে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৫০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তি, ধূমপায়ী, এবং দীর্ঘমেয়াদি শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্তরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন। এ কারণেই স্বাস্থ্য বিভাগ দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসার পরামর্শ দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিয়েছে।

শেয়ার করুন