১৮ এপ্রিল ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৬:০৯:১৬ পূর্বাহ্ন


টেস্ট ক্রিকেটকে আরো গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৪-২০২২
টেস্ট ক্রিকেটকে আরো  গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন স্পিনার সায়মন হার্মারের বলে সাদমানের অসহায় আউট হওয়ার দৃশ্য : ছবি ক্রিকইনফো


দেশকে রকিবুল হাসান 


বাংলাদেশ দলের পারফরমেন্সের আপ ও ডাউনটাই এখন চিন্তার কারণ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে প্রথম ম্যাচে ইতিহাস সৃষ্টি করে হারিয়েই দিলো বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্টইন্ডিজ, ভারত, পাকিস্তানের মতো দল বিপর্যস্ত হয়ে আসতে দেখা যায়। সেখানে

বাংলাদেশ দীর্ঘ হারের পর সর্বশেষ সিরিজে জয় দিয়েই করেছিল শুরু। পরের ম্যাচে হার যথারীতি ইনিংস ব্যাবধান। এরপরই দক্ষিণ আফ্রিকার এ সফর। এ সফরে ওয়ানডে সিরিজ জিতে আবারো চমক দেখায়। টেস্ট সিরিজের সূচনায় ভালো একটা ফল করার নিমিত্তে শুরুও করেছিল। চতুর্থ দিন পর্যন্ত প্রায় সমানে সমান প্রোটিয়ার চোখে চোখ রেখে। কিন্তু শেষদিনে একেবারেই ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং। মুহূর্তেই ৫৩ রানে অলআউট। 

বিদেশের মাটিতে এমন সাফল্য ব্যর্থতার দোলাচালে বাংলাদেশকে


                                         রকিবুল হাসান


প্রায়শ লজ্জায়ও পড়তে হয়। কিন্তু এ থেকে উত্তরণের উপায় কী? একটা মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড তো বজায় রেখে চলবে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না

কেন? এ প্রশ্ন ছিল জাতীয় দলের সাবেক টেস্ট ক্রিকেটার রকিবুল হাসানের কাছে। রকিবুল দীর্ঘদিন আগে খেলেছেন। কিন্তু এখনও আশা ছাড়েননি। নিজের ফিটনেস ও পারফরমেন্স ঠিক রেখে এগিয়ে চলছেন। নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠিক প্রিয় ‘দেশ’কে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে টেস্ট ক্রিকেটে পরিচর্যটা ওয়ানডেতে যেমন হয়, তেমনটা হচ্ছে না। কারণ হিসেবে বলবো, টেস্টে ভালো করতে হলে অবকাঠামোগত কিছু উন্নয়ন প্রয়োজন। ওয়ানডে, টি-২০ এর সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটের হিসাব-নিকাশটা আলাদা। পাঁচদিনের টেস্ট ম্যাচ খেলতে অনেক প্রস্তুতির প্রয়োজন। যেমনটা জিম, সুইমিং, মাঠ, উইকেটসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা। এগুলো পর্যাপ্ত নেই। আমার মনে হয় যদি এ সুযোগ-সুবিধাগুলো পর্যাপ্ত করে ৪-৫ বছর ক্রিকেটারদের পরিচর্যা করা হয় এরপর থেকে ধারাবাহিক রেজাল্ট পাওয়া শুরু হবে।’ 

রকিবুল বলেন, ‘বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে এক ম্যাচে ভাল হবে অন্য ম্যাচে যেয়ে বাজে পারফরমেন্স। বা এক ইনিংসের সঙ্গে অন্য ইনিংসের মিলটা খুঁজে পাওয়া যায় না। যা অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচগুলোই প্রমাণ। তাছাড়া টেস্টে অভিজ্ঞতার একটা ব্যাপার থাকে। তরুণ যারা দলে রয়েছে, এদের আরো নার্সিং প্রয়োজন। তাদেরকে অন্তত ৩০-৪০টা ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ খেলিয়ে এরপর দলে নেয়া প্রয়োজন। না হয় এ সব ট্যালেন্ট ক্রিকেটারদের ওপর ধারাবাহিক ভালো করার যে একটা প্রেশার, সেটা তারা সামলে নিতে না পেরে হারিয়ে যাবে। অনেক ক্রিকেটার এভাবে হারিয়েও যাচ্ছে। অথচ ওরা জাতীয় দলের অ্যাসেট। ওদের নার্সিং প্রয়োজন ভবিষ্যতের জন্য। ওরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে সার্ভিস দিবে।’ তবে রকিবুল অবাক হয়েছেন, অন্তত স্পিনের বিপক্ষে ৫৩ রানে অলআউট হওয়া মেনে নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় কোথাও হিসাব-নিকাশে গরমিল হয়েছে। বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা স্পিনে সাবলীল। সে স্পিনে এভাবে ব্যর্থ হবে এটা মেনে নেয়ার মতো না। আমি বুঝতে পারছি না ওখানকার মাঠের অবস্থা কী ছিল।’ তিনি বলেন, ‘অন্তত একটা ফাইট হতে পারতো। শেষ দিনে উইকেট ভেঙে গেলেও এতো দ্রুত উইকেটের পরিবর্তন ঘটটে, বুঝতে পারছি না। এমনই যদি হয়, তাহলে তো টসটা ফ্যাক্টর ছিল। বিশেষ করে টসে জেতার পর এসব পরিস্থিতি বিবেচনা করা উচিত ছিল আগেই।’  

তবে এসব নিয়ে বেশি কিছু বলতে চান না তিনি। কারণ মাঠের কন্ডিশনটা দূর থেকে অনুধাবন করা যায় না। একজন ব্যাটসম্যান সর্বস্ব দিয়েই খেলে। পরিস্থিতি বুঝতে হবে। তবে সার্বিক দৃষ্টিতে তিনি বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটেও বাংলাদেশের অনেক সম্ভাবনা। ঠিক ওয়ানডের মতোই। এটাকে নিবিড় পরিচর্যা ও পর্যাপ্ত অবকাঠামগত সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা উচিত। পাইপলাইনে পর্যাপ্ত খেলোয়াড় রাখতে হবে। এগুলো হলে রেজাল্ট আসবেই। নিউজিল্যান্ডকে তাদের মাটিতে হারানো চাট্টিখানি কথা না। এ পারফরমেন্স ধরে রাখতে হলে সব দিকেই বিবেচনা করে টেস্ট ক্রিকেটের জন্য আলাদা টেস্ট এক্সপার্টের অধীনে সবকিছু দিতে হবে। সেসব ঠিক করে নির্দেশনা দেবে। তাহলেই একদিন টেস্টেও ক্রিকেটাররা বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবে বলে আমার বিশ্বাস।’ 

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আগে টেস্ট ম্যাচে খেলতেন তামিম ইকবাল, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ প্রমুখ ক্রিকেটাররা। এরা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছেন। এদের রিপ্লেসম্যান কারা? লিটন দাস উঠে আসছেন। কিন্তু এখনো সাকিব, রিয়াদদের পর্যায়ে তো তাকে নেয়া যাচ্ছে না। ফলে ওইসব মুখগুলো যখন থাকবে না। তখন স্কোয়াডের দিকে তাকালে কী দেখা যাবে। সেখানে টেস্ট ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মুখের অভাব কী পরিলক্ষিত হবে না? শ্রীলঙ্কা দলে মাহেলা জয়বর্ধনে, সাঙ্গাকারা প্রমুখরা সরে যাবার পর একটা প্রেশারে পরে গিয়েছিলেন তারা। আবার সামলে উঠেছে। কারণ ওদের পাইপ লাইন খুবই স্ট্রং। ওরা টেস্ট ক্রিকেটা সমৃদ্ধি করতে সেভাবেই ক্রিকেট অবকাঠামো সাঝিয়ে রেখেছে। আমাদেরকেও এসবে এক্ষুনি নজর দিতে হবে।’


শেয়ার করুন