২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৮:২২:৩৫ অপরাহ্ন


বাংলাদেশী কম্যুনিটিতেও প্রভাব পড়েছে
নিউইয়র্কে বৈধ গাঁজার অবৈধ দোকানের ছড়াছড়ি
কাজী ইবনে শাকুর
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-১১-২০২২
নিউইয়র্কে বৈধ গাঁজার অবৈধ দোকানের ছড়াছড়ি


নিউইয়র্ক সিটিতে লাইসেন্সবিহীন গাঁজা ব্যবসায়ীদের কারবার চলছে দেদার। গত বছর থেকে গাঁজাসেবন বৈধ করার পর থেকে নিউইয়র্ক স্টেটে এই ব্যবসা দ্রুত বেড়েছে। প্রচলিত অন্যান্য আইনের অপ্রতুল প্রয়োগের কারণে তা সংশয়ের মধ্যে বাড়ছে। গত বছর থেকে শত শত গাঁজা বিক্রির দোকান গড়ে উঠেছে। যার কোনো লাইসেন্স নেই। রাস্তার মোড়ে মোড়েও গাঁজাসেবী ও বিক্রেতার চেহারা দেখা যাচ্ছে। গাড়ি নিয়ে এসে লাইন ধরে গাঁজা কিনছে। পাবলিক প্লেসে গাঁজা সেবন চলছে দেদার। কারো তোয়াক্কা কেউ করছে না। নারী-পুরুষ সবাই একই কাতারে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে গাঁজা সেবন করছে।

মিডটাউন ম্যানহাটন, সেভেনথ অ্যাভিনিউয়ের টাইমস স্কোয়ার ও পেনস্টেশন মধ্যবর্তী এলাকায় একটির পাশাপাশি অবৈধ অনেক গাঁজা বিক্রির স্থাপনা গড়ে উঠেছে। একইসাথে আরো কয়েকটি স্মোকশপ ও ডিসপেনসারি খোলামেলাভাবে চলছে। সেসব দোকান অবৈধভাবে বিক্রি করছে গাঁজা ট্যুরিস্টদের কাছে, নগরবাসীর কাছে ও কমিউটারদের কাছে। জ্যাকসন হাইটস ও ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাগডোনাল্ড ও বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকদের গাঁজা সেবন করতে দেখা যায়। তাদের অধিকাংশ অবৈধ দোকান থেকে গাঁজা ক্রয় করে থাকেন। রাস্তার মোড়ে মোড়ে, অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়ে চলতে থাকে গঞ্জিকা সেবন। বিক্রি করার দোকান অবৈধ হলেও গঞ্জিকা সেবন বৈধ। 

বর্তমানে স্টেট বৈধ মার্কেট চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু একইসাথে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন জনের মধ্যে যে বৈধ-অবৈধের সংশয় সৃষ্টি করেছে, তা দূরীকরণে সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করে। এই সংশয় সাধারণ সেবিকা, পথচারী ও পুলিশ অফিসার সকলের মধ্যেই রয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকা এবং ব্রুকলীনে অতিরিক্ত ড্রাগ সেবনে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী আমেরিকান তরুণ প্রাণ হারিয়েছেন। এ বিষয়ে কম্যুনিটির সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

স্টেট রেগুলেটর এবং কতিপয় ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরীণ লোক দোকানসমূহ বৈধ মার্কেটকে অবমূল্যায়ন করা হবে বলে অবৈধ মার্কেট তুলে দেয়ার কথা বলেছেন। সম্প্রতি ৩৬টি ব্যবসায়ী ও নন-প্রফিট সংগঠনকে গাঁজা বিক্রির লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে এ লাইসেন্স দেয়ার পর খুচরা বিক্রেতারা অবৈধ মার্কেট বন্ধ করতে চাইবে। স্টেট অফিসিয়ালরা বলেছেন যে, এই বছরের শেষদিকে প্রথম খুচরা বিক্রি শুরু হবে। তাতে অবস্থার দৃশ্যত কোনো পরিবর্তন হবে না; কিন্তু তাতে লাইসেন্সধারী বৈধ বিক্রেতারা অবৈধ বিক্রেতাদের সাথে প্রতিযোগিতায় পড়বে। 

নিউইয়র্ক সিটিতে এরিক অ্যাডামসের প্রশাসন কঠোর হাতে অবৈধ দোকানসমূহের সাথে আচরণ তেমন করে করবে না। তবে মেয়রের এক মুখপাত্র মিস কারেলা বলেন, নগরের শেরিফ অফিস শত শত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে অবৈধ প্রেক্ষাপট ছিনিয়ে নিয়ে ফাইন আরোপ করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে গ্রেফতার করেছেন। তিনি মেয়র অ্যাডামস কোনো অবৈধ ব্যবসা সহ্য করবেন না বলে জানান। 

এদিকে অবৈধ দোকান বা লাইসেন্সবিহীন দোকানদার বলেছেন যে, তারা অনেক লোকের চাকরির সংস্থান করছে গাঁজা বিক্রি করে। তাছাড়া বৈধ দোকান চালু হবার পূর্বে তা গাঁজাসেবীদের তাদের প্রয়োজনীয় মারিজুয়ানা দ্রব্য সরবরাহ করছে। কারণ বৈধ দোকান শুরু হতে অনেক সময় নিচ্ছে। 

নিউইয়র্ক গত বছর মার্চ মাসে গাঁজা সেবন বৈধ করে। বৈধতার পর গাঁজার দোকান ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। লংআইল্যান্ড সিটিতে পুলিশ প্রেসিঙ্কটের দুই ব্লকের মধ্যে, হারলেমের মিডল স্কুলের কাছে, উইলিয়ামসবার্গের সাবওয়ে স্টেশনে, জ্যাকসন হাইটসের রুজভেল্টে অবৈধ বিক্রেতা বসে গেছে পথে-প্রান্তরে। নিয়ন্ত্রণকারীরা বলছে, তারা অবৈধ দোকান খুঁজছে, কিন্তু কত অবৈধ দোকান আছে, তা বলতে অস্বীকার করেন। এই শিল্পের লোকেরা বলছে শত শত অবৈধ দোকান রয়েছে, হাজার হাজার পথবিক্রেতা রয়েছে। 

অনেকে গাড়ি করে তা বিতরণ করে। গাড়িতে লেখা থাকে ‘THC’ যা সংক্ষেপ করা হয়েছে ‘TETRA HYDRO CANNABINOL’ শব্দের অথবা লেখা থাকে CBD যা সংক্ষেপ করা হয়েছে cannabidiol শব্দের এসব গাড়ি পার্কিং ভায়োলেশন ও হেলথ কোড ভায়োলেশনে লাখ লাখ ডলার ফাইন দেয়। তারপরও তাদের লাভ থাকে। নিউইয়র্ক টাইমসে এক ব্যবসায়ীকে কোট করে লেখা হয়েছে সে গত গ্রীষ্মে ৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার ফাইন দিয়েছে। গাড়িতে বিক্রেতার অনেকেই মুসলিম বিক্রেতাও রয়েছে। এই গাঁজা শুধু স্মোক প্লেসে নয়, টাট্টু পারলার, অপেরা হাউস ও বিউটি সেলুনেও বিক্রি হয়ে থাকে। বিভিন্ন স্থানের স্টেট সিনেটররা অবৈধ গাঁজা দোকান নিয়ে মেয়রকে লিখলেও তেমন কাজ হচ্ছে না। 

শেয়ার করুন