২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৪:০৭:৫২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


পরীক্ষার হার্ডল অতিক্রম বিএনপি নেতৃত্বের
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১২-২০২৩
পরীক্ষার হার্ডল অতিক্রম বিএনপি নেতৃত্বের


বাংলাদেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিতে অন্যরকম এক স্বস্তি। প্রায় ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে দলের প্রতি যে অবিচল আস্থা সেটা বিস্মিত করেছে। বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা অনেকের। যারা মনে করেন, বিএনপি কোনো আদর্শিক দল নয়। এ দলের সাংগঠনিক ভীত দুর্বল। এ দলে সুবিধাভোগীদের আনাগোনা। শুধু তাই নয়, বিএনপি মূলত সুবিধাভোগীদের নিয়েই গঠিত একটি রাজনৈতিক দল, যার সূচনা ক্যান্টনমেন্ট থেকে। ক্যান্টমেন্ট বলতে দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একজন আর্মি পারসন ছিলেন। চাকরি জীবনের পর এ দল গঠন করেন সমমনা বিভিন্ন দলের নেতাদের নিয়ে। ফলে এটা অনেকটাই বন্দুকের নলে ক্ষমতার জোরে গঠিত দল। আপামর মানুষের প্রাণের দল নয়। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত। আর্মি পার্সন হলে দেশপ্রেমিক হবে না, আর্মি পারসন হলে দেশ ও দেশের মানুষের সেবা করা যাবে না এটা সম্পূর্ণরূপে যে ভুল তথ্য জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি প্রমাণ করে দিয়েছে। 

দীর্ঘ ১৭ বছরের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির নেতৃত্বের ডাকে এখনো লক্ষ লোক মুহূর্তে জমায়েত হয়ে মাঠে নেমে পড়ে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অগাধ বিশ্বাস, এটাই যে বিএনপি সমাজের নিচু স্তর থেকে শুরু করে উঁচু স্তর পর্যন্ত সর্বত্র মানুষের মন ও প্রাণের ভাষা বোঝে। দেশের স্বার্থে বা দেশপ্রেমিক হিসেবে দলটির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। 

সম্প্রতি বিভিন্ন মহল থেকে বিএনপিকে ছিন্নভিন্ন করার পরিকল্পনা করছিল বলে বিএনপি নেতৃত্বের অভিযোগ। এর সূত্র ধরে দলের চেয়ারপারসন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভীষণ অসুস্থ হওয়া স্বত্ত্বেও বিদেশে চিকিৎসা করতে না দেওয়া, সাজানো মামলায় শাস্তি দিয়ে কারাগারে আটক রাখা, দলের ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরতে না দেওয়া বিভিন্ন কারণে দলের মনবল ভাঙ্গার আপ্রাণ চেষ্টা ছিল। কিন্তু দলের অবশিষ্ট নেতৃত্বকে ডজন ডজন মামলা-মোকদ্দমা, হামলা, হুমকি-ধমকি দিয়েও দলচ্যুত করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে বিএনপিতে স্বস্তি। 

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম-এ জাতীয় কয়েকটি দল বিভিন্ন ব্যানারে হঠাৎ করে উঠে এসেছে। বছরের পর বছর রাজনীতির মাঠে যেসব নেতার অস্তিত্বই ছিল না, মানুষের জানমাল নিয়ে যারা ঘুণাক্ষরেও টু শব্দটিও করেনি, সেসব বিএনপি থেকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত নেতাদের নিয়ে এমন দল গঠন হয়েছে। যাদের মূল উদ্দেশ্য দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে সংসদ সদস্য বনে যাওয়া। 

তবে বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য উপাত্ত থেকে দেখা যায়, এসব দল করার মূল উদ্দেশ্য বিএনপি ভাঙা। কিন্তু সেটা হয়নি। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব যারা কারাগারের বাইরে এবং ভেতরে তাদের কাউকেই টলানো যায়নি। এর মধ্যে শুধু একজন ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর এক মামলায় আটক হয়ে কারাগারে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে তিনি জামিনে মুক্ত হয়ে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার ঘোষণা দেন। 

নজরুল ইসলাম 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান গত ৪ ডিসেম্বর সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নাসের্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ন্যাব) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বলেন, ‘আজ খালেদা জিয়াকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। তার কি অপরাধ ছিল? তার দোষ কি এই-তিনি গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করে, ব্যাংক লুটের প্রতিবাদ করে, শেয়ার বাজার ধংসের প্রতিবাদ করে এবং জনগণের জন্য লড়াই করে।’ বিএনপি ভেঙ্গে যেতে পারে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন মহলে যে গুঞ্জন ওঠেছে, তা উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘খালেদাকে জেলে দিয়ে সরকার বিএনপিকে ভাঙ্গতে চেয়েছিল। তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপি ভাঙেনি বরং আগের তুলনায় এখন আরো ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী।’ গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় বিএনপির নানা সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপির জন্মই হয়েছে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে। খালেদা জিয়ার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বলতে যেয়ে তিনি বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তিনটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।’ তিনি খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে আগামী নিবার্চন করতে চায় আওয়ামী লীগ, এমনটা দাবি করে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নিবার্চন হলে দেশে জাতীয়য়তাবাদী শক্তি সরকার গঠন করবে। বর্তমান সরকারের ভরাডুবি হবে।’ 

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, নিপীড়নের মুখে ও সংসদ সদস্য হওয়ার প্রলোভন উপেক্ষা করে বিএনপি নেতারা দলের প্রতি আনুগত্য দেখাচ্ছেন। এটা বিএনপির জন্য বড় জয়। গয়েশ্বর চন্দ্র আরো বলেন, এটা পরিষ্কার যে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। জনগণ নিপীড়নকে অগ্রাহ্য করছে এবং বিরোধী দলগুলো নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন চালাচ্ছে।

শাহজাহান ওমরকে নিয়ে যা হলো

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে যুক্ত থাকা শাহজাহান ওমর ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দেন। এরপর থেকে বিএনপিতে শাহজাহান ওমরকে নিয়ে ঝড় বয়ে যায়। জামিনে কারাগার থেকে বের হওয়ার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে শাহজাহান ওমরের এই ঘোষণা আসে। ক্ষমতাসীন দল থেকে তার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, ক্ষমতাসীন দলের তাকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া সবই হয়েছে খুব দ্রুত। শাহজাহান ওমরের ঘটনার মাধ্যমে বিএনপিকে বিভক্ত করতে সরকারের প্রচেষ্টার বিষয়টিও উন্মোচিত হয়েছে বলে বিএনপির নেতাকর্মীরা মনে করছেন। 

এদিকে বিএনপি বিভিন্ন সময়ে বলেছে, গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৮ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং পাঁচ শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, শাহজাহান ওমরসহ ১৪ জন নেতা দল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, ছয়জন নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বাকিরা স্থানীয় নেতা। তবে বিএনপির সাবেক দুই নেতা তৈমূর আলম খন্দকার ও শমসের মবিন চৌধুরী তৃণমূল বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের পদ পেয়েছেন। কিন্তু তারা দুইজনই অনেক আগেই বিএনপি থেকে আলাদা হয়ে গেছেন।

ওবায়দুল কাদের 

বিএনপি প্রসঙ্গে গত ২ ডিসেম্বর এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপির ভুল নীতির জন্য দল ভাগ হয়েছে।’ ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘কোনো দলকে ভাগ করা আওয়ামী লীগের নীতি নয়, বিএনপি নিজেরাই ভুল নীতি নিয়েছে। তারাই নিজেদের বিভক্তির কারণ।’

সবশেষ

বিএনপির নেতৃত্বের ধারণা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কয়েক দিনের মধ্যে, অর্থাৎ নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বিএনপি দলের মধ্যে একতা রাখা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। কিন্তু সেটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে দল। কারণ মনোনয়নপত্র জমাদানের তারিখ শেষ হয়ে গেছে। এখন আর দলছুট করার লোভ তেমন কার্যকরি ভূমিকা রাখবে না। এক্ষেত্রে তারা বলতে শুরু করেছেন, আমরা সফলভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি। আমাদের নেতারা আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে সমালোচনা হচ্ছে। এটাও আমাদের কৌশলের অংশ ছিল। তারা গ্রেফতার না হয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য না হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। জানা গেছে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বিভিন্ন বৈঠক যথারীতি শুরু করে আবারও সাংগঠনিক কার্যক্রম সক্রিয় করে তুলবে দলের নীতিনির্ধারকরা। 

শেয়ার করুন