২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:০৫:৫১ পূর্বাহ্ন


ঢাকার যানজট সহনীয় কীভাবে সম্ভব?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২৩
ঢাকার যানজট সহনীয় কীভাবে সম্ভব? ঢাকা শহরে যানজট


২০২২ জুলাই-সেপ্টেম্বর এবং ২০২২ ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফরকালে বাস্তব অভিজ্ঞতায় মনে হয়েছে, জ্বালানি নিরাপত্তার পাশাপাশি ঢাকার যানজট নিরসন এখন অন্যতম প্রধান সম্যসা। প্রতিদিন যানজটের কারণে মূল্যবান শ্রমঘণ্টা নষ্ট, পরিবেশদূষণ হচ্ছে। ঢাকা বায়ুদূষণ এবং শব্দদূষণের শীর্ষস্থান অধিকার করছে। আমি নিজে উত্তরা থেকে প্রতিদিন বনানী যাতায়াত করেছি। জানার তাগিদে দেশের অধিকাংশ প্রান্তরে ঘুরেছি, যা কিছু লিখছি বাস্তব অভিজ্ঞতার নিরিখে। 

জানি, ঢাকা সেনানিবাস, বিজিবি সদর দপ্তর যেখানে আছে, সেখানেই থাকবে। এগুলো সুদূর ভবিষ্যতে সাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হবে না। একইভাবে পুরোনো বিমানবন্দর এলাকায় বিমানবাহিনীর অধিকারে থাকবে। ঢাকার অভিজাত এলাকা ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, উত্তরা থেকেও স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলো স্থানান্তর হবে না। এমতাবস্থায় ঢাকার যানজট মুক্ত করা অনেক চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হবে। ঢাকা থেকে রিভার্স মাইগ্রেশন করে অন্তত ৪০ শতাংশ মানুষকে ঢাকার সংলগ্ন শহরতলিতে স্থানান্তর করতে হলে সড়ক আর রেল যোগাযোগ আধুনিকায়নের চলমান প্রকল্পগুলো আরো অনেক সুসমন্বিত করতে হবে।

২০২৩ ডিসেম্বর নাগাদ ঢাকার যানজট সহনীয় করতে হলে চলমান কিছু মেগাপ্রকল্প দ্রুত শেষ করতে হবে। সবাই জানে দুটি স্থানে এখন প্রধানত যানজট হয়ে থাকে। একটি উত্তরবঙ্গ থেকে বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে ঢাকায় ঢোকা। আরেকটি হলো দক্ষিণ বাংলা থেকে হানিফ উড়াল সেতু দিয়ে ঢাকায় অনুপ্রবেশ। এই দুই প্রবেশপথে যানজট সৃষ্টি হয়ে গোটা শহরকেই যানজটে স্থবির করে রাখে। 

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল ২০২৩ শেষ নাগাদ চালু হলে বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। মেট্রোরেল উত্তরা-আগারগাঁও চালু হলেও খুব একটা প্রভাব পড়েছে বলা যাবে না। আধুনিক ৩০০ ফুট সড়ক নতুন রূপে চালু হলেও প্রভাব পড়বে সামান্য। বিমানবন্দর সড়কে যানজট  সহনীয় করতে হলে ২০২৩ ডিসেম্বর নাগাদ গাজীপুর-বিমানবন্দর বাস রেপিড ট্রানজিট এবং বিমানবন্দর থেকে অন্তত তেজগাঁও পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ের কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শেষ করতে হবে।  জানি এর ফলে বিমানবন্দর সড়কের যানজট শহর কেন্দ্রে স্থানান্তর হবে। এই পরিস্থিতি অনেক উন্নত হবে যদি ২০২৪ নাগাদ এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে এবং মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার কোনোভাবে সংযুক্ত করা যায়। অবশ্য ২০২৪ নাগাদ মেট্রোরেল আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হলে আংশিক সুবিধা পাওয়া যাবে।

অন্যদিকে দক্ষিণ বাংলা থেকে আসা পাবলিক ট্রান্সপোর্টগুলোর জন্য হানিফ সেতুর বিকল্প পথ যত দ্রুত সম্ভব নিশ্চিত করতে হবে। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ চালু হলে রেল-বাস আন্তঃযোগাযোগ এই পথে যাত্রীদের জন্য বিকল্প সৃষ্টি করবে। তবে নির্বাচনের বছর জনমনে স্বস্তি সৃষ্টির জন্য দ্রুততম সময়ে বিমানবন্দর সড়কের যানজট মুক্ত করা এখন সবচেয়ে অগ্রাধিকার কাজ। এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে অন্তত তেজগাঁও পর্যন্ত চালু না করে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু না করা বাঞ্ছনীয় নয়। জানি না, ২০২৩ শেষ নাগাদ গাজীপুর-বিমানবন্দর বুশরেপিড ট্রানজিট চালু হবে কি না। হলে এই সড়কে সব আনফিট পুরোনো বাস চলাচল বন্ধ করে দিতে হবে। আশা করি বিষয়গুলো সরকারপ্রধানের অগ্রাধিকার তালিকায় আছে।

শেয়ার করুন