২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৪:৩৩:৫০ অপরাহ্ন


নতুন স্যাঙ্কশনের গুঞ্জনের জবাব পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-১২-২০২২
নতুন স্যাঙ্কশনের গুঞ্জনের জবাব পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম


ঢাকার আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে নতুন স্যাঙ্কশন গুজব! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তো বটেই, অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও আরো একটি স্যাঙ্কশনের বিষয়ে কথা ইশারা-ইঙ্গিতে জানাচ্ছেন। কুমিল্লাতে বিএনপির জনসভায় সম্প্রতি কুমিল্লায় সমাবেশে বিএনপির সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে পুলিশের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাইদেরকে আমরা সাবধান করে দেই, আপনারা নিজের দেশের মানুষের দিকে বন্দুক তাক কইরেন না। র‌্যাব বন্দুক তাক করছিল, র‌্যাবের ওপর স্যাঙ্কশন আসছে। আপনারাও সাবধান হয়ে যান। নিজের দেশে নিজের ভাইয়ের দিকে বন্দুক তাক করবেন না।’ এমন কথা আরো আসছে বিভিন্ন স্থান থেকে। এতেই বিষয়টি নিয়ে জনমনে শঙ্কা। র‌্যাব ও তার সাত কর্মকর্তার ওপরে দেয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাঙ্কশনের বোঝা ইতিমধ্যে এক বছর ধরে বইছে বাংলাদেশ। এতে করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইমেজ ক্রাইসিসে। তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালাতেও নানা সমস্যা। এরপর অমন আরো একটা স্যাঙ্কশন এলে সেটা দেশের জন্য ভীষল ক্ষতিকর। 

র‌্যাব ও তার সাত কর্মকর্তার ওপর দেয়া স্যাঙ্কশন তুলতে বাংলাদেশ সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে যাকেই পাওয়া গেছে বাংলাদেশের দায়িত্বশীলরা এ থেকে মুক্তিদানের তথা স্যাঙ্কশন তুলে নিকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছেও ওই অনুরোধ গেছে বারবার। তিনি বলেছেন, এটা একটা দীর্ঘ প্রতিক্রিয়া। যুক্তরাষ্ট্র একটা দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় এটা করে। এবং এর সঙ্গে জড়িত অনেকগুলো ডিপার্টমেন্ট। এবং এমন স্যাঙ্কশন তুলতেও তাদের অনেক প্রয়েজনীয় তথ্যাদি ও টার্গেট পূরণ প্রয়োজন। সেটা হলে তারা নিজ থেকেই তুলে নেয়। এখানে শুপারিশ বা অনুরোধের কিছু নেই। তবুও বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সে সূত্র ধরে আশা জিইয়ে রেখে বাংলাদেশ সরকার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে এমন একটা অপবাদ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। 

ফলে সেখানে এক বছর যেতে না যেতে নতুন আরো একটি স্যাঙ্কশনের আলোচনা বা আরো একটা স্যাঙ্কশন আসছে এটা কতটা প্রত্যাশিত ও ভীতিকর সেটাই নিয়েই আলোচনা। তবে যতদূর জানা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এটা অত্যন্ত গোপনীয় একটা বিষয়। যেখানে সিদ্ধান্তের আগে এসব বিষয়ে বাইরে অবগত হওয়া বা ধারণা করাও সম্ভবপর নয়। টপ সিক্রেট বিষয়গুলো নিয়ে মার্কিন পলিটিক্যাল ব্যক্তিত্বরা আগাম কিছু জানেনও না। জানানও না। তাদের এটা নিয়ে কাজ করার যে ডিপার্টমেন্ট। কেবল তাদের গবেষণা ও তাদের নিজস্ব নীতিতে যেটা হয় সে সিদ্ধান্ত তারা তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে। ফলে যে ধারণাটা বাংলাদেশের অনেকেই করছেন বা প্রত্যাশা করছেন। এটা নিছক অনুমাননির্ভর। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তাছাড়া রাজনীতির মারপ্যাঁচে এমন কথা আসবে এটা স্বাভাবিক। এটা রাজনৈতিক কৌশলও প্রতিপক্ষের মানসিক অবস্থা দুর্বল করতে। 

বিষয়টি এমন পর্যায়ে গেছে বাংলাদেশে, যা নিয়ে প্রকাশ্যে বলতে হয়েছে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমকে। গত ৪ ডিসেম্বর নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি আশা পোষণ করেন, মার্কিন প্রশাসন নতুন করে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেবে না। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, সরকার দেশটির (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের) সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছে। 

প্রতিমন্ত্রী শাহিরয়ার আলম বলেন, ২০২১ সনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া স্যাঙ্কশন প্রসঙ্গে কথা বলতে যেয়ে উল্লেখ করেন, ‘আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য যে ইনফরমেশনগুলো আমাদের দরকার, আমরা যে ইনফরমেশনগুলো পেলে পরবর্তী স্টেপে যেতে পারবো, কেইস ফাইল করতে পারবো। সেটা আমরা খুব অতিসম্প্রতি পেয়েছি। মানে কার বিরুদ্ধে কী অভিযোগের ভিত্তিতে তারা এই কাজটি (গত ২০২১ সনের মার্কিন স্যাঙ্কশন) করলেন, সে তথ্যগুলো আমরা এক বছর পরে পেলাম। ফলে দ্যাটস হাউ স্লো ইট ইজ।’

নতুন নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে যে একটা গুজব চারদিকে সে প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যে এনগেজমেন্ট আমাদের আছে, তাতে (ডু নট এস্পেক্ট) আমরা প্রত্যাশা করি না। যে মার্কিন প্রশাসন যে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দেবে। এবং আমরা মনে করি না যে সম্প্রতিক কোনো স্যাঙ্কশন আসবে। কারণ এনগেজমেন্ট বাড়িয়েছি। যে তথ্য বা বিষয়গুলো তারা চাচ্ছিলেন। সেগুলো আমরা যতোটুকু সম্ভব দেয়ার চেষ্টা করছি।’ তিনি বলেন, ‘বিরোধীদলকে দমন-পীড়নের জন্য র‌্যাবকে ব্যবহার করা হয়েছে, তাহলে সেখানে তো আওয়ামী লীগের কোনো নেতা সে অপারেশনের শিকার হতে পারেন না। তার বিরুদ্ধে যে এলিগেশন ছিল, র‌্যাবের হোমের ইন্টারনাল যে প্রসিডিউর আছে। তাতে আমরা সরকার সে প্রসিডিউরে আমরা সেটিসফাই। সেগুলো নতুন করে তদন্তের প্রয়োজন নাই।’

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘একটা কথা বলি যা বারবার আলোচিত হয়, যে মহামান্য আদালতের নির্দেশনা আছে। যে অন্যকোনো ইনডিপেনডেন্ট বডি দিয়ে এ বিষয়গুলো তদন্ত করতে পারবেন না। জুডিশিয়াল প্রসেসে যেটুকু অ্যালাও করে। আপনি মামলা করতে পারবেন। পরিবারের যদি কেউ র‌্যাবের সঙ্গে এনকাউন্টারে মারা যান আপনি মামলা করতে পারবেন। সেটা জুডিশিয়াল প্রসেস ফলো করবে। কিন্তু এর বাইরে আমাদের কাঠামোতে ইনডিপেনডেন্ট আলাদা ইনভেস্টিগেশন বা অডিট করার সুযোগ নেই। আমরা সকলেই মনে করি, রিফর্ম ইজ এ অনলি কনস্ট্যান্ট। সবকিছুতেই রিফর্মের প্রয়োজন আছে এবং রিফর্মটা আমরা আমাদের স্বার্থেই করি। এবং র‌্যাবও কিন্তু গঠিত হবার পরে, সত্যিকার অর্থে বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করা হয়েছে, সে কালচার থেকে কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার সেটাকে ফেরত নিয়ে এসেছে।’

তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আমরা যেভাবে মার্কিন সরকারের সাথে এনগেজমেন্ট রয়েছি, তাতে আমরা নতুন কোনো স্যাঙ্কশন প্রত্যাশা করি না। কিন্তু এটা খুবই দুঃখজনক যে বিএনপি, আমি তাদের একজন নেতা মিডিয়াতে দেখলাম, গত দুদিন আগে এবং বক্তব্যে বলেছেন, নতুন করে আরো কিছু ঘটবে। আমার যেটা মনে হয় ১০ ডিসেম্বরের তারিখটা, যে জনসভা নির্ধারণ করেছে, এটা তাদের লবিস্টের কথায়। তাদের সমন্বিত একটা পরিকল্পপিত প্রচেষ্টার সিদ্ধান্ত হিসেবে তারা ১০ ডিসেম্বর বেছে নিয়েছে। কারণ ১০ ডিসেম্বর অর্থাৎ ২০২১ সনে এই দিনেই মার্কিন প্রশাসন থেকে ও ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট থেকে এ স্যাঙ্কশনটি এসেছিল এবং তারা যে এত অর্থ ব্যয় করেছে। তাদের লবিস্টরাই বলেছেন, যে ১০ ডিসেম্বর তোমাদেরকে আরো স্যাঙ্কশন আদায় করে দেব। ওই তারিখে তোমরা রাজনৈতিক সভাগুলো করো তাহলে তোমাদের সভার আউটকাম বেটার হবে। কিন্তু আমার মনে হয় তাদের এ প্রচেষ্টা এবারো ব্যর্থ হবে।’

শেয়ার করুন