২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১০:৪৮:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে উত্তপ্ত
আবারো অনিশ্চিত গন্তব্যে রাজনীতি
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১১-২০২২
আবারো অনিশ্চিত গন্তব্যে রাজনীতি


বহুদিন পরই এমন দৃশ্য! সমাবেশে উপস্থিতির মাইকিং হবে। চলবে লিফলেট বিতরণ। সাধারণ মানুষকে বোঝানোর প্রাণান্তর চেষ্টা থাকবে রাজনীতিবিদদের। ভোট ভিক্ষার প্রার্থনা, সভা-সমাবেশে রাজপথ কাঁপবে এবং সাধারণ মানুষের ভোট নিয়ে সরকার গঠনের দায়িত্ব নেবে রাজনৈতিক দল- এমন চিত্রটা দীর্ঘদিন পর ফিরতে যাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। গত দুই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে অনেকটাই কাগজ-কলমে। ২০১৪ সনে বিরোধীদলসমূহ সরে দাঁড়ানোর সুযোগে আওয়ামী লীগের ক্ষমতা লাভ। ২০১৮ সনে দিনের ভোট আগের রাতে সেরে ফেলা। সেখানে জয় নিয়ে বর্তমান সরকার, কিন্তু ২০২৩ বা ২০২৪-এর সূচনায় যে নির্বাচনটা হতে যাচ্ছে, সেটা যে অমন কিছুই হবে না তার ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে। বিশেষ করে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে অলিখিত এক প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে। বেশ ক’মাস আগে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচনের প্রচার প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে।’ সে সময় কথাটা সেভাবে কেউ আমলে না নিলেও ওই কথা সত্য। তখন থেকে ভেতরে ভেতরে চলে মাঠে নামার প্লান-পরিক্রমা, এবার সে দৃশ্য মাঠে। 

বিএনপির একের পর এক কর্মসূচি 

বিএনপি এখন একের পর এক বিভাগীয় সম্মেলন করে গোটা বাংলাদেশে তাদের নবজাগরণ ঘটিয়ে দিয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয় তাদের দ্বিতীয় দফা আন্দোলনের সূচনা। মহাসম্মেলন জনসমুদ্রে পরিণত হয়। লক্ষাধিক লোকের উপস্থিতি দেখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা বিদ্যমান ছিল আভাস। সে চিত্র বদলে যায়। বিএনপি শীর্ষনেতারাও ভাবেনি এতো মানুষের স্বপ্রণোদিত উপস্থিতি ঘটবে। শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতা খোদ বিএনপির মধ্যেই। চট্টগ্রামের চেয়েও বেশি কিছু করার চিন্তায় শুরু ময়মনসিংহের সম্মেলন। সেখান থেকে শুরু ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন উপায়ে বাধাদান, তবুও লোকারণ্য। 

এরপর খুলনা। বিপুল পরিমাণ লোকের সমাবেশ ঘটতে যাবে আঁচ করে সিস্টেম করে লঞ্চ, বাস ধর্মঘটে লোক আটকে দেয়ার প্রচেষ্টা কাজে লাগেনি। সাধারণ যাত্রীরা কষ্ট পেলেও সম্মেলনমুখী মানুষ বিভিন্ন উপায়ে এসে আগের দিন রাতেও বিভিন্ন উপায়ে হাজির। এরপর রংপুরের সর্বশেষ ঘটনা। সেখানেও অজ্ঞাত বা হাস্যকর দাবিতে বাস ধর্মঘট পালন। কিন্তু ঠেকানো যায়নি মানুষের উপস্থিতি। এরপর বিএনপির বরিশালের সম্মেলন, পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটা বিভাগে। মাঠপর্যায়ে বিএনপি যেন গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছে এর মাধ্যমে। এর আগে যেহেতু তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কমিটি চূড়ান্ত করে ফেলেছিল, তাই সাংগঠনিকভাবেও দলটি এখন চাঙ্গা। বলার অপেক্ষা রাখে না বিএনপি যে গত ১৪ বছরে তলিয়ে যায়নি, সেটা প্রমাণে এখন সারাদেশেই বিএনপি নেতাকর্মীরা সক্রিয় এ সম্মেলনের মাধ্যমে, এ ধারা বাড়বে, তারা আরো সক্রিয় হবে। 

জেগে উঠছে আওয়ামী লীগ 

বিএনপির এমন নবজাগরণ ঘটবে সেটা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাইতো মাস দুয়েক আগেও বিএনপির আন্দোলন নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বিভাগীয় চার-চারটি সম্মেলনে মানুষের উপস্থিতি দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়ে নিজেদের নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। 

কী করা যায়, সেটা তারা তড়িৎ চিন্তা করছে। কারণ এভাবে বিএনপি দেশব্যাপী যদি গণজাগরণ প্রদর্শন করে, তাতে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে দলটি। এছাড়াও আওয়ামী লীগের অনেক প্লাস পয়েন্ট ১৪ বছরের মতো টানা ক্ষমতায় থাকার জন্যই। দলটি দেশের উন্নয়নও করেছে অনেক। কিন্তু এসবই চাপা পড়তে শুরু করে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে। এর মধ্যে অব্যাহত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও জ্বালানি সংকট, লোডশেডিং- এ তিনটিই সাধারণ মানুষকে ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে। আওয়ামী লীগ যতোই বোঝানোর চেষ্টা করছে এটা বৈশ্বিক কারণে, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে, মানুষ বুঝতে সময় নিচ্ছে। 

গত শুক্রবার আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী ফোরাম বা কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনাও দিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের। মানুষকে দেশের সার্বিক বিষয়টা ভালোমতো বোঝানো যে, পরিস্থিতিটা এসেছে করোনা মহামারীর পর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে এবং আওয়ামী লীগের আমলে উন্নয়নের কথাগুলো মানুষকে জানান দেয়া। একইসঙ্গে বিএনপির আমলে তাদের দুর্নীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্মগুলো মনে করিয়ে দেয়া। 

শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নেই দলটি। আগামী ২৪ ডিসেম্বর দলটির জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরেও শুরু হয়েছে সাংগঠনিক তৎপরতা, যা প্রতিপক্ষ বিএনপির অনেকটাই নিষ্ক্রিয়তা ও দু’দুবার নির্বাচনে বিএনপিসহ বিরোধীদলসমূহের অংশ না নেয়ার কারণে শীতলতা নেমে আসছিল। সেটা চাঙ্গা করার আপ্রাণ প্লান আওয়ামী লীগের। জাতীয় সম্মেলন ও আগামী জাতীয় নির্বাচন দুটোর প্রস্তুতি তাদের একইসঙ্গে শুরু। এতে তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষপদ পর্যন্ত গা-ঝাড়া দিয়ে উঠেছেন সবাই। কারণ পদ-পদবি একটা ব্যাপার রয়েছে। তেমনি রয়েছে আগামী নির্বাচনে নমিনেশন প্রাপ্তির বিষয়। বেশ ক’স্থানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বলতে শোনা গেছে, ‘লম্ফঝম্ফ দিয়ে লাভ নেই। সবার এসিআর নেত্রীর কাছে জমা আছে।’ 

এদিকে এ নভেম্বর থেকেই বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ শুরু করার প্ল্যান করেছে দলটি। থাকছে ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন কর্মসূচি। এর মধ্যে ঢাকায় ছয়-সাতটি বড় সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। এ ছাড়া এখন থেকেই বিভিন্ন দিবসভিত্তিক ও দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রাখবে দল। আর আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হবে দলের ২২তম জাতীয় সম্মেলন।

এর আগে ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে বড় সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিয়েছে তারা। ওই সমাবেশে দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সরাসরি উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্পষ্ট করে বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, চট্টগ্রামে কত লোকের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। আওয়ামী লীগের জনসভা হবে তার আরো কয়েকগুণ। 

জানা গেছে, ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী কয়েক মাস তিনি বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে সরকারি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন। সরকারি এসব কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার পাশাপাশি তিনি দলীয় সমাবেশ করবেন। ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ডে সমাবেশের পর কক্সবাজার, যশোরসহ অন্যান্য শহরেও সমাবেশ হবে। এছাড়াও জানা গেছে, ঢাকায় আগামী ২ মাসের কর্মসূচির মধ্যে যুবলীগের ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের কয়েকটি জাতীয় সম্মেলন, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন অনুষ্ঠানের পাশাপাশি ১৬ ডিসেম্বরও বড় শোভাযাত্রাসহ নানা কর্মসূচির পরিকল্পনা নেয়া হতে পারে।  

তবে এসবের মূল উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগের ওপর যে মানুষের আস্থা অবিচল সেটা প্রমাণ করার। ফলে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব বলেন, বিএনপির সমাবেশের চেয়ে ঢের বেশি মানুষের উপস্থিতি দেখানোই মূলত দলটির লক্ষ্য। কারণ বিএনপি এতো দ্রুত মাঠে নেমে যাবে সেটা অনুধাবন করতে পারেনি তারা। তাছাড়া বিএনপি ঘোষণা দিয়েছে এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাদের দাবি সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। ফলে এর পাল্টা জবাব না দিলে কোণঠাসা হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়ে যাবে আওয়ামী লীগের ফ্রন্টফুটে থেকেও। 

দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পর্যবেক্ষণ 

বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন ও সার্বিক রাজনীতির ওপর দেশ-বিদেশের পর্যবেক্ষক মহলের সজাগ দৃষ্টি। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট আগামী নির্বাচনে বিরোধীদলের কর্মসূচি যথার্থভাবে পালনের ওপর শঙ্কা প্রকাশ করে গেছেন। এ ছাড়াও মার্কির যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকাস্থ রাষ্ট্রদূত ছাড়াও দেশটির বিভিন্ন কর্মকর্তাও অনেক সময়ে বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি এবং জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে মত দিয়ে আসছেন। এছাড়াও বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিদেশি রাষ্ট্রসমূহের অনেকেই এ ব্যাপারে প্রতিনিয়ত মন্তব্য রেখে আসছেন। তারা বলেই দিয়েছেন যে, তারা দেখতে চায় আগামী জাতীয় নির্বাচনটা যেন একটা অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে করে বিএনপির অবস্থা এ পর্যন্ত যে নাজুক ছিল সেটাতে নির্ভার থাকলেও বিএনপি যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এটাতে বিদেশিরাও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। ফলে এখানে পাল্টা সমাবেশ বা শক্তি প্রদর্শন এখন ভীষণ গুরুত্ব পাচ্ছে আওয়ামী লীগের কাছে।

শেয়ার করুন