১২ এপ্রিল ২০১২, বুধবার, ০১:৫৭:১১ পূর্বাহ্ন


আনু মুহাম্মদ বললেন
উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে
বিশেষ প্রতিবেদক
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-০৩-২০২৩
উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে আনু মুহাম্মদ


অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, বর্তমান সময়ে এটা নিশ্চিত যে, এই সময়ে শ্রমিকের মজুরি পুনঃনির্ধারণ করা উচিত। ন্যূনতম মজুরির দাবি কোন দয়া-দাক্ষিণ্যেরও বিষয় না। এটা শ্রমিকের অধিকার। উন্নয়নের গল্প যে বলা হয় এই উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। আবার পরিবেশ দূষণের প্রভাবও শ্রমিকের উপরেই পড়ে। 

শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি প্রসঙ্গে গার্মেন্ট টিইউসি’র গোলটেবিল আলোচনায় তিনি একথা বলেন। ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের উদ্যোগে গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির প্রসঙ্গে সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট মন্টু ঘোষের সভাপতিত্বে এবং সহ সভাপতি জলি তালুকদারের সঞ্চালনায় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান শামীম। গোলটেবিল আলেচনায় বক্তব্য রাখেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সিপিবির সাবেক সভাপতি  মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান, টাঙ্গাইল-গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, বাংরাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ তৌহিদুর রহমান, গার্মেন্ট শ্রমিক ফ্রন্টের সহ-সভাপতি খালেকুজ্জামান লিপন, জাতীয় গার্মেন্ট শ্রমিক জোট বাংলাদেশের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন শহীদ, গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সবুজ, ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ দত্ত, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসাইন প্রমুখ।

বিজিএমইএ’র সমালোচনা করে আনু মোহাম্মদ বলেন, বিজিএমইএ ধনকি শ্রেণীর প্রধান সাংগঠনিক কাঠামো হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের অযুহাতে মূল্যস্ফিতির ফলে ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে কোন প্রকার বাড়তি বিনিয়োগ ছাড়াই মালিকপক্ষ ৬০ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার মুনাফা করলেও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি হয়নি। অধ্যাপক আনু মুহম্মদ শ্রমিকদের রেশনিংয়ের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা দমন পীড়নের কাজ করে, সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য রেশন থাকলেও নানান অযুহাতে শ্রমজীবী-উৎপাদনকারীদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা নেই। তিনি বলেন, দারিদ্রসীমার আয়ের যে মানদণ্ড, তার চেয়ে শ্রমিক কম মজুরি পায়। শ্রমিকদের মহার্ঘ্য ভাতা প্রদানের দাবি জানিয়ে আনু মুহম্মদ বলেন, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কোন মতেই ২৫ হাজার টাকার নিচে হওয়া উচিত নয়।  তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের তুলনায় পৃথিবীতে এত কম মজুরি আর কোথাও দেয়া হয় না। পোশাক রপ্তানির বিষয়ে আমরা যদি পাল্লা দিতে পারি, তাহলে ন্যূনতম মজুরি প্রদানে আমরা কেন অপরাপর দেশের সাথে পাল্লা দিতে পারছি না। তিনি আরও বলেন, উৎপাদন ব্যয় বাড়লে যদি মূল্য সমন্বয় করা হয়, তাহালে উৎপাদনের অন্যতম প্রধান শক্তি শ্রমিকের মজুরি কেন বাড়বে না? 

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, দেশের শ্রম মন্ত্রণালয় থাকলেও সেটা শ্রমিকদের স্বার্থে কাজ না করে মালিকের স্বার্থ রক্ষা করছে। এই মন্ত্রণালয় শ্রম মন্ত্রণালয় হলেও প্রকৃত অর্থে তা মালিক মন্ত্রণালয় হয়ে গেছে। মালিকপক্ষ যেন ১০ শতাংশের বেশি মুনাফা নিতে না পারে এবং মুনাফার অংশ যাতে শ্রমিককের মাঝে বন্টন করা যায় সেজন্য দেশে ন্যূনতম মজুরি বোর্ড গঠনোর পাশাপাশি মুনাফা বোর্ডও গঠনের দাবি জানান। শ্রেণী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের দাবি পূরণের আহ্বান জানিয়ে সেলিম বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নি¤œতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা দাবি করছি, জুলাইয়ের মধ্যে এই দাবি পূরণ না হলে আমরা ন্যূনতম মজুরি ৩০ হাজার দাবি করবো। দেশের মাথাপিছু আয় অনুযায়ি শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি প্রদানের দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে সেলিম বলেন, সরকার বলছে মানুষের মাথাপিছু আয় ৩ লক্ষ টাকা। পাঁচ জনের একটি পরিবারের মাথাপিছু আয় হয় ১৫ লক্ষ টাকা। মাসের হিসেবে দাঁড়ায় সোয়া লক্ষ টাকা। গার্মেন্ট শ্রমিকের মাসিক মজুরি মাথাপিছু আয় অনুযায়ি সোয়া লক্ষ টাকা হওয়া উচিত। এর অর্ধেক আপনাদের উন্নয়নের জন্য কেটে রেখে বাকি টাকা  শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি হিসেবে দিয়ে দিন।

সোহরাব হাসান বলেন, শিল্পের উন্নয়ন হলে এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার কথা থাকলেও এদেশে কেবল মালিকের উন্নয়ন হচ্ছে। মালিকদের মুনাফা বেড়ে চললেও শ্রমিকের মজুরি বাড়ছে না। দেশের প্রধানমন্ত্রী যে শ্রমিকের পক্ষে নেই সেটাও তো পরিষ্কার। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হোক। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রটা এতোটাই স্বৈরতান্ত্রিক যে তারা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরির দাবির কথাও শুনতে চায় না। মজুরি বৃদ্ধির সাথে সাথে শ্রমিকের জন্য রেশনিং, চিকিৎসা এবং বাসস্থানের অধিকার নিশ্চিত করে শ্রমিকের সাথে মানবিক আচরণ করা রাষ্ট্রের কর্তৃব্য হওয়া উচিত। 

আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, অভিলম্বে মজুরি বোর্ড গঠন করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা বাস্তবায়ন করতে হবে এবং মজুরি বোর্ডে প্রকৃত শ্রমিক প্রতিনিধির প্রতিনিধত্ব নিশ্চিত করতে হবে। আলোচনা সভায় গার্মেন্ট শ্রমিক সংগঠনসমূহের নেতৃবৃন্দ গার্মেন্ট শ্রমিকদের মজুরি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

আলোচনা সভা থেকে গার্মেন্ট টিইউসি আগামী ১ মার্চ শ্রম মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদানের কর্মসূচি ঘোষণা করে।

শেয়ার করুন