০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৪:১৬:৩০ পূর্বাহ্ন


দেশকে আবুল খায়ের ভূইয়া
আন্দোলনে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৯-২০২৩
আন্দোলনে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে আবুল খায়ের ভূইয়া


বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভূইয়া বলেছেন, সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে। বাধ্য হবে পালাতে..। না পালাইয়া উপায় আর থাকবে নাকি? কি বলেন আপনি..এসরকার কোথায় যাবে গা আন্দোলনে ঠেলায়..। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

দেশ: আপনরা বারবারই বলে যাচ্ছেন যে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনেই যাবেন না। কিন্তু সরকারের শীর্ষ থেকে দেশে বিদেশে সব জায়গায় বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সব ব্যবস্থাই করা হবে। এতো কিছুর পরও কেনো আপনারা নির্বাচনে অংশ নিবেন না? সরকারের আশ্বাসে কি আস্থা নেই আপনাদের?

আবুল খায়ের ভূইয়া : কেনো আমরা আস্থা রাখতে পারছি না, বোঝেন না কেনো? এইতো কয়েকদিন আগে একজন ডিসি তার বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেই ফেলেছেন যে তিনি আওয়ামী সরকারকে আবারো ক্ষমতায় দেখতে চান। তারা নৌকার পক্ষে ভোট চায়। তাই বলতে তো হবেই যে এ সরকারের সাজানো ঘরে আমরা ঢুকবো কেনো? নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন থেকে শুরু করে সব জায়গায় তাদের মনের মতো লোক বসিয়ে রাখা হযেছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনতো স্বচ্ছই ছিলো না। ২০১৪ সালে তো নির্বাচনই হয়নি। ২০১৮ সালেতো মানুষ ভোটই দিতে পারেনি। এ সরকারের অধীনে সিটি কপোরেশন, পৌরসভার নির্বাচনে জনগণের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে। বেসিক্যালি আওয়ামী লীগ কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন চায়নি। তারপর তারাতো জানেই জনগণের ভোটে কোনোদিনই নির্বাচিত হতে পারবে না। জণগণের ভোটাধিকার হরণ করা আওয়ামী লীগের মজ্জ্বাগত ইতিহাস। তাদের মুখের কথার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সব সময় মিথ্যা কথা বলে। জাতির কাছে আওয়ামী লীগের কোনো কমিটমেন্ট আছে নাকি? তাই তাদের কথা মতো আমরা ভোটে যাবো?

দেশ: আচ্ছা এমন কথা শোনা যাচ্ছে যে বিএনপি’র ওপর বৃহৎ রাষ্ট্রের চাপ আছে তারা যেনো এই সরকারের অধীনেই এই ব্যবস্থাতেই নির্বাচনে অংশ নেয়..কি বলেন আপনি?

আবুল খায়ের ভূইয়া: কিসের চাপ? আমাদের ওপর বিদেশীদের কোনো ধরনের চাপ নেই। দেখেন বিদেশীরা কি বলেছেন? তারা চাচ্ছে বাংলাদেশে একটি স্বচ্ছ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হউক। তারাও চায় বাংলাদেশে একটি নির্বাচন হউক নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। 

দেশ: কিন্তু আপনাদের আন্দোলনতো কেমন জানি ঝিমিয়ে পড়েছে.. মনে হচ্ছে আপনারা পারছেন না..কুলিয়ে উঠতে পারছেন সরকারের সাথে..

আবুল খায়ের ভূইয়া: আমরা একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল করি। এটা উগ্রবাদী দল নয়। আমরাতো দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। রাজনীতিতে একটা সারেগামা আছে। আমরা সাংবিধানিকভাবে যেভাবে আগানোর দরকার ঠিক সেভাবেই এগুচ্ছি। সরকারকে আমরা অবশ্যই বাধ্য করবো একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে। এবং এব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেয়া হবে না। আপনারা এব্যাপারে নিশ্চিত থাকুন। 

দেশ: আপনারা কি মনে করেন সব মানুষ আপনাদের আন্দোলনে সাড়া দিয়েছে বা দিবে? আপনাদের সাথে দলের লোক ছাড়াতো সর্বস্তরের জনগণ নেই..কি করে বলছেন আপনাদের আন্দোলন সফল হবে..আপনারা কি ঐকবদ্ধ আছেন দাবি আদায়ে?

আবুল খায়ের ভূইয়া: আরে আপনি দেখেনইনা কেনো? যেখানেই আমরা কর্মসূচি দিতে যাই সেখানে লাখ লাখ লোক সে কর্মসূচিতে অংশ নেয়। এটা তো শুধু বিএনপি’র কর্মসূচি বলেই না। দেশে ও জাতির রক্ষায় এমন কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। তাই আমাদের নেয়া সব কর্মসূচিতেই জনতার ঢল নামে। 

দেশ: বলা হচ্ছে মামলা-মোকাদ্দমা ও গ্রেফতার আতঙ্কে কি আপনারা চুপ করে আছেন? আপনারা কি সরকারের ভয়ে ভীত?

আবুল খায়ের ভূইয়া: আরে না না..না না..আপনাদের মধ্যে ভয়েরই কোনো কারণ নেই। ১৬টি বছর ধরে আমাদের বিরুদ্ধে নানান ধরনের মামলা মোকাদ্দমা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কাল্পনিক মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। জোর-জবরদস্তি করে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে আমাদের নেতা তারেক রহমানের নাম এফ আইআরেই ছিলো না। তারপরেও সম্পূরক চার্জশিট দিয়ে তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান হচ্ছেন জোবায়দা রহমান। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে এই পরিবারের একটি পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। এই পরিবারেরই সন্তান জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধেও সরকার মিথ্যা মামলা দিয়েছে। দেখেন এই সরকারের আমলে কোনো কিছুইতো ঠিক নেই। এসরকারের অধীনে কোর্ট, কাচারি, আদালত, প্রশাসন..সব কিছুই। এর আগে একজন বিচারপতি কি বলেছেন শুনেননি? তারা তো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের হয়রানি করার টার্গেট নিয়েই নেমেছে। এইজন্যই তো একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মহাসচিবের বিরুদ্ধে কয়টা মামলা দেয়া হয়েছে? কিছু কিছু লোক আছে যারা নেহায়েৎ ভদ্র লোক..সজ্জন মানুষ.. এমন ব্যক্তি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এই ব্যক্তি সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়িতে আগুন দিয়েছে...? আমরাও তো ছাত্ররাজনীতি করেছি..আমরা কি সুরাজনীতি দেখি না..এখন এই সরকার কি ফাজলামো পাইছে..

দেশ: আপনারা আন্দোলন করে যাচ্ছেন.. কিন্তু এর কোনো ফলাফল কি দেখা যাচ্ছে? এমনতো না যে আপনাদের ভয়ে সরকার জড়সড়? ধরুন এই অবস্থাতেই সরকার একতরফা নির্বাচন করেই ফেলে?

আবুল খায়ের ভূইয়া: আপনাকে একটা কথা বলি বাংলাদেশ মানুষ, এই চিরসবুজ বাংলা..এই দেশের জনগণ আন্দোলনের সাথে বেঈমানি করে না। কোনো রক্তই বৃথা যাবে না। আমাদের ওপর হামলা মামলা চলছেই। বাংলাদেশের জনগণের ওপর এই সরকার একটা জগ্গদল পাথরের মতো বসে আছে। তাদের লুটপাটের কারণে আলু পটল চাল ডাল পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। যেসব পণ্যের দামি বাড়ছে তা আমরা কখনোই চিন্তাই করিনি। তাই এমন দু:শাসন সরাতে জনগণ আমার্দে সাথেই আছে। আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে গেছি। তাদের চোখে মুখে দেখেছি..জনগণ আমাদের সাথেই আছে। আরে ভাই সুযোগ.. আরেকটু পরিস্থিতি ঘনিয়ে আসুক..আমরা আন্দোলনে সর্বশেষ যে ডাক দিবো...আপনারাই লক্ষ্য করবেন..সে ডাকেই দেখবেন কতো লাখ লাখ মানুষ কিভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে..

দেশ: সে আন্দোলন দেখানোর পরও কি মনে করেন সরকার একতরফা নির্বাচন করা থেকে পিছিয়ে থাকবে?

আবুল খায়ের ভূইয়া: আরে সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে। বাধ্য হবে পালাতে..না পালাইয়া উপায় আর থাকবে নাকি? কি বলেন আপনি..কোথায় যাবে আন্দোলনে ঠেলায়..

দেশ: ধন্যবাদ সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য। 

আবুল খায়ের ভূইয়া: আপনাদেরও ধন্যবাদ। 

শেয়ার করুন