২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৪:৫০:১৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


জাতিসংঘের মূল্যায়ন রিপোর্ট
নির্বাচন প্রস্তুতি বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৪-২০২৩
নির্বাচন প্রস্তুতি বাংলাদেশের প্রধান চ্যালেঞ্জ


বিদ্যমান অর্থনৈতিক চাপ সামাল দেয়া এবং আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রস্তুতিকে বাংলাদেশের চলতি বছরের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাতিসংঘ। গত ৪ এপ্রিল মঙ্গলবার প্রকাশিত জাতিসংঘের বাংলাদেশ বিষয়ক মূল্যায়ন রিপোর্ট-২০২২ এ ওই চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়। রিপোর্টে বলা হয়, বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই ঢাকার জাতিসংঘ টিম কাজ করছে। দেশের সার্বিক শ্রমমান ও মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নে জাতিসংঘের কার্যক্রমের কথা জানিয়ে মূল্যায়ন রিপোর্টে বলা হয় নতুন বছর বাংলাদেশের সামনে প্রধান কতোগুলো চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি, ইউক্রেন যুদ্ধ, অবনতিশীল জলবায়ু সংকট থেকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তার পাশাপাশি বাংলাদেশের সামনে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং শক্তিশালীকরণ, আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি, ২০২২ সালের বিপর্যয়কর বন্যা থেকে পুনরুদ্ধার, সম্প্রতি আইএমএফের ঋণ সংক্রান্ত সংস্কার কার্যক্রম হলো প্রধান চ্যালেঞ্জ। এতে আরও বলা হয়, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে গ্র্যাজুয়েশনে যাচ্ছে। তাই জাতিসংঘের বিভিন্ন এজেন্সি এবং অন্য অংশীদারদের সহযোগিতায় সরকার দেশের টেকসই উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ এসব মাইলফলক স্থাপনের জন্য কাজ করবে। সরকারের এসব অগ্রাধিকারের আলোকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে সহযোগিতা দেয়ার দিকে দৃষ্টি দেবে বাংলাদেশে জাতিসংঘ কান্ট্রি টিম (ইউএনসিটি)। ২০২৩ সালের মার্চে দোহা’তে স্বল্পোন্নত দেশ বিষয়ক পঞ্চম ইউনাইটেড নেশনস কনফারেন্সের পর সরকার এলডিসি থেকে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্যাটেজি গ্রহণ করবে।

এই প্রক্রিয়ায় ঘনিষ্ঠভাবে পরামর্শ করা হবে সরকার, বেসরকারি খাত, সুশীল সমাজ, উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে। তাতে এলডিসি মর্যাদা বিষয়ক বিভিন্ন পদক্ষেপে আন্তর্জাতিক সমর্থনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করা হবে। এক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তা করবে ইউএনসিটি। ফলে সুবিধা পাবেন সবচেয়ে অনগ্রসর মানুষরা। পরিবেশ, শ্রম, মানবাধিকারের মানদন্ড নিয়ে বেসরকারি খাতের প্রস্তুতিতে সমর্থন দিতে উন্নয়ন অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করবে ইউএনসিটি।

রিপোর্টের সারসংক্ষেপ:

ঢাকাস্থ জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ টিমের মূল্যায়ন রিপোর্টের সারসংক্ষেপে ২০২২ সালকে বাংলাদেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং বছর হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ইউক্রেন অঞ্চলে যুদ্ধের উপর্যুপরি প্রভাব এবং কোভিড-১৯ মহামারির ক্রমাগত আঘাতে উদ্ভূত জ্বালানি ও খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেশীয় মুদ্রাস্ফীতি উস্কে দেয়ার পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের অগ্রগতিকে স্তিমিত করে দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব একটি সতত বিরাজমান বাস্তবতা, যার প্রভাবে সংঘটিত হচ্ছে দুর্যোগময় বন্যা এবং মিয়ানমারে বিরোধ পঞ্চম বছরের মতো গড়ানোর মধ্যদিয়ে এ দেশটি প্রায় দশ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় প্রদান অব্যাহত রেখেছে। রিপোর্টে বলা হয়, ২০২২ সালের চ্যালেঞ্জিং পরিবেশ সত্ত্বেও জাতিসংঘ এই দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, নীতিমালা জোরদার করার পাশাপাশি  বেশ কতোগুলো ধারাবাহিক উদ্যোগ ও সেবা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছে। খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্য বিধি, শিক্ষা, শিশু সুরক্ষা, জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতায় বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোর জন্য সহায়তা, নিরাপদ, বৈধও নিয়মিত অভিবাসন, সামাজিক সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রসমূহ জোরদার করার প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশস্থ জাতিসংঘ কার্যালয় বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার পাশাপাশি জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নের বিষয়গুলোতে সহায়তা প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ উন্নয়ন চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রয়াস পরিচালনায় সুষ্ঠুভাবে কাজ করেছে। জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন সহযোগিতা ফ্রেমওয়ার্ক (ইউএনএসডিসিএফ) ২০২২-২০২৬ বাস্তবায়নের প্রথম বছরে এ দেশে পরিচালিত জাতিসংঘের বিভিন্ন উদ্যোগের আওতায় এসেছে লাখ লাখ মানুষ এবং হাজার হাজার মানুষ এসব উদ্যোগের ফলে প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হয়েছে। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়- টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি বাংলাদেশস্থ জাতিসংঘ কার্যালয় জলবায়ু প্রভাবের কারণে সৃষ্ট দেশের বিভিন্ন সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে সরকারকে সহায়তা প্রদানের জন্যও কাজ করেছে। ২০২২ সালের মে মাসে এদেশের সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চল গুরুতর আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ে, যার ফলশ্রুতিতে ৭.২ মিলিয়ন মানুষ দুর্ভোগের শিকার হন এবং লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যু হয়ে পড়েন। উক্ত অঞ্চলে অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় আনুমানিক ৭২২ মিলিয়ন ইউএস ডলারের অধিক। তাৎক্ষণিক জরুরি সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি আকস্মিক বন্যায় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার লক্ষ্যে জাতিসংঘ কেন্দ্রীয় জরুরি সহায়তা তহবিল (সিইআরএফ) সর্বাধিক দুর্যোগ কবলিত জেলাগুলোতে ঝুঁকিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর জন্য জীবনরক্ষাকারী সহায়তা প্রদানের জন্য ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার বরাদ্দ করার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে সার্বিকভাবে ২০.৪৫ মিলিয়ন ইউএস ডলারের তহবিল গঠন করে। পঞ্চম বছরের মতো বাংলাদেশ মিয়ানমার হতে আগত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদান অব্যাহত রেখেছে এবং ২০১৭ সালের আগস্ট মাস হতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য উদারভাবে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এই সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আর্থিকও পরিবেশগত উভয় ধরনের দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে; শরণার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত, সম্মানজনক, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী প্রয়াস আবশ্যক। বাংলাদেশ সরকারের সাথেমিলিতভাবে জাতিসংঘ ও আমাদের মানবিক সহায়তা অংশীদারগণ বাংলাদেশে নিবন্ধিত আনুমানিক ৯৫২,৩০৯ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে সহায়তার লক্ষ্যে কাজ করার পাশাপাশি তাদের জন্য একটি বাস্তবসম্মত দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খোঁজার প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। ২০২২ সালে, রোহিঙ্গা সংক্রান্ত মানবিক সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে উক্ত বছরের শেষ নাগাদ যৌথ সহায়তা পরিকল্পনা (জেআরপি) এর আওতায় ৮৮১ মিলিয়ন ইউএস ডলারের একটি অগ্রাধিকারভিত্তিক আবেদনের ৫৯% প্রার্থিত তহবিল (৫২০.৫মিলিয়ন ইউএস ডলার) সংগৃহীত হয় এবং উক্ত তহবিলের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ মানবিক ও মৌলিক সেবাসমূহ সফলভাবে প্রদান করা হয়। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের উদার অবদানের জন্য আমিতাদের সাধুবাদ জানাই এবং তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই, কারণ ২০২৩ সালে আমরা এমন এক আর্থিক পরিস্থিতির মধ্যে পতিত হওয়ার আশঙ্কা করি যা হবে এমনকি আরও নিয়ন্ত্রিত। 

জাতিসংঘ এবং অন্যরা কাজ না করলে এ অর্জন সম্ভব হতো না

রিপোর্টে জাতিসংঘ বলছে, বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারের সঙ্গে বহু বছর ধরে জাতিসংঘ সফলতার সঙ্গে কাজ করেছে। ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব ও বন্ধুত্ব অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সংস্থাটির তরফে বলা হয়- ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ নিয়ে এগিয়ে চলা ও সেগুলো অর্জন করার পাশাপাশি ২০২৬ সাল নাগাদ স্বল্পোন্নতদেশের (এলডিসি) ক্যাটাগরি থেকে উত্তীর্ণ হওয়ার প্রস্তুতিতে বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য নবোদ্যমে প্রয়াস চালানো আবশ্যক। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে কর্মরত জাতিসংঘ কান্ট্রি টিমের (ইউএনসিটি) পক্ষ হতে আমি ২০২২ সালেরবার্ষিক জাতিসংঘ কান্ট্রি টিম ফলাফলসমূহ সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে পেরে আনন্দিত জানিয়ে রিপোর্টে বলা হয়, উক্ত প্রতিবেদনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ পূরণে অগ্রগতি অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশস্থ জাতিসংঘ কার্যালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী কর্তৃক ২০২২ সালে অর্জিত ফলাফলসমূহ এর উপর একটি সার্বিক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। জাতিসংঘ যদি অন্যদের সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ না করতো তাহলে ২০২২ সালে বাংলাদেশস্থ জাতিসংঘ যে ফলাফল অর্জন করেছে, তা অর্জন করতে সক্ষম হতো না। জাতিসংঘ প্রতিনিধিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়- তিনি সুশীল সমাজ, বেসরকারি সংস্থাসমূহ, ব্যক্তি মালিকানাধীন খাত ও জাতিসংঘ সদস্য রাষ্ট্রসমূহের মধ্য হতে আগত আমাদের সকল উন্নয়ন সহযোগীকে তাদের উদার অবদান ও গতিশীল সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান। রিপোর্টে সুশীল সমাজ, বেসরকারি সংস্থাসমূহ (এনজিও), ব্যক্তি মালিকানাধীন খাত ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীসহ জাতিসংঘের অসংখ্য অংশীদার যারা জাতিসংঘের সাফল্যকে সম্ভব করে তুলেছে, তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে পেরে জাতিসংঘ দূত আনন্দিত।

শেয়ার করুন