০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৮:২২:৩৫ পূর্বাহ্ন


সংখ্যালঘুরা প্রতিবাদও করতে পারছে না
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৮-২০২২
সংখ্যালঘুরা প্রতিবাদও করতে পারছে না সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ


হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)’র ফোরামের সদস্য ও এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেছেন, নানাভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভূমির অধিকার হরণ করা হচ্ছে। এসব জনগোষ্ঠী জোরালোভাবে প্রতিবাদও করতে পারছে না। সংগঠনটির উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, এভাবে চলতে থকলে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই কেবল দুর্গাপূজা নয়, সবসময় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আবশ্যক। 

এইচআরএফবি’র পক্ষ থেকে বলা হয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা যাতে আসন্ন দুর্গাপূজা নির্বিঘেœ উদযাপন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে সরকার এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিসমূহকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। প্রতিহত করতে হবে সাম্প্রদায়িক ও উগ্রবাদী যে কোন হামলাকে।  দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার লঙ্ঘনের সংবাদ নিয়মিতভাবেই গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। তাদের নিজ ধর্ম বিশ্বাস চর্চার অধিকার, ভূমি অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার, চলাচলের অধিকারসহ অন্যান্য অধিকারসমূহ প্রতিনিয়ত নানামুখী প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছে। অভিযোগ উঠছে, ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় কিংবা বিদ্যমান দায়হীনতার অপসংস্কৃতির কারণে এসব ঘটনা ক্রমাগতভাবে ঘটে চলেছে।

এমন এক ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটে ২০২১ সালের অক্টোবরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার সময়। একবছর পর আরেকটি পূজার প্রাক্কালে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) ২০২১ সালে পূজায় হামলার ঘটনাগুলো এবং সেসব ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা পর্যালোচনা করে আসন্ন পূজার পূর্বে ও পূজা চলাকালীন সময়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সুপারিশ করার উদ্দেশ্যে ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধ কর্তৃপক্ষের করণীয়ঃ ২০২১ সালের সহিংসতার আলোকে একটি নাগরিক পর্যবেক্ষণ” শীর্ষক একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এ প্রতিবেদনের প্রধান প্রধান দিকসমূহ এবং এ ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সুপারিশসমূহ তুলে ধরার জন্য ফোরামের পক্ষ থেকে ২৮ আগস্ট ২০২২ জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। 

“আসন্ন দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয়” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ২০২১ সালে দুর্গাপূজায় সংঘটিত সহিংসতার ঘটনাগুলো ফিরে দেখা হয়, সে সময় রাষ্ট্রের বিভিন্ন এজেন্সির ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হয় এবং বিশ্লেষণের আলোকে আসন্ন দুর্গাপূজাসহ সকল ধর্মীয় উৎসব যেন শান্তিপূর্ণভাবে ও যথাযথ মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হতে পারে, তার জন্য কর্তৃপক্ষের ও নাগরিক সংগঠনের করণীয় হিসেবে ১৭টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনটির সভাপতিত্ব করেন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এর নির্বাহী পরিচালক ও ফোরামের আহবায়ক মো: নূর খান। সঞ্চালনা করেন ফোরামের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং। মূল বক্তব্য পাঠ করেন ফোরামের সমন্বয়ক তামান্না হক রীতি। এছাড়া ফোরামের বিভিন্ন সদস্য সংগঠনের প্রতিনিধিরা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

ফোরামের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও নাগরিক উদ্যেগের প্রধান নির্বাহী, জাকির হোসেন বলেন, সংখ্যালঘুরা মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ স্বাধীনতার পর থেকেই সংখ্যালঘুরা নিপীড়নের শিকার হয়েছে অনেকটা ধারাবাহিকভাবেই। বঙ্গবন্ধুর অঙ্গীকার কিংবা সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। 

ফোরামের সদস্য ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম বলেন, রাষ্ট্রের সাংবিধানিক ও নৈতিক দায়িত্ব নাগরিকের জীবন ও সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সরকার সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। প্রায়শ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয় তাদের নিরাপত্তা প্রদানের নামে, কিন্তু হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। ফলে ঘটনাসমূহ পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকে।

ফোরামের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও স্টেপস টুওয়ার্ডস ডেভলপম্যান্টের নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন কর্মকার বলেন, দুর্গা পূজা ধর্মীয় আচারের পাশাপাশি সব বাঙালীর উৎসব। কিন্ত একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দেশের এ অসাম্প্রদায়িক চরিত্রটি নষ্ট করে দিচ্ছে। সরকার, রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তি যৌথভাবে এ উগ্রতা প্রতিরোধে দাঁড়াতে পারছে না। আগামী পূজায় যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সেজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়াতে হবে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয়ভাবে। এসব হামলা যাতে না ঘটে পূর্ব থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা প্রয়োজন। তাঁর মতে, সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে এমন প্রতিটি ব্যক্তির আজ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য রক্ষা করার লক্ষ্যে।

সভাপতির বক্তব্যে মো: নূর খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ধর্মীয় সংখ্যালঘুসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর ধারাবাহিক নির্যাতন ও নিপীড়ন ঘটে চলেছে। এ সবের কোনোটিরই কোনো প্রতিকার বা বিচার নিশ্চিত হচ্ছে না। স্বচ্ছতা বা জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হওয়ায় এসব হামলা থামানো যাচ্ছে না। তাই আগামী দুর্গাপূজার প্রাক্কালে ফোরামের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সজাগ থাকতে হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থাসমূহ নিশ্চিত করতে হবে। তবে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দোহাই দিয়ে উৎসবকে সীমিত করা কিংবা মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা যাবে না। বিভিন্ন পক্ষের সাথে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ করে কার্যকরভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

শেয়ার করুন