২০ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৩:৪২:৩৭ পূর্বাহ্ন


মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগে জিটিসিএলের আর্থিক সংকট ঘনীভূত
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৪-২০২৩
মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগে জিটিসিএলের আর্থিক সংকট ঘনীভূত মেট্রোরেল


অদূরদর্শী পরিকল্পনা এবং অপেশাদারদের চাপিয়ে দেয়া এক পরিণামদর্শী অতিরিক্ত বিনিয়োগের কারণে গ্যাস সাপ্লাই চেনের অন্যতম প্রধান সেগমেন্ট গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির আর্থিক সংকট এখন ঘনীভূত। বিদ্যমান অবস্থায় কোম্পানির পাইপলাইন এবং স্থাপনাসমূহের সর্বোচ্চ ক্ষমতা ৫৫০০-৬০০০ এমএমসিএফডি।  অথচ বর্তমানে বর্তমানে সর্বোচ্চ দৈনিক গ্যাস সঞ্চালন হয় ২৮০০-২৯০০ এমএমসিএফডি। বেশ কয়েকটি পাইপলাইন এবং স্থাপনা সর্বোচ্চ ক্ষমতার চেয়ে অনেক কম ক্ষমতায় চলছে। ২০৩০-এর আগে গ্যাস সঞ্চালন বৃদ্ধির আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই। এমতাবস্থায় জিটিসিএল, পেট্রোবাংলার স্বার্থে অবিলম্বে কোম্পানির অ্যাসেটসমূহ অ্যাসেসমেন্ট করার আগে নতুন কোনো বিনিয়োগ করা সমীচীন হবে না।

নিবিড় বাছ বিচার না করেই নিম্নোল্লিখিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য আমি পেট্রোবাংলা পরিকল্পনা ডিভিশন এবং জ্বালানি বিভাগকে দায়ী করবো। অধস্তন কোম্পানি হিসেবে জিটিসিএল আদেশ পালনকালে আদৌ বিস্তারিত বিষয়গুলো তুলে ধরেছে কি না জানি না। গ্যাস উৎপাদন ক্রমাগত কমেছে ২০০৬ থেকে। কিন্তু তারপরও কোন নিশ্চয়তায় গ্যাস সঞ্চালন নেটওয়ার্ক বগুড়া থেকে দিনাজপুর হয়ে রংপুর সম্প্রসারিত হয়েছে? জিটিসিএল এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় মুচাই, আশুগঞ্জ, এলেঙ্গায় তিনটি কমপ্রেশার স্টেশন বাস্তবায়ন করা অবস্থায় শেভরনকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্য মুচাই কমপ্রেশার স্টেশন বাস্তবায়ন করা হয় ওদের বিনিয়োগে। একই সঙ্গে বিবিয়ানা-ধানুয়া ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপলাইন নির্মাণ করা হয় তড়িঘড়ি করে। ফলশ্রুতিতে আশুগঞ্জ কমপ্রেশার স্টেশন পূর্ণ ক্ষমতায় কখনো পরিচালিত হয়নি। এলেঙ্গা কমপ্রেশার স্টেশন অলস পড়ে আছে। এখনো ঠিকাদার মারফত চলছে কমপ্রেশার স্টেশন। সিলেট এলাকার গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর উৎপাদন কমতে থাকা সত্ত্বেও কোন বিবেচনায় আশুগঞ্জ বাখরাবাদ লুপ লাইন নির্মাণ করা হলো তড়িঘড়ি করে। এই পাইপলাইন ডিজাইন ভুল করে পিগ রিসিভার স্থাপিত হয়েছে পাইপলাইন শেষপ্রান্ত থেকে ২ কিলোমিটার উজানে। সঙ্গত কারণেই পাইপলাইন কমিশন করার আগে পরিষ্কার হয়নি ঠিক মতো। ডাউনস্ট্রাম পাইপলাইন সম্ভবত স্যান্ড ব্লাস্টিং হওয়ায় ব্ল্যাক পাউডার পাওয়া  যাচ্ছে।

সেক্টর পরিকল্পনায় দূরদর্শিতা না থাকায় অল্প সময়ের ব্যবধানে মহেশখালী থেকে আনোয়ারা ৩০ ইঞ্চি এবং ৪২ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ২০৩০-এর মধ্যে অতিরিক্ত এফএস আরইউ এবং ল্যান্ড বেজড এলএনজি টার্মিনালের আর এলএনজি সঞ্চালনের জন্য আরো একটি পাইপলাইন নির্মাণ করা হবে। আনোয়ারা এবং সলিমপুর সিটিগেট স্টেশন নির্মাণের পর ৩৩০ এমএমসিএফডি ফৌজদারহাট সিজিএস অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। এটি কীভাবে বিকল্প ব্যবহার করা যায় বিবেচনা করা উচিত।

প্রায় একদশক হতে চলেছে গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন কুষ্টিয়া যশোর হয়ে খুলনা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়েছে। সীমিত আকারে হলেও গ্যাস সরবরাহ করা হয়নি। এমনকি রাজশাহী এবং বগুড়ায় গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে খুব সীমিত। অজুহাত গ্যাস স্বল্পতা। কিন্তু তারপরও বিপুল খরচে বগুড়া থেকে দিনাজপুর হয়ে রংপুর পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ কি বিলাসিতা নয়? তবে জরুরি ছিল মেঘনাঘাটে নির্মাণাধীন তিনটি বড় গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ কারখানার জন্য ৪২ ইঞ্চি পাইপলাইন জরুরিভিত্তিতে নির্মাণ। সেটি এখন অনেক পিছিয়ে আছে. অথচ অচিরেই তিনটি আধুনিক প্রযুক্তির পাইপলাইন চালু হওয়ার কথা। 

সঞ্চালন ব্যবস্থার সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও মাওনা, আশুলিয়া এলাকায় শিল্পকারখানাগুলোর গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতি নাজুক। অথচ ধনুয়ায় জিটিসিএলের একটি ১৫০ এমএমসিএফডি ক্ষমতার অত্যাধুনিক ডিআরএস অলস পড়ে আছে। পেট্রোবাংলার উচিত তিতাস গ্যাস এবং জিটিসিএল সমন্বয় করে স্টেশনটি অবিলম্বে চালু করা। 

মোদ্দাকথা, বিগত ১৫ বছর মাত্রাতিরিক্ত বিনিয়োগ জিটিসিএল আর্থিক বুনিয়াদ কীভাবে বিপর্যস্ত করেছে সেটি নিবিড়ভাবে বিবেচনায় না এনে আর কোনো অবিবেচনাপ্রসূত বিনিয়োগ জিটিসিএলের ওপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত হবে না। আর যদি করতেই হয় সেটি সম্পূর্ণভাবে অনুদান দিতে হবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগের ভিত্তিতে জিটিসিএলকে হুইলিং চার্জ বরাদ্দ করতে হবে। 

নিম্নবর্ণিত কাজগুলো অবিলম্বে সম্পাদনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে- 

এলেঙ্গা কমপ্রেশার স্টেশন, ধনুয়া ডিআরএস চালু করা। ফৌজদারহাট সিজিএস বিকল্প ব্যবহার। আশুগঞ্জ-বাখরাবাদ লুপ লাইনের পিগ রিসিভার যথাস্থানে স্থাপন। কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা এলাকায় বিসিক শিল্পাঞ্চলে সীমিত গ্যাস সরবরাহ চালু করা। জিটিসিএলের হুইলিং চার্জ সমন্বয়।

শেয়ার করুন