২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:১৬:৩৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে নানা গুঞ্জন
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-১১-২০২৩
বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠে নানা গুঞ্জন


বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করার প্রবণতা হঠাৎ হ্রাস পেয়েছে। কদিন আগেও মনে হচ্ছিল শীর্ষ নেতৃত্বের যে যেখানেই আত্মগোপন করে থাকুক না কেন, আইনশৃংখলাবাহিনী  ট্রাকিং করে তাদের বের করে আনবেন এবং গ্রেফতার করবেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দও উপহাস করে বলছিলেন, ‘এক ফখরুল (কারাগারে) ছাড়া আর সবাই পালিয়েছে। গর্তে লুকিয়েছে। বিএনপিকে আর বের হতে দিতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের পূর্বে’- এ জাতীয় কথাবার্তা। কিন্তু এ প্রক্রিয়া হঠাৎ থেমে গেছে অজ্ঞাত কারণে। এর সর্বশেষ শিকার স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুজ্জামান দুদু।  গত ৬ নভেম্বর একটি বাসা থেকে তাকে তুলে নেয় আইনশৃংখলাবাহিনী। এরপর আর কারোরই গ্রেফতারের খবর নেই। এমনি কোনো শীর্ষ নেতার বাসায় খোঁজ নিতে গেছে আইনশৃংখলাবাহিনী সেটারও যতদূর সম্ভব সংবাদ পাওয়া যায়নি। 

উপরন্তু  ৭ নভেম্বর দেখা যায় এর ঠিক উল্টা। বিএনপির তিন শীর্ষ নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যৈষ্ঠ আইনজীবী হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। আগাম জামিন পাওয়া তিন নেতা হলেন-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব এএম মাহবুবউদ্দিন খোকন। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন সহিংসতার ঘটনায় রমনা থানায় দায়ের হওয়া নাশকতার পৃথক দুই মামলা। এতে তাদেরকে আগাম জামিন দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে চার সপ্তাহ শেষে মহানগর দায়রা আদালতে তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

এখন প্রশ্ন উঠেছে, যদি শুধুই আইনজীবী হিসেবে বিএনপির এ তিন নেতা আগাম জামিন পেয়েই যান, তাহলে বিএনপির আরেক শীর্ষ নেতা বীরমুক্তিযোদ্ধা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীরউত্তমকে কেন আটক করে নেয়া হলো। এবং তাকে রিমান্ডে পর্যন্ত নেয়া হলো। গত ৫ নভেম্বর শাহজাহান ওমরকে গ্রেফতার করে আইনশৃংখলাবাহিনী। এ প্রশ্নটা ওঠাই স্বাভাবিক। তবে খবরে পিঠে খবর। রাজধানী ঢাকার আকাশে নানা গুঞ্জন এখন ভেসে বেড়াচ্ছে। একেক সময় একেক কথা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবাদে মানুষ জানতে পারছে। কিছু সত্য বলেই প্রতীয়মান হয় আবার কিছু গুজব। তবে কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা এগুলো ঠাহর করা মুশকিল।

এরমধ্যেও কিছু বিষয় যা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে আসছে সেগুলোও প্রধান্য পাচ্ছে। বিশেষ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সম্প্রতি কিছু স্থানে যাওয়া ও বৈঠক করার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে। এর মধ্যে পিটার হাস পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে প্রায় দুই ঘন্টার মত বৈঠক করেছেন। সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং সর্বশেষ তথ্যঅনুসারে বৈঠক করেছেন সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে। এর কোনোটিরই বৈঠক এজেন্ডা জানা না গেলেও পর্দার আড়ালে কী হচ্ছে এ নিয়ে অনেক গুঞ্জন। 

বৈঠক হয়েছে তিন গোয়েন্দা সংস্থা প্রধানের সঙ্গেও। আগামী ৯ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সিইসির বৈঠক করার কথা। এরপর যাবেন তিনি নির্বাচনি তফসিলে। ভোটের আপাতত দিনক্ষণ জানুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহ। এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশসমূহ একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছেন- সেখানে বিএনপির মত শক্তিশালী একটি রাজনৈতিক দলকে বাইরে রেখে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সিইসির পক্ষে সম্ভবপর কিনা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যদি চায়ও সেটা কী বিদেশী বন্ধুপ্রতীম দেশসমূহের দীর্ঘদিনের ডিমান্ড উপেক্ষার সুযোগ আছে কি-না এ নিয়ে চলছে জল্পনা কল্পনা। 

তবে এটা দিবালোকের মতই সত্য যে- ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে ভয়াবহতার পর ২৯ অক্টোবর সকালেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দল জানান দিচ্ছিল হার্ড লাইনে যাচ্ছে তারা। এমন একটা পরিস্থিতির জন্য বিএনপি মোটেও প্রস্তুত ছিলনা এটা বিভিন্ন  রাজনৈতিক বিশ্লেষণে বেড়িয়ে এলেও ২৮ অক্টোবরে সমাবেশে যাতে অংশ নিতে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপির নেতাকর্মী না আসতে পারে সে ব্যাপারে আইনশৃংখলাবাহিনীর হুমকি ধমকি ছিল। বহু নেতা জানিয়েছেন, তাদের বাড়ি ঘেরাও করে মহাসমাবেশে না যাওয়ার সতর্কতা দিয়ে যেতে। ধারণা করা হয় এসকল ঘটনাদি মিডিয়ায় চলে আসার পর থেকেই সোচ্চার ছিলেন বিদেশী রাষ্ট্রদূতগণ। যে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে কিছু একটা ঘটলে ঘটতেও পারে। তাদের বিভিন্ন খবরাদি নেয়ার মাধ্যমও সজাগ ছিল বলে, ২৯ অক্টোবর ২৮ অক্টোবরের ঘটনা অবহিত করতে গিয়ে ক্ষমতাসীনরা টের পেলেন যে বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের সকলেই কিছুটা উদাসীন। সব শুনেছেন, কিন্তু নিজ জায়গায় ঠাঁয় বসে থেকে। এমনকি প্রশ্ন বা জানার কিছু থাকলে প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়ার পর এক এক করে সবাই চুপচাপ উঠে সমাবেশস্থল ত্যাগ করে যে যার গাড়িতে উঠে চলে যান। এমন ঘটনায় ব্রিফিংয়ের আয়োজকদের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত করে ফেলে। 

আইনশৃংখলাবাহিনী তাদের কার্যক্রম পুরাদমে চালিয়ে বিএনপির শীর্ষ প্রায় ১২ জন নেতাকে বিভিন্নস্থান থেকে বহু খোঁজাখোঁজি করে গ্রেফতার করেন। এরমধ্যে কাউকে টঙ্গী থেকে, কাউকে ক্যান্টমেন্ট থেকে। কাউকে নিজ বাসায় না পেয়ে ওৎ পেতে নানা পদ্ধতি অবলম্বন করে স্থান ট্রাকিং করে গ্রেফতার করে আদালতে তুলে ৪ থেকে ৬ কাউকে আট দিনও রিমান্ডে নেয়া হয়। সরকার যে কঠোর অবস্থানে এবং বিএনপির কথিত সন্ত্রাসীকর্মকান্ডের জন্য দমনপীড়নে সেটাও ক্ষমতাসীনদের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বার বার বলতে থাকেন। 

এক সময় মনে হচ্ছিল বিএনপির এ টু জেট শীর্ষ নেতাদেরই গ্রেফতার করা হবে। কিন্তু বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী একের পর এক অবরোধ কর্মসূচি প্রদান ও রাস্তায় নেমে মিছিল করছে, অবস্থান করার পরও তাকে আটক না করা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়। 

বিএনপি তিন শীর্ষ নেতার আগাম জামিন প্রসঙ্গ 

বিএনপির তিন নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের জৈষ্ঠ আইনজীবী হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পেয়েছেন তারা হলেন-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব এএম মাহবুবউদ্দিন খোকন।

২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের দিন সহিংসতার ঘটনায় রমনা থানায় দায়ের হওয়া নাশকতার পৃথক দুই মামলায় তাদেরকে আগাম জামিন দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে চার সপ্তাহ শেষে মহানগর দায়রা আদালতে তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার হাইকোর্টের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. বশির উল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আইনজীবী হিসেবে ব্যক্তিগত সুনামের দিক বিবেচনায় নিয়ে আগামী তিন সপ্তাহের জন্য তাদের জামিন দেওয়া হয়। তবে এ জামিনের আদেশ অন্য আসামিদের আগাম জামিনের ক্ষেত্রে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না বলেও আদেশে উল্লেখ করেন উচ্চ আদালত। এ সময় হাইকোর্ট বলেন, প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা বিচার বিভাগের হৃদপিণ্ডে আঘাত। যা জাতির কাছে ভালো বার্তা দেয় না। আদালতকে নিরাপদ রাখতে এই প্রাঙ্গণের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অনুরোধ জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে বিএনপির ডাকা মহাসমাবেশের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার অভিযোগে রমনা থানার পুলিশ পরিদর্শক মফিজুর রহমান মামলাটি করেন। এই মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গত ২৯ অক্টোবর কারাগারে পাঠানো হয়। মামলায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ ৫৯ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। 

মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা বেলা ১টার সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুর চালান। আর সেই একই মামলায় আগাম জামিন ওই তিন নেতার এ জন্যই চাঞ্চল্যের সৃষ্টি। প্রশ্ন উঠছে তাহলে ক্ষমতাসীনরা কী কিছুটা নমনীয় হয়েছে দেশে চলমান টানা অবরোধ, হরতাল কর্মসূচি সফলভাবে পালন হওয়া ও বিদেশী বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার একের পর এক ক্ষমতাসীনদের দায়ি করে বিবৃতিতে হার্ড লাইন থেকে কী সরে গেলেন তারা?

শেয়ার করুন