৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ৬:৪৩:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
যুক্তরাষ্ট্রে এবার বন্দুকধারীর গুলিতে তিন আইনশৃংলাবাহিনীর সদস্য নিহত ‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ


ভূরাজনীতির চারণ ভূমি হওয়ার শঙ্কায় বাংলাদেশ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৬-২০২৩
ভূরাজনীতির চারণ ভূমি হওয়ার শঙ্কায় বাংলাদেশ


গত এক দশকের বেশি সময় ধরে উন্নয়নের তুঙ্গে থাকা বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার উন্নয়ন হাবে পরিণত হয়েছে। বিশেষত ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে অর্থনৈতিক প্রভাব বলয় সৃষ্টির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বের মিত্র শক্তি এবং চীন রাশিয়ার বলয়ের দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশ এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নিকট প্রতিবেশী ভারতের প্রচ্ছন্ন প্রভাব আছে নানা ক্ষেত্রেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তুখোড় রাজনৈতিক কৌশলেই চীন, রাশিয়া, জাপান, কোরিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান দেশগুলো এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়ক করে রেখেছেন। বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে উপলক্ষ করে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলো নতুন করে নানা কৌশল অবলম্বন করছে। ভারত নীরব থাকলেও সম্প্রতি চীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে পশ্চিমা শক্তির নাক গলানো বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকে সমর্থন দিয়েছে। বলাবাহুল্য, প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নয়া ভিসানীতি ঘোষণা বিষয়ে প্রকাশ্যে একাধিক বার শক্তভাবে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। বুঝতে অসুবিধা নয় যুক্তরাষ্ট্র ভূমধ্যসাগরসহ দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের প্রভাব বিস্তার মোকাবিলায় আঞ্চলিক দেশগুলোকে নিজেদের বলয়ে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। ইতিমধ্যেই আকারে ইঙ্গিতে  চার জাতি কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করতে চাপ দিয়েছে।

ভারতের পরিবর্তে জাপানকে দিয়ে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব বলয় বাড়াতে চায়। যুক্তরাষ্ট্র আরো জানে বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু রাশিয়াও নানাভাবে বাংলাদেশে জড়িত। বাংলাদেশ আবার অচিরে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা সমন্বয়ে গঠিত ব্রিকস অর্থনৈতিক গ্রুপে যোগদানের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এখন সমস্যা হলো উন্নয়নশীল অর্থনীতির বাংলাদেশকে সব বিদেশি শক্তির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ভারসাম্যমূলক অবস্থান নিতে হবে। কোনোভাবেই বাংলাদেশ নিজেদের ভূরাজনীতির চারণভূমি থেকে দিতে পারে না। 

স্মরণে রাখতে হবে ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছিল ভারত এবং রাশিয়া। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর জনগণ, মিডিয়া বাংলাদেশের পক্ষে থাকলেও সেই দেশগুলোর সরকার এবং চীন কিন্তু পাকিস্তানি সেনা শাসকদের পক্ষে ছিল। আজ ৫২ বছর পর বিশ্ব পরাশক্তিগুলোর দুই বলয়ে বিভক্ত। শান্তি প্রিয় বাংলাদেশ দুই পক্ষের সঙ্গেই সমান্তরাল সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে এবং রেখেছে এযাবৎ। বাংলাদেশ যুদ্ধ জয়ী দেশ এবং দেশের স্বাধীনতা কারো দয়ার দান নয়। দেশের উন্নয়নে কৃষক, শ্রমিক আপামর জনসাধারণের বিশাল ভূমিকা আছে। এই দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করবে দেশের জনগণ। নির্বাচন কীভাবে হবে সেটি নিজেদের মধ্যে বিতর্ক, আলোচনা করে নির্ধারণ করবে দেশের জনসাধারণ। এই বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের পরামর্শ থাকতে পারে কিন্তু জোর জবরদস্তির কোনো সুযোগ নেই। 

আমি বলছি না বর্তমান সরকার সবকিছুই বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে করছে। কিন্তু সরকার বারবার অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করছে। সব বিদেশি রাষ্ট্রের সরকারের এই অঙ্গীকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সৎ পরামর্শ দেওয়া উচিত। তবে বিশ্ব পরিস্থিতির কারণে অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত। বাংলাদেশ অন্যান্য অনেক দেশের মতোই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি সংকট এবং মুদ্রাস্ফীতি সামাল দিতে ব্যতিব্যস্ত। এই মুহূর্তে সরকার প্রধানসহ মন্ত্রী, সাংসদদের কথনে আরেকটু কৌঁসুলি হওয়ার প্রয়োজন আছে। সব কৌশলের কথা সব সময় মুখ ফুটে না বলা মঙ্গল। আবারও বলছি এই সংকট সময়ে বাংলাদেশ কোনোভাবেই দেশকে ভূরাজনীতির চারণভূমি হতে দিতে পারে না। বাংলাদেশ কিন্তু আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বন্ধুহীন নয়-এই কথাটিও সব বিদেশি শক্তির স্মরণ রাখতে হবে।

শেয়ার করুন