২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৬:৫৫:৫৩ পূর্বাহ্ন


মন্ত্রীদের অপপ্রচার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল
খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৫-২০২৩
খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে হাসপাতালে খালেদা জিয়া


খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে মন্ত্রীদের ‘অপপ্রচার’ ফের কারাগারে নেয়ার ষড়যন্ত্র বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ২ মে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ‘খালেদা জিয়ার অসুস্থতা সরকারের মন্ত্রী-নেতাদের নানারকম বক্তব্যে‘র প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ। আজকে না বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। আপনারা জানেন একবার তাকে চার মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছে এবং তখনও আপনাদেরকে বার বার করে বলেছি যে, তিনি খুব জটিল কিছু রোগে ভোগছেন। তার মধ্যে আছে লিভার সংক্রান্ত জটিলতায় আছে, হৃদরোগের সংক্রান্ত জটিলতা আছে, তার ডায়বেটিক জটিলতা আছে এই বিষয়গুলো সবাই জানেন। এর পরেও যদি তারা এই সমস্ত কথা-বার্তা বলে, অপপ্রচার করে, এই কথা বলার অর্থই হচ্ছে তারা আবারো কোনো গভীর চক্রান্ত চলছে। যে চক্রান্তের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে তারা আবার কারাগারে নিতে পারে কিনা, পরিকল্পনা-চক্রান্ত করছে কিনা সেটা আমাদেরকে চিন্তা করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা বার বার করে বলেছি যে, তার চিকিৎসা পাওয়া একটা মৌলিক অধিকার। এজন্য ডাক্তারা বলেছেন, তার মেডিকেল বোর্ড বলেছেন যে, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে বিদেশে পাঠানো দরকার। বাংলাদেশে তার সেই উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার সে বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি। উপরন্তু এই ধরনের (অপপ্রচার) কথা বার্তা বলে অমানবিক আচরণ করছেন তারা আমাদের দেশনেত্রীর সঙ্গে এবং জনগনের সঙ্গে একটা তামাশা করছেন।

৭৭ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভারসহ নানা রোগে ভোগছেন। অসুস্থতার মধ্যে গুলশানে ‘ফিরোজা‘য় চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তার চিকিৎসা চলছিল। গত ২০ এপ্রিল তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শক্রমে এভারকেয়ারে ভর্তি হন বিএনপি চেয়ারপারসন।

গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। গত ১ মে সোমবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহিত সিদ্ধান্তসমূহ এই সংবাদ সম্মেলনে জানান বিএনপি মহাসচিব।

‘অত্যবশ্যকীয় পরিসেবা বিল: জনগনের স্বার্থবিরোধী’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে গত  মে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এটি নানা কারণে বিতর্কিত, অগণতান্ত্রিক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের স্বার্থ বিরোধী, একতরফা, নিযার্তনমূলক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট বরখেলাপ। এই আইনটি প্রণয়নে কোনো পর্যায়ই অংশীজনের মতামত নেয়া হয়নি। বিএনপি মনে করে, প্রস্তাবিত বিলটি শুধু শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ ও অধিকারকেই ক্ষুণ্ণ করবে না, এটি সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং জনগনের সংবিধান সম্মত প্রতিবাদের অধিকার পরিপন্থি। বিএনপি প্রস্তাবিত অত্যাবশ্যকীয় পরিসেবা বিল-২০২৩ প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, প্রস্তাবিত আইনের পরিধি শুধু বিস্তৃত নয়, অসীম। সরকার ইচ্ছা করলেই যেকোনো শিল্প, প্রতিষ্ঠা, পেশা ও সেবাকে এই আইনের আওতায় এনে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করে তা অমান্য করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বানাতে পারবে। এই প্রস্তাবিত আইনকে প্রচলিত শ্রম আইনের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে যুগ যুগ ধরে আন্দোলন করে শ্রমজীবী জনগণ যা কিছু অধিকার অর্জন করেছিলো তা এই আইন দিয়ে নাকচ করে দেয়া হবে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে আইএলও কনভেনশন নং ৮৭ ও ৯৮ অনুসমর্থন করেছে। যেখানে ধর্মঘটের অধিকারকে সংগঠিত হওয়ার অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত বিলে দেশের বিপুল সংখ্যক শিল্প, প্রতিষ্ঠান ও সেবা খাতকে ‘অত্যাবশ্যক পরিসেবা’ চিহ্নিত করে শ্রমজীবী মানুষের ধর্মঘটের অধিকার কেড়ে নেওয়ার অর্থ হলো তাদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার কেড়ে নেয়া।”

‘সকলেই প্রতিবাদ করছে’

স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রবীণ শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খান বলেন, শুধু শ্রমজীবী নয়, পেশাজীবীরা প্রস্তাবিত আইনটির প্রতিবাদ করছে। আমাদের ডাক্তার ও নার্সরাও প্রতিবাদ জানিয়েছে, তারা এ নিয়ে বিক্ষোভ করেছে, তারা বলেছে এটা বাতিল না করা হয় তারাও আন্দোলনে নামবে। আমাদের দেশের শ্রমিকদের ফেডারেশন স্কপ প্রতিবাদ করেছে। ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ চাপ্টার এর প্রতিবাদ করেছে, ‘ইন্ডাস্ট্রি অল’ যে আন্তর্জাতিক সংগঠন তার বাংলাদেশ চাপ্টার এর প্রতিবাদ করেছে। সবাই এর প্রতিবাদ করছে। এটা অনেক বড় একটা ঘটনা যে, বিএনপির মতো দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আজকে শ্রমজীবী মানুষ-পেশাজীবী মানুষ যারা এফেক্টেড হবে.. আল্টেমেটলি দেশের সাধারণ মানুষ এফেক্টেড হবে তাদের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার লঙ্খিত হবে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মাধ্যমে যেমন একটা ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হয়েছে তেমনি এই প্রস্তাবিত আইনের মাধ্যমে আরেকটা বৃহত্তর পরিসরে ভয়ের সংস্কৃতি সৃষ্টি করা হবে। ধর্মঘট করার অধিকারটা খুব বেসিক ট্রেড ইউনিয়ন রাইট। ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডিশন অব হিউম্যান রাইটসে বলা হয়েছে যে, ট্রেড ইউনিয়ন রাইট ইজ এ হিউম্যান রাইট। এখন ধর্মঘট করতে পারবে যদি এরকম একটা ব্যবস্থা করা হয় কোনোভাবে আরকি। তার মানে আসলে ট্রেড ইউনিয়নই করতে পারবেন না। এই অধিকার কেড়ে নেয়ার মানে হলো আপনার মূল অধিকার কেড়ে নেয়া। যার ফলে আপনার ওপরে নিপীড়ন-নির্যাতনের সুযোগ অবারিত হয়ে যাবে।

নজরুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকরাও শ্রমিক। বাংলাদেশের সাংবাদিকদের মধ্যে অনেক প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা ছিলেন। এর মধ্যে আমার একজন ওস্তাদও আছে প্রয়াত সিরাজুল হোসেন খান, প্রয়াত নির্মল সেন- যারা জাতীয় শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আপনাদের সাংবাদিকদের যে ট্রেড ইউনিয়ন আছে সেটা রেজিস্টার্ড। আপনাদের ওপর নানা চাপ আছে। হয়ত পারছেন না কিছু করতে। কিন্তু ট্রেড ইউনিয়নে আপনারাও অংশীদার। যে আইন যেটা করা হচ্ছে, এই আইনে সাংবাদিকরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এই কারণে যে, আইনে বলা হয়েছে যে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেনো এই আইনের বিধানবলী প্রাধান্য পাবে। অর্থাৎ প্রচলিত অন্য কোনো আইনে প্রটেকশন পেয়েও থাকেন এই আইন হয়ে যাওয়ার পরে আর সেটা থাকবে না।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন