২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৫:৪৩:১৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


দেশকে অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী
আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি অনেক ভালো
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৬-২০২৩
আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি অনেক ভালো অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী


গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ও সুপ্রীম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী বলেছেন, আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি এখন অনেক ভালো। আওয়ামী লীগ দলটি এতো পচে গেছে যে কয়েকদিন পর এই আওয়ামী লীগ গালি হিসাবে ব্যবহার করবে। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে গণফোরামের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী একথা বলেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশ পত্রিকার বিশেষ প্রতিবেদক সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ। 

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীর ১৯৪৯ সালে ৩১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আইনজীবী পার্শ্বনাথ চৌধুরী। মাতার নাম লীলাবতী চৌধুরী। তার পিতামহ রসিক চন্দ্র চৌধুরী ছিলেন জমিদার ও প্রখ্যাত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭১ তিনি অনার্স পাস করেন। একিই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এম এস সি করেন ১৯৭৩ সালে। এর পর  এল এল বি পাস করেন ১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ছাত্র জীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐতিহাসিক ১১ দফা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। এবং  ১৯৭১ সনে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তিনি। অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী ১৯৭৯ ঢাকা জজ কোর্ট থেকেই আইন পেশা শুরু করেন। তিনি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের সাবেক নির্বাহী সভাপতি, এবং জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট। কেন্দ্রীয় স্ট্রিয়ারিং কমিটির সদস্যও ছিলেন। 

দেশ: দেশের সার্বিক অবস্থা কেমন বলে মনে করেন? বিশেষ করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি।

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী: আমার দৃষ্টিতেতো বলা যায় বাংলাদেশ একটি ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা আশা করেছিলাম যে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ অনেক ভালো কিছু করবে। এই আওয়ামী লীগ ২১ বছর পরে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে নির্বাচনের মাধ্যমে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে কিন্তু সেসময়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব অনেক প্রশংসনীয় কাজ করেছিলো। এবং বিভিন্ন ভালো কাজের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল তাদের সরকারের আমলে। এর জন্য তাদেরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাই। দুর্ভাগ্য হচ্ছে ২০০৮ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসার পরে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতা ধরে আছে। এখন দেখেন এই আওয়ামী লীগ দেশটাকে কোন পর্যায়ে নিয়ে গেছে? এই আওয়ামী লীগ এবারে ক্ষামতা এসে সর্বগ্রাসী একটা অচলায়ন তৈরি করে ফেলেছে তারা। আমরা যদি সুশাসনের বিষয়টা দেখি সেখানে দেখবো এই সরকার সরাসরি ব্যর্থ হয়েছে। স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে খর্ব করেছে। এবং প্রশাসনের আমলাদের নিয়ে যেভাবে দলবাজি করেছে তাতে বলা চলে এটাকে ( প্রশাসনকে) তারা  ভেঙ্গে দিয়েছে। নিজেদের মতো করে পদ-পদায়ন করা হয়েছে প্রশাসনে। প্রশাসনকে তারা নষ্ট করে দিয়েছে। এর পাশাপাশি আইন শৃংখলা বাহিনীকে এমনভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে যেনো মনে হচ্ছে তারা আওয়ামী লীগের একটা পেটোয়া বাহিনী। এখানে যে সংবিধান আছে, মানবাধিকার কিংবা মৌলিক অধিকার, কথা বলার অধিকার, সাংবাদিক ভাইদের অধিকার, এ সবের গুরুত্ব নেই তাদের কাছে। স্বাধীনভাবে সাংবাদিকদের লেখনীর স্বাধীনতার জায়গাটা সামগ্রিকভাবে ছোটো করতে করতে ক্ষুদ্রতর পরিবেশ নিয়ে এসেছে। এর পাশাপাশি আমরা যে একটা সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা আশা করেছিলাম তা-ও নেই। এব্যাপারে  একটি সুস্থ পদক্ষেপের সুযোগ ছিল আওয়ামী লীগের, কিন্তু তারা তা করেনি। অথচ এসব ভালো পদক্ষেপেই মাধ্যমেও তারা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকতে পারতো- জনগণের আস্থাও অর্জন করতো। কিন্তু তারা না করে দলীয় দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে সব কিছু সাজিয়েছে। এর পাশাপাশি অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একটা মহাসঙ্কট দেখা দিচ্ছে। বিদ্যুৎ খাতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব আমাদের অনেক আশ্বান্বিত করেছিল। তারা হাজার হাজার টাকা খরচ করে বিভিন্ন ধরনের উৎসব করেও এর জানান দিয়েছিল বিদ্যুতের ব্যাপারে। কিন্তু দিন শেষে এখন মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ জাতির সাথে প্রতারণা করেছে। 

দেশ: দেশের এমন পরিস্থিতি কি আগে দেখেননি? জাতীয় পার্টি বা এর পরে বিএনপি আমলে কি এটা দেখেননি?

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী: না না না, একদমই না। বিএনপি কিছুটা খারাপ করেছিলো খাম্বা বসিয়েছিল। কিন্তু বিদ্যুৎ দিতে পারেনি। আমরা বিএনপি’কে জোর করে ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য বিশাল বিশাল আন্দোলন করেছি। আওয়ামী লীগ সেসব আন্দোলনে আমাদের সাথে ছিল। কাধে কাধ মিলিয়ে আওয়ামী লীগ আমাদের সাথে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে। আমাদের সে আন্দোলনে জনগণের কাছে আওয়ামী লীগের অনেক কমিটমেন্ট ছিল। ভবিষ্যতে যদি ক্ষমতায় যাওয়া হয় তাহলে বিএনপি’র চেয়ে আরো অনেক সুন্দরভাবে দেশ পরিচালনা করা হবে। বিএনপি’র বিরুদ্ধে সে আন্দোলনে আমরা জনগণকে আওয়ামী লীগকে সাথে নিয়ে আশ্বস্থ করেছিলাম যে একটি ভালো একটা মানবধর্মী রাষ্ট্র গড়ে তুলবো। সেসময়ে আওয়ামী লীগ উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেখিয়েছিল বা এখন যেভাবে দেশবাসীকে আশ্বস্থ করার চেষ্টা করছে তা-তো প্রকৃত সত্য না। এগুলা কতগুলা ইট-পাথর-লোহা লক্করের উন্নয়ন। মানুষের যে মানবিক উন্নয়ন প্রয়োজন সেটাকে শূণ্যের কোটা এনে পৌঁছেছে। 

দেশ: তাহলে কি বলতে চান সেসময়ে বিএনপি’র বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে ভবিষ্যতে একটি সুন্দর গণতান্ত্রিক দেশ পাওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে পাওয়া আশ্বাসের কোনো কিছু আর বাস্তবে দেখছেন না? এতে করে কি মনে করেন আপনারা আওয়ামী লীগ থেকে প্রতারিত হয়েছেন?

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী: একদম, সম্পূর্ণ প্রতারিত হয়েছি। বিএনপি’র বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ জনগণের সাথে করা বিভিন্ন অঙ্গীকার মনে হয় এখন পর্যন্ত খুলেও দেখেনি। সেসময়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের দিন বদলের অঙ্গীকার ছিল দেশবাসীর কাছে। কিন্তু  সেখান থেকে তারা যোজন যোজন দূরে চলে গেছে। এখন তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে যেনতেনভাবে ক্ষমতায় থাকা। আর আওয়ামী লীগ সভানেত্রীকেই প্রধানমন্ত্রীত্বে রাখা। এবং প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়েও বলেছেন যে তিনি আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চান। এবং কন্টিনিউ করতে চান। 

দেশ: কিন্তু এখন যে দলটির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে নামছেন তারা কি ভালো? বিএনপি কি আওয়ামী লীগর চেয়ে আরো ভালো কিছু করবে? 

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী: ভালো, জোর গলায়।

দেশ: আওয়ামী লীগের চেয়ে ভালো বলে আশা করছেন? আবার কি প্রতারিত হবে না।

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী: আরে না, আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি এখন অনেক ভালো। আওয়ামী লীগ দলটি এতো পচে গেছে যে কয়েকদিন পর এই আওয়ামী লীগ গালি হিসাবে ব্যবহার করবে। বলবে তুই আওয়ামী লীগ, তুই চোর, তুই ডাকাত, প্রতারক- তুই প্রবঞ্চক। এসব গালি আওয়ামী লীগকে দেবে। 

দেশ: ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি’ অনেক ভালোভাবে গণতান্ত্রিক ভাবে দেশ চালাবে? 

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী: অনেক ভালো করবে (জোর দিয়ে)

দেশ: বিএনপি যে ক্ষমতায় গিয়ে আপনাদের কাছে এখন দেয়া প্রতিজ্ঞা বা প্রতিশ্রুতি ভবিষ্যতে রাখবে তার গ্যারান্টি কি?

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী : আমরা যদি সাথে থাকতে পারি। যদি ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ পাই। তাহলে তা গ্যারান্টি দিতে পারি বিএনপি দেশ ভালোই চালাবে। রাষ্ট্র সংস্কার বা মেরামতের যে কথাটা আমরা জনগণের কাছে বলে যাচ্ছি- তার বাস্তবায়ন আমরা করতে পারবো। এব্যাপারে আমাদের কনফিডেন্ট আছে। অন্তত রাষ্ট্রটাকে এপর্যায়ে যেতে আর দেয়া যাবে না। ভালো রাষ্ট্র গড়বো বলেই আমরা সেসময়ে বিশাল আন্দোলন করে বিএনপি’কে ক্ষমতা থেকে নামিয়েছিলাম। এখন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে না সরালে এ দেশের জনগণের আর ভবিষ্যত নেই, মুক্তিতো অনেক দূরের কথা। 

দেশ: আপনি কি মনে করেন গত পনের বছর ধরে একটি দল ক্ষমতায় আছে তাকে আপনারা চট করে সরিয়ে দেবেন? সে ধরনের আন্দোলন সংগ্রামের কোনো লক্ষণ কি রাজনৈতিক মাঠে আছে?

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী : এসরকার তো সবকিছুকে নিজেদের কর্তত্ববাদি ক্ষমতায় কুক্ষিগত করে ফেলেছে। এরা তো ফ্যাসিস্ট সরকার। একটা সরকার যখন ফ্যাসিস্ট হয়ে যায় তখনতো তাকে গণজাগরণ ছাড়া সরানোর আর কোনো উপায় থাকে না। আর উনিতো বুঝতে পারছে না উনার কি ভয়াবহ পরিণত হবে-এটাই দুর্ভাগ্য। 

দেশ: সেই ধরনের গণজাগরণ কি তৈরি করতে পারবেন? 

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী : অলরেডি শুরু হয়ে গেছে। শুধু একটু সংগঠিত করে রাস্তায় নামা আর কি। মানুষ খুবই সংক্ষুদ্ধ। সব ব্যপারেই। এমন কোনো প্লাস পয়েন্ট দেয়া যাবে না যে আওয়ামী লীগ আর এক বার ক্ষমতায় থাকুক। কে আরা কোনো সুযোগ দেয়া যাবেই না। 

দেশ: আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী : আপনাকে ও আপনাদেরকে।

শেয়ার করুন