০৫ মে ২০১২, রবিবার, ০৩:৫০:১৮ পূর্বাহ্ন


সীমান্তে সেনা মোতায়েন
বিধিনিষেধ উঠছে, মার্কিন সীমান্তে অভিবাসীদের কী হবে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৫-২০২৩
বিধিনিষেধ উঠছে, মার্কিন সীমান্তে অভিবাসীদের কী হবে সন্তানসহ অভিবাসন-প্রত্যাশী মা মার্কিন সীমান্ত পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের অপেক্ষা করছেন, ১১ মে তোলা ছবি


করোনা মহামারির সময় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী প্রবেশে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তার সময়সীমা শেষ হয়েছে গত ১১ মে রাতে। তবে নতুন নিয়মের বেড়াজালে মেক্সিকো সীমান্তে অবস্থান করা অভিবাসন-প্রত্যাশীরা অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। আটকে আছেন সীমান্তসংলগ্ন এলাকায়। এসব অভিবাসন-প্রত্যাশীদের বেশির ভাগ উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। এশিয়ার বিভিন্ন দেশেরও কিছু অভিবাসন-প্রত্যাশী রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর যাতে মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসন-প্রত্যাশীদের ঢেউ মোকাবিলায় সেনা মোতায়েন করেছে ওয়াশিংটন। করোনা মহামারির সময় থেকে অভিবাসন-প্রত্যাশীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে কাড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। গত ১১ মে দিবাগত রাতে সেই নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা শেষ হয়ে যায়। কিন্তু হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, অবৈধ উপায়ে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করলে দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারেন। ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগও আনা হতে পারে।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী আলেহান্দ্রো মায়োরকাস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘আমাদের সীমান্ত খোলা নেই।’ সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন লাতিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর থেকে আসা জিমি মুনোজ। ২৯ বছরের জিমি বলেন, ‘আশা করছি, আমি এই দেশে থেকে যেতে পারবো। কিন্তু তারা (মার্কিন প্রশাসন) আমাকে অনুমতি দেবে কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ ও ভয় রয়েছে।’

টেক্সাসের ব্রাউন ভ্যালে একটি বাসে বসেছিলেন প্যাট্রিসিয়া ভারগাস। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভেনেজুয়েলা থেকে এসেছেন তিনি। প্যাট্রিসিয়া সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পেরেছেন। কিন্তু সীমান্তের ওপারে আটকে গেছেন প্যাট্রিসিয়ার ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতি-নাতনিরা। এরপর ভাগ্যে কী হবে, তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন প্যাট্রিসিয়া। তিনি বলেন, পাঁচ জন একসঙ্গে এসেছিলাম। এখন আমি একাই এ দেশে ঢুকতে পেরেছি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কবে, কোথায় দেখা হবে, জানি না।  

টাইটেল-৪২

তিন বছরের বেশি সময় ধরে মেক্সিকোর সঙ্গে ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার (২ হাজার মাইল) সীমান্ত এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র টাইটেল-৪২ বিধি জারি রেখেছিল। এই বিধির আওতায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ১১ মে রাত থেকে জরুরি কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ উঠে যায়। এতে টাইটল- ৪২ বিধিও উঠে যায়। এজন্য বাইডেন প্রশাসন নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে।

সীমান্তে অভিবাসীদের ঢেউ ঠেকাতে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এখন কেউ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে চাইলে তার ওপর পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি বা তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হবে। যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশে অভিবাসন-প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। হাইতির মতো কয়েকটি দেশে বিশেষ শরণার্থী কর্মসূচি চালুর পাশাপাশি সাময়িক কাজের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। তবে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে, তা পরিষ্কার নয়।

যুক্তরাষ্ট্র আশ্রয়প্রার্থীদের স্মার্টফোনে অ্যাপের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। তবে অবশ্য আশ্রয়প্রার্থীরা এই অ্যাপ খুব একটি জুঁতসই নয় বলে অভিযোগ তুলছেন। তারা বলছেন, অ্যাপটি ঠিকমতো কাজ করে না। আবার ওয়াই-ফাই ছাড়া এই অ্যাপ চালানোর কোনো উপায় নেই। ভেনেজুয়েলা থেকে আশ্রয়প্রার্থী ২১ বছর বয়সী জেরেমি দে পাবলোস বলেন, কী আশ্চয়! একটি অ্যাপ আমাদের জীবন আর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিচ্ছে।

তবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী অ্যাপের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা চলছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ‘টাইটেল-৪২’ শিরোনামে স্বাস্থ্যবিষয়ক আদেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে কোভিড-১৯ মহামারির সময়, অভিবাসন-প্রত্যাশীদের মেক্সিকো বা তাদের নিজ দেশে দ্রুত ফেরত পাঠানোর জন্য এই আদেশ ব্যবহার করা হতো।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি আলেজান্দ্রো মেওরকাস বলেন, বাইডেন প্রশাসন কঠোর আশ্রয়-নীতি চালু করেছে; যা সীমান্তে অবস্থানরত বেশিরভাগ অভিবাসন-প্রত্যাশীকে বহিষ্কারের দিকে নিয়ে যাবে। কিছু সীমান্ত বিশ্লেষক বলেছেন, সীমান্তে প্রায় দেড় লাখ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে। সীমান্তবর্তী এলকায় বসবাসরত সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য অভিবাসীদের আগমন বৃদ্ধি নতুন কোনো বিষয় নয়। ট্রেভিনো বলেছেন, এটি কয়েক দশক ধরে চলমান বাস্তবতা। সীমান্ত নিরাপদ নয় এমন কথারও বিরোধিতা করেন তিনি।

ইউএস কোডের টাইটেল-৮ বিধানের অধীনে অভিবাসন-প্রত্যাশীদের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ বিষয়ে সীমান্ত টহল কর্মকর্তাদের জন্য তাদের দায়িত্ব স্পষ্ট। যারা বর্তমান নির্দেশিকা অনুযায়ী যোগ্যতা অর্জন করে তাদের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করা এবং যারা করবেনা, তাদেরকে দ্রুত ফিরিয়ে দেয়া।

অভিবাসন-প্রত্যাশীদের যারা যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরে ঢুকে পড়তে পারে, তাদের যাত্রা সেখানেই শেষ নয়। ভেনেজুয়েলার নাগরিক অভিবাসন-প্রত্যাশী রোজ ক্যারিলো আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন। আগামী বছরের মে মাসে, অভিবাসন আদালতে তার সাক্ষাৎকারের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে।

শেয়ার করুন