২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:২৯:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


সংসদে বৃহস্পতিবার সমাপনি বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী- ‘তাদের নিজেদের দেশের মানবাধিকার আগে রক্ষা করা উচিত’
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৭-২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী- ‘তাদের নিজেদের দেশের মানবাধিকার আগে রক্ষা করা উচিত’


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও নিয়মিত বন্দুকের গুলিতে স্কুলে, শপিং মল এবং রাস্তায় (মানুষকে হত্যা করা হয়েছে) শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে। ‘তাদের নিজেদের দেশের মানবাধিকার আগে রক্ষা করা উচিত তারা নিজের দেশের মানুষকে বাঁচাবে কী করে, সেই চিন্তা আগে করুক, সেটাই তাদের করা উচিত। গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যকালে ওইসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলেন, তাদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘তাদের আগে নিজ দেশের মানুষের মানবাধিকার রক্ষা করা উচিৎ। বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই, তারা কেন ২০০১ সালে সংঘটিত দমন-পীড়ন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কী ঘটেছিল তা দেখেননি।’

তাঁর সরকার নির্যাতিত ও জোরপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানবিক কারণে তারা এত মানুষের দায়িত্ব নিয়েছেন। ‘এর চেয়ে মানবাধিকার রক্ষার বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে? এটা আমার প্রশ্ন’। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার যখন অন্য দেশের নির্যাতিত মানুষকে আশ্রয় দেয়, তখন তারা কেন মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে? ‘তারা এটা কিভাবে বলতে পারে?’ যোগ করেন তিনি।
 

তিনি বলেণ, কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই পারে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে।
দেশে সাম্প্রতিক সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং তাঁর শাসনামলে অনুষ্ঠিত সংসদ উপ-নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে পারি কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই এদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারে। আমাদের লক্ষ্য জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন। আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং এটি চালিয়ে  যাব।’


বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশনের (২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন) সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেন, ‘বরিশাল, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট ও গাজীপুরের সাম্প্রতিক সিটি নির্বাচন নিয়ে  কেউ একটি প্রশ্নও তুলতে পারেনি।  প্রতিটি উপনির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।’ অতীতে  বাংলাদেশে এত শান্তি পূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছে কিনা  প্রশ্ন করেন তিনি।
৩১ মে শুরু হওয়া  অধিবেশন ২২ কার্য দিবস শেষে  স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী রাষ্ট্রপতির সমাপ্তির আদেশ পাঠ করেন।  


এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা জনগণের ভোটাধিকার সুরক্ষিত করেছেন, তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করেছেন এবং দেশে গণতান্ত্রিক ধারা নিরবচ্ছিন্ন রেখেছেন। ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও অন্যান্য অপকর্ম চালিয়ে  তারা (বিএনপি) দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়  থাকায় দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে, জনগণের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে।
তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষ তাদের (আ’লীগ) নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’কে ভোট দিয়ে  স্বাধীনতা পেয়েছে, আবার নৌকায় ভোট দেওয়ায় মঙ্গা (দুর্ভিক্ষ) দূর হয়েছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। দেশের জনগণ বারবার আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে, এর সুফল তারা পাচ্ছে।

আজ, আমরা দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে নামিয়ে  এনেছি’ উল্লেখ করে  তিনি বলেন, বিশ্বে কোভিড -১৯ মহামারী এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ না থাকলে এটি আরও কমানো যেত। তাছাড়া মহামারী ও যুদ্ধের পরও সরকার জনগণকে খাদ্য, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় আমরা জনগণের জন্য কাজ করছি এবং জনগণের সেবা করা আমাদের দায়িত্ব। আমরা এটা চালিয়ে যাব।’


২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। ‘২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি স্মার্ট দেশ- যেখানে থাকবে স্মার্ট মানুষ, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজের পাশাপাশি স্মার্ট-দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ হবে।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জিয়াউর রহমান, এইচএম এরশাদ ও খালেদা জিয়ার শাসনামলে অতীতে কীভাবে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছিল তা বিশদভাবে তুলে ধরে বলেন, জিয়াউর রহমান অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন। এরপর এইচ এম এরশাদ তাকে অনুসরণ করেন এবং খালেদা জিয়া তার দেবর এরশাদকে অনুসরণ করেন।’  শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর দল সর্বদা জনগণের হাতে তাদের  ভোটাধিকার ফিরিয়ে  দেওয়ার জন্য লড়াই, সংগ্রাম করেছে।


দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০০১ সালে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ উপায়ে তিনি ক্ষমতা হস্তান্তর করেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি শাসনামলের দুঃশাসন, সহিংসতা ও নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, তাদের নির্যাতনকে কেবল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দমন-পীড়নের সঙ্গে তুলনা করা যায়।


২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন তুলতে পারেনি। আর ওই নির্বাচনে বিএনপি মাত্র ২৯টি আসন (৩০০টির মধ্যে) পেয়েছিল, যা থেকে স্পষ্টভাবে  বিএনপির অবস্থা প্রতিফলিত হয়েছে।
তিনি মনে করেন, আ’লীগ ও বিএনপি সমান হতে পারে না কারণ, ১৯৪৯ সালে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের মাধ্যমে  আওয়ামী লীগ  প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। অন্যদিকে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে  সেনানিবাস থেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের মাধ্যমে।  ‘সুতরাং, তাদের (বিএনপি) আদর্শ ও নীতি আ’লীগের সাথে মেলে না’ উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তথ্যসূত্র: বাসস। 

শেয়ার করুন