০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৫:২০:২৫ অপরাহ্ন


দেশ’কে মৌটুসী বিশ্বাস
নিজেকে ভেঙে গড়ার চেষ্টা করছি
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৬-২০২২
নিজেকে ভেঙে গড়ার চেষ্টা করছি মৌটুসী বিশ্বাস/ফাইল ছবি


ছোটপর্দার নন্দিত অভিনেত্রী মৌটুসী বিশ্বাস। ‘অ্যাডভেঞ্চার বাংলাদেশ’ নামের একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মাধ্যমে মিডিয়া জগতে পা রাখেন। এরপর কাজ করেছেন জনপ্রিয় নাটক ও সিনেমায়। সম্প্রতি শেষ করেছেন ‘প্রিয় সত্যজিৎ’ সিনেমার কাজ। অভিনয় ও ব্যাক্তিজীবনের নানা বিষয় নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় পত্রিকা দেশ’র সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। 

প্রশ্ন: সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতিতে সামাজিক মাধ্যমে তারকাদের বেশ সরব দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আপনি নিরব। কারণ কি?

মৌটুসী বিশ্বাস: আমি অন্যদের মতো না। তাই হয়তো এমনটা মনে হচ্ছে আপনাদের। আসলে বন্যায় সব শ্রেণী, পেশার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া নিত্য পণ্যের দাম যে হারে বাড়ছে তাতে সামনের দিনগুলো নিয়ে বেশ টেনশনে আছি। তাই সামাজিক মাধ্যমে ইদানিং খুব একটা প্রবেশ করা হয় না। 

প্রশ্ন: প্রিয় সত্যজিৎ সিনেমায় কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

মৌটুসী বিশ্বাস: সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ট্রিবিউট সিনেমাটি নির্মাণ করা হয়েছে। সিনেমাটার চিত্রনাট্য পড়ে আমার মনে হলো সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে আমার ভালো লাগা, শ্রদ্ধার বিষয়গুলো মিলিয়ে এ ট্রিবিউটের সঙ্গে যুক্ত হতে পারলে মন্দ হয় না। এ ভাবনা থেকেই সিনেমাটির সঙ্গে যুক্ত হওয়া। সিনেমাটার প্রধান চরিত্রে রয়েছেন আহমেদ রুবেল ভাই। শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা বলতে গেলে সবার আগে বলি পরিচালক প্রসূন রহমান দাদার বিষয়ে, তিনি ইউনিটের সবার প্রতি ভীষণ কেয়ারিং। একজন লাইট ম্যান থেকে শুরু করে প্রডাকশন বয় সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলেন। এ আন্তরিকতা ভালো লেগেছে।

প্রশ্ন: সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা ও সাহিত্যের সঙ্গে আপনার পরিচয় কীভাবে?

মৌটুসী বিশ্বাস: তার লেখার আগে আমি সিনেমার সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম। লেখার সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক পরে, এটা হয়েছে তার লেখা ছোটগল্পের মাধ্যমে। বর্তমানে তার ছোটগল্প নিয়ে কাজ হচ্ছে। ভারতে একটা সিনেমা নির্মাণ করা হচ্ছে ‘তারিণীখুড়ো’ গল্প নিয়ে। অন্যদিকে অনীক দত্তের ‘অপরাজিত’ কলকাতায় দারুণভাবে সফল হয়েছে। আমার মেয়ের সঙ্গে ফেলুদাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। সত্যজিৎ রায় আসলে পরিবারের অংশ, সেটা চলচ্চিত্র হোক কিংবা গল্প। সেই কত আগে গল্পগুলো লিখে গেছেন, চলচ্চিত্র বানিয়ে গেছেন, কিন্তু সেগুলোর আবেদন কখনো ফুরাবে না, এগুলো বাঙালিদের সম্পদ।

প্রশ্ন: সত্যজিৎ রায়ের গল্পে কখনো কাজ করেছেন?

মৌটুসী বিশ্বাস: বেশ কয়েক বছর আগে সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্প পটলবাবু ফিল্মস্টার থেকে একটি টেলিভিশন নাটক নির্মাণ করেছিলেন অনিমেষ আইচ। নাটকটার নাম ‘আহ’। আমার অভিনয়ের সুযোগ হয়েছিল নাটকটিতে। একটু আগে যে বললাম অনীক দত্তের অপরাজিত ছবির কথা, সেটা বাংলাদেশে দেখালে খুব খুশি হব।

প্রশ্ন: বর্তমানে নতুন কোন কাজ করছেন?

মৌটুসী বিশ্বাস: এ মুহূর্তে আমি কোনো কিছুর সঙ্গে যুক্ত নই। কারণ আমি এখন পড়াশোনায় ব্যস্ত। কাজের প্রস্তাব আসছে, তবে আমি আগ্রহ পাচ্ছি না। আমার আগ্রহ হলে আমি কাজ করব নয়তো না। মূলত: এখন আমি নিজেকে ভেঙে গড়ার চেষ্টা করছি। এটি একেবারেই আমার নিজস্ব চিন্তাভাবনা থেকে। মহামারীর আগে শুধু ছুটছিলাম, এখন ধীর হয়েছি। ভালো লাগছে এ শান্ত থাকাটা।

প্রশ্ন: কোন চরিত্রকে মনে হয়েছে যেটা আপনার ক্যারিয়ারে অনেক প্রভাব ফেলেছে?

মৌটুসী বিশ্বাস: আমি যে কাজ করেছি- কিছু কাজ দর্শকনন্দিত হয়েছে, যেমন একান্নবর্তীর ‘পলা’। প্রথম চরিত্রই আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। তবে মাঝে মাঝে নানা কারণে কিছু কাজ ছেড়েও দিয়েছি, যার মধ্য থেকে একটা দুটো ভীষণ নাম করেছে। তবে আমি পেছনে ফিরে তাকাই না। ভেবে দেখি না কোন কাজটা আমার ক্যারিয়ারে ছাপ রেখেছে আলাদাভাবে। কারণ আমি অতীতে বসবাস করি না বরং বর্তমানে নিয়ে ভাবি।

প্রশ্ন: আপনি খুলনার মেয়ে। ঢাকা নাকি ঢাকার বাইরে থাকতে বেশি ভালো লাগে?

মৌটুসী বিশ্বাস: আমি এমন একটা মানুষ যে সব পরিবেশেই আনন্দ নিয়ে থাকতে পারি। আমার জীবনটা আমি এমনভাবেই করে নিয়েছি, যাতে আমি কোথায় আছি সেটা বিষয় না। মনের শান্তি নিয়ে থাকতে পারাটাই আসল।

প্রশ্ন: অনেকেই বলেন মিডিয়ায় বন্ধু হয় না, আবার দেখা যায় অনেকেই এখানে ভালো বন্ধু। এটা নিয়ে আপনার মতামত?

মৌটুসী বিশ্বাস: আমি তেমন সামাজিক নই মানে দাওয়াত, গেট টুগেদারে সশরীরে আমার খুব একটা দেখা পাওয়া যায় না বটে, তবে ভার্চুয়ালি আমি বেশ সামাজিক। আমার সংসার, বইপত্রের পর অল্পসংখ্যক দারুণ কিছু বন্ধু আছে, যারা যেকোনো অবস্থায়ই আমার বন্ধু থাকবে। আমি মনে করি, শুধু সাংস্কৃতিক অঙ্গন না, যেকোনো পেশাতেই যখন কেউ সফল হয় তখন তার আশপাশে অনেক মানুষ জুটে যায়। আবার যখন ওই মানুষটার অবস্থানের পরিবর্তন আসে, সে সময়ে অনেকেই তার থেকে দূরে সরে যায়। এটা সবক্ষেত্রেই রয়েছে। এটা এখন খুব স্বাভাবিক। অন্য মানুষের দিকে না তাকিয়ে থেকে নিজের দিকে তাকানোটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শেখার তো কোনো শেষ নেই, নিজেকে ক্রমাগত গড়ার মাঝেই যেন অসীম আনন্দ।

প্রশ্ন: ইদানীং দর্শক টেলিভিশনে নাটক না দেখে ইউটিউবে দেখছে, ব্যাপারটা কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মৌটুসী বিশ্বাস: এক সময় আমরা একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাড়ি পৌঁছে যেতাম। তখন ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, নেটফ্লিক্স ছিল না। আমি নিজেও ইউটিউবে নাটক দেখি, কোন চ্যানেলে কখন কি যাচ্ছে আমি নিজেও জানি না। আগে চ্যানেল কম ছিল এবং ভালো ভালো নাটক দেখাত। এখনও ভালো নাটক হচ্ছে, তবে বাজেট কমে গেছে। যখন ভালো নির্মাতাকে চাপিয়ে দেওয়া হয় যে নির্দিষ্ট তারকা শিল্পীকে নিতে হবে তখন নাটক আর গল্পকেন্দ্রিক থাকছে না। যারা নির্মাতা নয় তারা চাপিয়ে দেওয়া পারফর্মারদের নিয়ে কোনোরকম স্ক্রিপ্ট লিখে নাটক বানিয়ে ফেলে নির্মাতা হয়ে যাচ্ছে। এতে করে যারা গল্প নিয়ে কাজ করতে চান তারা তাদের সুযোগ হারাচ্ছেন। আমাদের নাটকে আর গল্প নেই।

প্রশ্ন: এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী?

মৌটুসী বিশ্বাস: অবশ্যই বাজেট বাড়াতে হবে এবং তা দিতে হবে সঠিক নির্মাতাদের। আমি যাদের সঙ্গে কাজ করতাম তারা বাড়িতে বসা। উনাদেরকে আবার ফেরাতে হবে। পুরনো অনেক নির্মাতা আছেন ভালো কাজ করতে চান, গল্পনির্ভর কাজ করতে চান। কিন্তু যেভাবে চাপিয়ে দেওয়া হয় সেভাবে তারা কাজ করতে পারছেন না। সবগুলো চ্যানেল মিলে একটা ডিসিশন নিতে পারে।


শেয়ার করুন