০৩ মে ২০১২, শুক্রবার, ০৩:১৭:৫৯ পূর্বাহ্ন


কর্মসংস্থান নয় জাতিকে ভাতানির্ভর করেছি
নিজস্ব প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৮-২০২৩
কর্মসংস্থান নয় জাতিকে ভাতানির্ভর করেছি বক্তব্য রাখছেন সুলতানা কামাল


মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেছেন, নগরায়নের ফলে আমরা গৃহস্থ থেকে উদ্ধাস্তুতে পরিণত হচ্ছি। একটা জাতিকে ভাতা নির্ভর করেছি। যেখানে কর্মসংস্থানের দিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার, সেখানে ভাতার দিকে দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে। 

এএলআরডি’র উদ্যোগে ‘নগর দারিদ্র : বস্তিবাসী ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ভূমিতে অধিকার এবং নাগরিক সেবায় অভিগম্যতা’ (Urban poverty in Bangladesh: Land, Migration and services) শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি একথা বলেন। মানবাধিকার কর্মী অ্যাড. সুলতানা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড: আবুল বারকাত। এতে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন অর্থনীতির অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান; বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দীন আহমেদ এবং এএলআরডি-র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। মুক্ত আলোচনা পর্বে বরিশাল থেকে ডাঃ মনিষা চক্রবর্তী, রাজশাহী থেকে আফজাল হোসেন, রংপুর থেকে নূরুল ইসলাম দুলু, চট্টগ্রাম থেকে ইকবাল বাহার সাবেরি এবং ময়মনসিংহ থেকে ইমন সরকার বক্তব্য রাখেন।

সুলতানা কামাল  আরো বলেন, বর্তমানে সরকার সুশাসনের বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে অন্যান্য বিষয়গুলোতে মনোনিবেশ করছে। নীতি নির্ধারকরা যদি সচেতন থাকে এবং তাদের সদিচ্ছা থাকে তবে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন। বস্তিবাসীকে মানুষ হিসেবে গণ্য করে ভবিষ্যত পরিকল্পনা গ্রহনের দিকে জোর দিতে হবে বলেও পরামর্শ দেন।

গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে ড. আবুল বারকাত বলেন, বস্তিবাসী মানুষের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনায় নগর দরিদ্রতাকে নির্ধারণ করতে হবে। বস্তিবাসি ও নিম্নআয়ের খানা জরিপে দেখা যায় বস্তি ও নিম্নআয়ের বাসিন্দাদের কমপক্ষে ৮২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে। এখান থেকে নগর দরিদ্রের হিসাব করা সম্ভব। নগর জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ বস্তি ও নিম্ন আয়ের খানা। যাদের ৮২ শতাংশ দরিদ্র। এই হিসাবে নগরের দরিদ্রতার হার ৪১ শতাংশ। জরিপে পাওয়া যায় যে নগরে দরিদ্র খানা মাত্র ৬ শতাংশের গ্রামে কিছু কৃষিজমি রয়েছে। অর্থাৎ দেশের যে প্রাণ কৃষি তাদের সাথেও এই জনগোষ্ঠীর সম্পর্ক অতি ক্ষীণ হয়ে গেছে। আয় কমে যাওয়ায় প্রথম আঘাত আসে পরিবারের খাদ্য ভোগের উপর। জরিপে দেখা যাচ্ছে যে, মাত্র ১২ শতাংশ খানা বা পরিবার নিজেদের পরিবোরের খাদ্য নিরাপত্তা আছে বলে মনে করে। অবশিষ্ট ৮৮ শতাংশ পরিবার বাড়তি খাদ্যের ব্যয় মেটাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নগরে গড়ে ৬৫ শতাংশ খানা উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা পায়, কিন্তু নগর দরিদ্রের মাঝে এর হার মাত্র ১৬ শতাংশ।

ড. শফিক উজ জামান বলেন, নগর দারিদ্র্য নিরসনে সামগ্রিক উন্নয়ন কৌশলে গুণগত ও পরিমাণগত পরিবর্তন দরকার। গ্রামীণ অঞ্চলের কর্মসংস্থান সংকটের কারণে নগরে অভিবাসন বাড়ছে। কিন্ত উদ্বৃত্ত কৃষি শ্রমিক শিল্প শ্রমকে রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়া বাংলাদেশে না থাকায় নগরায়ন না হয়ে বস্তিয়ায়ন হয়েছে। তিনি শিল্পায়নের বিকল্প কৌশল নিয়ে চিন্তা করার পরামর্শ দেন।

ড. জামাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, আমরা দেশের মধ্যে অঞ্চলভিত্তিক বৈষম্য দূর করতে পারি নি। সরকার নগর ও গ্রামে অসমতা দূর করার যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে তা কতটা সম্ভব হয়েছে তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। সকল পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সম সুযোগ এখনও নিশ্চিত হয়নি। এক্ষেত্রে সকরকারকে সমস্যা নিরুপন করে সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

শামসুল হুদা বলেন, বস্তিবাসীরা আমাদের দেশের জন্য বোঝা নয়, বরং যারা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে পাচার করেছে তারাই বোঝা। বস্তিবাসীদের প্রতি অন্যায় ও বৈষম্য না করে তাদের সমান সুযোগ দিলে তারাও দেশের সম্পদ হিসেবে নিজেদেরকে প্রমাণ করতে সক্ষম হবেন। নগর দারিদ্রতা চিরস্থয়ী কোন সমস্যা নয়, এটা পরিবর্তন সম্ভব। তাই তিনি নগর দারিদ্রতা নিরসনে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি বলে মনে করেন।

শেয়ার করুন