১৫ অক্টোবর ২০১২, মঙ্গলবার, ১০:৪৮:৪৯ অপরাহ্ন


ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারির ঢাকা সফর নিয়ে রহস্য
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৯-২০২৩
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারির ঢাকা সফর নিয়ে রহস্য এমানুয়েল ম্যাক্রঁ, সের্গেই ল্যাভরভ ও মিরা রেজনিক


গুরুত্বপূর্ণ একটা সময় পার করছে বাংলাদেশ। এ সময় একের পর এক বিশ্বের পরাশক্তির দেশসমূহের প্রতিনিধিদের পদভারে মুখরিত হচ্ছে ঢাকা। গত ৫ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে নিরাপত্তা বিষয়ক সংলাপ। দুই দেশের মধ্যে নবম এ সংলাপে অংশ নিচ্ছেন মার্কিন রাজনৈতিক সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেজনিক নেতৃত্বে একটি দল। নিরাপত্তা সংলাপে ওয়াশিংটনের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন মিরা রেজনিক।  

এর আগে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস রেজনিকের ঢাকায় পৌঁছানোর তথ্য জানিয়ে বলে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল আঞ্চলিক উন্নয়ন, মানবাধিকার, নিরাপত্তা সহায়তা এবং সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে আলোচনা করবে। এছাড়াও মার্কিন দূতাবাস এ সংলাপ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিতে গিয়ে জানায়, নিরাপত্তা সংলাপ একটি বার্ষিক বেসামরিক আয়োজন, যেখানে আমাদের নিরাপত্তা সম্পর্কের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা ইন্দো-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সমস্যা, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার, সামরিক সহযোগিতা, শান্তিরক্ষা, নিরাপত্তা সহায়তা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আলোচনা করবে। এ সংলাপ আমাদের দুই সরকারের মধ্যেকার সর্বাঙ্গীন নিরাপত্তা সম্পর্কের একটি অংশ।

মার্কিন দূতাবাস আরো জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তাবিষয়ক অংশীদারিত্ব অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আমাদের দুটি দেশের স্বার্থ অভিন্ন। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে মুক্ত, অবারিত, শান্তিপূর্ণ এবং সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে দেশ দুটির দৃষ্টিভঙ্গি একই ধরনের। এ পারস্পরিক লক্ষ্যগুলো অর্জনে সারা বছর বিভিন্ন ধরনের সংলাপ আয়োজিত হয়। তবে এর আগে ঢাকায় ২৩ ও ২৪ আগস্ট দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সংলাপের পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ নিরাপত্তা সংলাপ। এর আগেও বেশ কয়েকজন মার্কিন শীর্ষ প্রতিনিধি সফর করে গেছেন বাংলাদেশে। 

এদিকে মার্কিন প্রতিনিধিদের সংলাপ শেষ না হতে হতেই ঢাকা স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হচ্ছে রাশিয়ান পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভকে। রুশ এ কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফরটা ভীষণ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা জোট একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাগাদা দিয়ে আসছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সনের নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তারা ওই অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের চাপ দিয়ে আসছে। এতে সর্বশেষ যোগ দেওয়ার খবর বেরিয়েছে ভারতের। ভারতও চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  পশ্চিমাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য এক নির্বাচন। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জি-২০ সম্মেলনে ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নেবেন। সেখানে বাংলাদেশে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি প্রসঙ্গে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে এমন প্রেক্ষাপটে বসে নেই চীন ও রাশিয়াও। চীন অবশ্য বলেই দিয়েছে, বাংলাদেশে নির্বাচনের বিষয়টি শুধুই বাংলাদেশের ও এ দেশের জনগণের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এ ব্যাপারে তারা নাক গলাতে যাবে না। কিন্তু রাশিয়া কিছুটা ব্যতিক্রম মন্তব্য করছে। 

গত ৮ জুলাই এক টুইটে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘কিছু ইউরোপীয় ও মার্কিন রাজনীতিবিদ বাংলাদেশে “অবাধ ও নিরপেক্ষ” নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে চিঠি প্রকাশ করেছেন বলে আমরা জেনেছি। এটা নব্য ঔপনিবেশবাদ এবং সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নির্লজ্জ হস্তক্ষেপের আরো একটি অপচেষ্টা।’ রাশিয়া বলেছে, বাংলাদেশে নির্বাচন কীভাবে হবে, সেটা দেশটির আইনেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। 

রাশিয়ার এমন মন্তব্যের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অন্তত দুটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে যায়। এর মধ্যে মার্কিন প্রতিনিধিদলটি ১১ জুলাই চার দিনের সফরে বাংলাদেশে সফরে আসে ভারত হয়ে। ওই সফরে ছিল বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তার সফরসঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু।

গত ৪ সেপ্টেম্বর মস্কোভিত্তিক প্রভাবশালী মিডিয়া তাস জানায়, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করবেন বলে রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রে রুডেনকো ভালদাই জানিয়েছেন। ভালদাই বলেন, “আমরা এই (এশিয়া) অঞ্চলের অন্য একটি ইভেন্টে সফরে যাচ্ছি, ইন্দোনেশিয়ায়, জাকার্তায় পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন, যেখানে সের্গেই ভিক্টোরোভিচ ল্যাভরভ আমাদের প্রতিনিধিদলের প্রধান হিসেবে অংশগ্রহণ করবেন।

তারপর আমাদের যাত্রা নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে অব্যাহত থাকবে এবং আমাদের পথে আমরা রাশিয়ার ইতিহাসে প্রথম সফরের জন্য, অন্তত মন্ত্রীর জন্য, বাংলাদেশে থামবো”-এমনটাই বলেন ওই কূটনীতিক। তিনি আরো বলেন, “আসলে, আমাদের সামনে বড় ইভেন্ট এবং চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে আমরা সফলভাবে সেগুলো মোকাবিলা করতে প্রস্তুত। তাছাড়া এশিয়াকে আমাদের অনেক কিছু দেওয়ার আছে এবং এশিয়ার কাছে আমাদের অফার করার জন্য অনেক কিছু আছে” ভালদাই যোগ করেছেন। আগামী ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর দিল্লিতে ওই সম্মেলন। তার আগে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকায় আসার কথা ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর। ঢাকায় তার সফরের পূর্ণাঙ্গ সূচি না পাওয়া গেলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সৌজন্য সাক্ষাৎ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাজোটের ইউক্রেনের পক্ষে সরাসরি অবস্থানকে কেন্দ্র করে এ দুইয়ের সম্পর্ক বেশ তিক্ত। এমনি মুহূর্তে যখন ইন্দো-প্যাসেফিক জোনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেতৃতাধীন কোয়াডে যোগ দিতে বাংলাদেশের ওপর কিছুটা চাপ বিরাজ করছে, তেমনি মুহূর্তে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের তৎপর্য অনেক। তবে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই রুশ ফরেন মিনিস্টার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সফর করে বেড়াচ্ছেন। সে মোতাবেক বাংলাদেশে সফর করার ব্যাপারেও তাদের আগ্রহ পুরোনো। ওই সূত্র ধরে এ সফর বলেই জানানো হচ্ছে।    

এদিকে রুশ ফরেন মিনিস্টারের সফর শেষ হতে না হতেই ন্যাটোর অন্যতম সদস্য দেশ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রঁ। দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে ১০ সেপ্টেম্বর তিনি বাংলাদেশ সফর করবেন। ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস এক টুইটে ও ফেসবুকে ম্যাক্রঁর সফরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ আশাবাদের কথা শুনিয়েছে। 

ফ্রান্স দূতাবাসের ফেসবুক ও এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ৯-১০ সেপ্টেম্বর জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে নয়াদিল্লি যাবেন। তারপর তিনি ১০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সফর করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের নভেম্বরে প্যারিসে দ্বিপক্ষীয় সফরে গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি এমানুয়েল ম্যাক্রঁকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ফ্রান্স সফরের সময় দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের জন্য ব্যবসা, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় জোর দিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে প্যারিসের এলিসি প্রাসাদে দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পর দুই দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্মতিপত্রে সই করে। এতে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর দক্ষতা বাড়ানোর জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রযুক্তি বিনিময়ের মতো বিষয়গুলো যুক্ত রয়েছে। 

শেয়ার করুন