২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:৫১:৩৫ পূর্বাহ্ন


২০ দলীয় জোট ‘বিলুপ্তি’
১২ শরিক একত্রিত হয়ে ’১২ দলীয় জোট’
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১২-২০২২
১২ শরিক একত্রিত হয়ে ’১২ দলীয় জোট’


২০ দলীয় জোট ‘বিলুপ্তি’ হওয়ায় জোটের ১২ শরিক একত্রিত হয়ে গঠন করেছে ’১২ দলীয় জোট’।

 

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের পক্ষে  জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার আনুষ্ঠানিক এই ঘোষণা দেন।

 

তিনি বলেন, ‘‘একটা কথা আমি জোরের সাথে বলতে পারি এদেশের সর্ববৃহত বিরোধী দল বিএনপির সাথে আমাদের যে ঐক্য, যে সমঝোতা, যে হৃদয়ের বন্ধন অটুট থাকবে যেমন আগে ছিলো এখনো তেমনি আছে। আমরা আরো বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তোলার জন্য প্রকৃত প্রস্তাবে দেশের সব কয়টি রাজনৈতিক দল যারা এই ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী তাদেরকে এক কাফেলায় শামিল করার জন্য একটু ভিন্ন পথ এবং কৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছি।”

 

‘‘আজকে তাই ভুল বুঝাবুঝির কোনো অবকাশ নেই্। আমরা সকলে মিলে এ টু জেড ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের পথে যুগপতভাবে আন্দোলনে এগিয়ে যাবো।”

 

 

নতুন এই জোটে দলগুলো হচ্ছে : জাতীয় পার্টি(কাজী জাফর), কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টি, জাতীয় দল,  বাংলাদেশ এলডিপি, জাতীয় গণতান্ত্রিক দল-জাগপা(তাসমিয়া প্রধান), এনডিপি, এলডিপি(সেলিম), মুসলিম লীগ, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক পার্টি এবং সাম্যবাদী দল।

 

আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিএনপি তার চার দলীয় জোটকে সম্প্রসারিত করে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ২০ দলীয় জোট করে।

 

নবগঠিত ১২ দলীয় জোটের ঘোষণাপত্র পাঠ করে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘‘ আমরা দেশের ১২টি রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের চলমান সরকার বিরোধী যুগপত আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে সকল কর্মসূচি সক্রিয়ভাবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা ১২ দল নামেই পরিচিত থাকবো। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষা, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগনের অর্থনৈতিক মুক্তি লাভই আমাদের সকলের অভিন্ন লক্ষ্য মনে করি।”

 

‘‘ বিনা ভোটে অনির্বাচিত অবৈধ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ১২ দল বিএনপির সাথে যুগপত আন্দোলনে সক্রিয় থাকবে। আমরা ঘোষণা করছি, চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখব।

 

বিএনপির ঘোষিত ১০ এবং ২৭ দফা রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবকে ‘‘জাতীয় মুক্তির সনদ’ বিবেচনা করে এর সাথে একাত্মতার ঘোষণা দিয়েছে ১২ দল।

 

‘২০ দল বিলুপ্ত’

 

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘‘ ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসের ৯ তারিখ বিএনপি চেয়ারপাসনের কার্যালয়ে অপরাহ্নে ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের অনানুষ্ঠানিক বৈঠক ছিলো। সেখানে বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতৃবর্গ বলেন যে, এখন থেকে ২০ দলীয় জোট নামটি আর ব্যবহার করবেন না।”

 

‘‘ তবে আপনারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে একসাথে চলতে পারেন। এরুপ অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যের পর ২০ দলীয় জোটের অস্তিত্ব আর থাকে না। বস্তুত সেই ঘোষণারও ১০ দিন আগে বিএনপি মহাসচিব মহোদয় বলেছিলেন যে, ২০ দলীয় জোট আর নাই। যদিও আনুষ্ঠানিক প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ২০ দলীয় জোটের জন্ম হয়েছিলো কিন্তু ২০ দলীয় জোটের বিলুপ্তটা আনুষ্ঠানিকভাবে হয়নি, অনানুষ্ঠানিভাবে হয়েছে।”

 

 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘ আমরা ছিলাম ২০টি দল। ২০ টি দলের মধ্যে প্রধান শরিক বিএনপি বাদ দিলে থাকে ১৯ টি দল। দ্বিতীয় সারিতে জামায়াতে ইসলামী বাদ দিলে থাকে ১৮ এবং জনাব পার্থের(আন্দালিব রহমান পার্থ) দল বিজেপি চলে গিয়েছিলেন থাকে ২০১৯ সালে, থাকে ১৭। খেলাফত মজলিশ চলে গিয়েছিলেন ২০১৯ সালে, থাকে ১৬।১৬ জনের মধ্যে আপনাদের সামনে আমরা ১২টি দল উপস্থিত আছি।”

 

‘‘ তবে হ্যাঁ এর মধ্যে বক্তব্য আছে। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম দল ছিলো লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি যার সভাপতির নাম জনাব ড. কর্ণেল অলি আহমেদ বীর বিক্রম। তার দলটি আমাদের এখানে নাই। তার দলের সাবেক অতি জ্যেষ্ঠ নেতা আবদুল করীম আব্বাসী এবং শাহাদাত হোসেন সেলিম তাদের নেতৃত্বে একটি দল হয়েছে যার নাম বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি(বিএলডিপি),উনারা এখানে আছেন। আরেকটি বক্তব্য হচ্ছে, ২০১৯ সালে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা বিভক্ত হয়ে গিয়েছিলো। বিভক্তের মূল অংশের মরহুম শফিউল আলম প্রধানের সুযোগ্য কণ্যা ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান আমাদের সঙ্গে আছেন। বিদ্রোহীরা এখানে নেই।”

 

‘বিএনপির আমাদের প্রধান মরুব্বী’

 

ইবরাহিম বলেন, ‘‘মৌলিকভাবে বলতে গেলে ২০ দলীয় জোট ছিলো তার মধ্যে ১২টি দল আমরা। আর তিনটি দল বাইরে থাকে। সেই তিনটি দলের নেতৃবর্গের প্রতি আমাদের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা সকলের জন্য দরজা খোলা রেখেছি, সকলের জন্য দরজা খোলা। ২০ দলীয় জোটে থেকে থাকুন বা ২০ দলীয় জোটে না থেকে থাকুন।”

 

‘‘ তবে আমরা বিনীত আহবান দেশবাসীর কাছে, এরকম ভাগাভাগিটা আসলে আমাদের জন্য অত্যন্ত নীতিবাচক বিশেষন হিসেবে বিবেচিত হবে। আমরা ভাগাভাগিতে নাই,রেষারেষিতে নাই, হিংসা-বিদ্বেষে নাই। আমরা একসঙ্গে চলেছি। বিএনপি আমাদের প্রধান মরুব্বী। তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা, আমাদের ধন্যবাদ। তাদের কাছ থেকে আমাদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, পরিকপক্কতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের ঘোষিত ১০ দফা এবং ২৭ দফার সমর্থনে আমাদের এই প্রচেষ্ট।”

 

‘১২ দলে নিবন্ধিত দল ২টি’

 

ইবরাহিম বলেন, ‘‘ আমাদের ১২ দলের দুইটি নিবন্ধিত দল আছে। একটা বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ। ২০ দলীয় জোটে ছিলো নিবন্ধিত দল ৪টা।”

 

‘‘ ১২ টি দলের বাকীরা নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছেন। ফলাফল আসতে সময় লাগবে। আমরা দোয়া করছি ফলাফলগুলো ইতিবাচকভাবে দ্রুত হবে।”

 

‘১২ দলের কর্মসূচি ঘোষণা’

 

ইবরাহিম বলেন, ‘‘ ১২ টি দলের অবশ্যই কর্মসূচি থাকবে। ৩০ ডিসেম্বরের পরে আমরা বিভাগীয় শহরগুলোতে যাবো। তবে সেই সিদ্ধান্ত আমরা এখনো সম্মিলিতভাবে নেইনি। কিন্তু ইনশাল্লাহ নেবো।”

 

‘‘ আমরা বিএনপির সকল কর্মের সঙ্গে যুগপত থাকবোই। আমরা যুগপত আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিল করব। আমরা সেদিন বিজয় নগর পানির ট্যাংকের কাছে ইনশাল্লাহ মিলিত হবো দুপুর ২টায়।”   

 

জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির(কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির শাহাদাত হোসেন সেলিম, এনডিপির আবু তাহের, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, জমিয়তে উলামায়ের ইসলামের মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করিম, ইসলামিক পার্টির আবুল কাশেম, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সৈয়দ নুরুল ইসলামসহ নেতৃবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন