২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৬:৫৮:৩১ পূর্বাহ্ন


বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির মেগা প্রজেক্ট
নিউইয়র্কে ১ লাখ লোকের কবরের জায়গা ক্রয়ের সিদ্ধান্ত
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০৭-২০২৩
নিউইয়র্কে ১ লাখ লোকের কবরের জায়গা ক্রয়ের সিদ্ধান্ত বক্তব্য রাখছেন জাহিদ মিন্টু


স্বপ্ন। এই স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। আবার সমষ্টিগত কিছু করতে গেলে স্বপ্ন দেখানোর মানুষ লাগে। স্বপ্ন দেখানোর মানুষ না থাকলে কল্যাণকর এবং মানব কল্যাণে বড় কোনো কাজ করা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে মানুষের কল্যাণে কিছু করতে গেলে বা মানবতার ফেরিওয়ালা হতে গেলে মানসিকতার প্রয়োজন। এই মানসিকতা সব মানুষের মধ্যে থাকে না। তারা নিজের সুখ-শান্তি নিয়েই ব্যস্ত থাকে। মানব কল্যাণ তাদের চিন্তা-চেতনা এবং মননে থাকে না, সব সময়ই নিজ কল্যাণ নিয়ে থাকে। কিন্তু সমাজে কিছু মানুষ থাকেন, আল্লাহ যাদের মানব কল্যাণের জন্যই মনে হয় প্রেরণ করে থাকেন। সেই সব মহতী মানুষের কারণে ব্যক্তি, সমাজ এবং রাষ্ট্র আলোকিত হয়। তারা থাকেন প্রচারবিমুখ। নীরবে নিবৃত্তে তারা কাজ করে যাচ্ছেন বিরামহীনভাবে। এই রকমই একজন মানুষ হচ্ছেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং কমিউনিটির অত্যন্ত প্রিয় মুখ জাহিদ মিন্টু। যার ব্রত সব সময় অসহায় মানুষের পাশে থাকা, ভালো কাজে এগিয়ে আসা, কমিউনিটির কল্যাণে কাজ করা। যিনি নিজের প্রাপ্তি নিয়ে চিন্তা করে মানুষের প্রাপ্তি নিয়ে চিন্তা করেন। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর কাজ করেন। তাতেই তার প্রাপ্তি এবং তৃপ্তি। সত্যি কথা বলতে কী তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করেন। বিশাল এক হৃদয়ের অধিকারী জাহিদ মিন্টু যিনি শুধু বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীর জন্য নয়, এবার এগিয়ে এসেছেন প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য। হাতে নিয়েছেন এক মেগা প্রজেক্ট। নেতৃত্বে থাকবেন তিনি, আর আয়োজনে থাকবে প্রবাসের অন্যতম আদর্শিক সংগঠন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি।

বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির কার্যকরি কমিটি, ট্রাস্টি বোর্ড এবং উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভায় এই মেগৎঘা প্রজেক্ট করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই মেঘা প্রজেক্টটি হচ্ছে নিউইয়র্কে বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় ১ লাখ কবরের জায়গা ক্রয় করা। যৌথ সভাটি গত ২১ জুলাই সন্ধ্যায় ব্রুকলিনের নোয়াখালী সোসাইটির প্রথম ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্বে করেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক এবং প্রথম অংশ পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ইউছুপ জসীম। পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা এবং সমন্বয় করেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু। নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর জাহিদ মিন্টু সাংগঠনিক কর্মকা- থেকে একটু দূরে থাকলেও তিনি এই মেগা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করেন। জাহিদ মিন্টু নিজে একজন সফল মানুষ, আবার মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের জন্য তিনি পেয়েছেন একটি উদার মানবিকতাসম্পন্ন এবং সাহসী কমিটি। যাদের কারণেই জাহিদ মিন্টু সংগঠনের যে কোনো কাজে সফল হয়েছেন, গর্বিত করেছেন বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীকে। যাদের ভরসারস্থল জাহিদ মিন্টু। যৌথ কমিটির নির্ভরতার প্রতীক জাহিদ মিন্টু ২১ জুলাইয়ের যৌথসভায় এই মেগা প্রজেক্টের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি জানালেন ২০২২ সাল থেকেই এই মেগা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ শুরু করেন। কয়েকটি জায়গা পরিদর্শন করার পর এই জায়গাটিই তাদের পছন্দ হয়। এই জায়গা পরিদর্শন করেন সাধারণ সম্পাদক ইউছুপ জসীম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মাইন উদ্দিন মাহবুবসহ অন্যরা। এই প্রজেক্ট ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ড থেকে ৮৫ মাইল দূরে ইতিমধ্যেই আইনজীবী নিয়োগ করেছেন। জায়গা পরিদর্শন করেন। মাটি পরীক্ষা করেন। ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই মেগা প্রজেক্টের জায়গার পরিমাণ হচ্ছে ১২৬ একর। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে নিউইয়র্কে বন্যা হলেও এলাকায় পানি ওঠে না। এই জায়গার মধ্যে পাঁচটি মাঠ রয়েছে। যেগুলো বলা যায় খালি জায়গা। কিছু অংশে গাছ রয়েছে। বর্তমানে ১০ একর ব্যবহার করা যাবে। যেখানে প্রায় ৫২ হাজার কবর দেওয়া যাবে। পরবর্তী সময়ে ডেভেলপ করলে আরো ৪৫ হাজার করব দেওয়া যাবে। টোটাল কবর হবে প্রায় ৯০ হাজারের ওপরে। তিনি আরো বলেন, এটা শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। এর মালিকানায় থাকবে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি। এই জায়গা ক্রয় করতে এবং ডেভেলপ করতে প্রায় ৪ মিলিয়ন ডলার লাগবে। পুরো অর্থ ক্যাশে দিতে হবে। তবে ক্লোজিং কস্ট লাগবে ২৫ হাজার ডলার। সঙ্গে লাগবে ডিজাইন কস্ট। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ কবর দেওয়া শুরু করা যাবে। কবরের স্থানের জায়গায় একটি ফিউনারেল হোম, একটি মসজিদ এবং একটি বাড়ি ক্রয় করা হবে। এছাড়াও তিনি প্রজেক্টের ভবিষ্যত পরিকল্পনা এবং এর থেকে আয়ের একটি খসড়া সবার সামনে উপস্থাপন করেন। তিনি আরো বলেন, এটি শুধু বৃহত্তর নোয়াখালীবাসীর জন্য নয়, পুরো প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। এটি একটি সেবাধর্মী কাজ, এই কাজ আমরা করে যাবো ইনশাআল্লাহ। আমরা মানব কল্যাণে কাজ করতে চাই। এই সুযোগটি আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার আমাদের করতে হবে। আমাদের সব কিছু ঠিক থাকলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখান থেকে স্বল্প মূল্যে কবর ক্রয় করতে পারেন। এ ছাড়া প্রবাসের বিভিন্ন সংগঠন এখান থেকে স্বল্প মূল্যে কবর ক্রয় করতে পারবেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ওয়াশিংটন মোমেরিয়াল এবং নিউজার্সির মালবরো চেয়ে অনেক কম মূল্যে কবর ক্রয় করা যাবে। এটা সব ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য। তিনি বলেন, এটা একটি ইতিহাস তৈরি হবে। আমেনিকার মতো জায়গায় এতো বড় মুসলিম গোরস্থান সত্যিই ইতহাসও বটে।

পুরো প্রজেক্ট উপস্থাপন এবং প্রজেক্টের ভবিষ্যত তুলে ধরে তিনি সবার মতামত আহ্বান করেন। যৌথ সভায় প্রজেক্টের অবস্থান এবং পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাখ্যা করেন সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসাইন। আরো বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হাজী মফিজুর রহমান, সাবেক কোষাধ্যক্ষ নজির ভান্ডারি প্রমুখ।

উপস্থিত সবাই এই প্রজেক্ট বাস্তবায়নের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করে বলেন, এই সুন্দর কাজে আমরা সবাই একত্রে কাজ করবো বলে আশ্বাস প্রদান করেন। যৌথসভাতেই প্রজেক্ট বাস্তবায়নে সবাইকে কর্জে হাসানা হিসেবে অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। যার পরিমাণ প্রায় ৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে সংগঠনের ফান্ড থেকে ১ লাখ ডলার দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। বাকি অর্থের জন্য আরো লোকজনের কাছে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-খোকন মোশাররফ, রফিকুল ভুইয়া, শাহ জাহান কবীর, আব্দুর রব চৌধুরী, মোমিনুল হক, রমেশ নাথ, মাহমুদুল হক,  নূরুল ইসলাম, শাহ নাসের, জামাল উদ্দিন, জাহাঙ্গীর আলম, শাহ আলম, মোহাম্মদ এম হোসেন, সুভাষ মজুমদার, জেড এম আমানত, আবুল কালাম, গোলাম সরওয়ার, মোহাম্মদ এন হক মানিক, মোহাম্মদ আবুল কালাম প্রমুখ।

শেয়ার করুন