২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০১:৫১:১৯ অপরাহ্ন


‘স্পার্টা ১১১’ কী বার্তা দিলো
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০১-২০২৩
‘স্পার্টা ১১১’ কী বার্তা দিলো রাশিয়ান জাহাজ


রুশ পতাকাবাহী ‘স্পার্টা ১১১’ এশিয়ার এ অঞ্চলে এক নতুন বার্তা রেখে দিয়ে গেছে। দীর্ঘদিন থেকেই এশিয়ার এ অঞ্চলে পরাশক্তির আধিপত্য নিয়ে যে লড়াই, যার একপ্রান্তে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশসমূহ। অন্যপ্রান্তে রাশিয়া, চীনসহ তাদের মিত্র। তবে বাংলাদেশ, ভারত কোন দিকে এটা স্পষ্ট ছিল না তেমন। বাংলাদেশ সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক নয় এমন নীতি নিয়ে চলে। সেটা এখনও রয়েছে। ভারত সাধারণত সব সাইটেই ম্যানেজ করে চলার কৌশল নিয়ে চলে। তাছাড়া ভারতও যেহেতু এ অঞ্চলে অনেক বেশি ক্ষমতাশালী।  কিন্তু এবারে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে যন্ত্রপাতি নিয়ে আসা রুশ পতাকাবাহী জাহাজ ‘উরসা মেজর’ যা প্রকারান্তে ‘স্পার্টা ১১১’ এটা নিয়ে রাশিয়া নীতিতে বাংলাদেশ ও ভারতের অবস্থান কিছুটা পরিষ্কার হয়ে গেছে। কারণ স্পার্টা ১১১ মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্যাঙ্কশন পাওয়া জাহাজসমূহের একটি। এটা রঙ ও কাগজ বদল করে বাংলাদেশে এসেছিল রূপপুরের মালামাল নিয়ে। বাংলাদেশে নোঙর করার আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খবর পাঠায় এটা উরসা মেজর নয়, এ জাহাজ মূলত ‘স্পার্টা ১১১’, যা মার্কিন স্যাঙ্কশন পাওয়া। এরপরই বাংলাদেশ এটাকে বাংলাদেশ স্পর্শ করতে দেয়নি। অপেক্ষার পর সেটা চলে যায় ভারতে। সেখানেও ভারত প্রথম রাশিয়াকে আশ্বাস দিলেও পরে ভারতও সেখানে নোঙর করতে দেয়নি বা মাল খালাস করতে দেয়নি। এরপরই ওই জাহাজ ফিরে গেছে রাশিয়ার উদ্দেশ্যে। 

ঘটনার এখানেই শেষ নয়, মূলত ‘স্পার্টা ১১১’-এর এ বাংলাদেশে আসা ও ভারত হয়ে যাওয়া ফিরে যাওয়া নিয়ে আবারও স্পষ্ট হলো এ অঞ্চলে মার্কিন কর্তৃত্ববাদীর আধিপত্য। ইউক্রেন, রাশিয়া ইস্যুতে কে কে রাশিয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছে, কে দেয়নি। কে নীরব থেকেছে সেটা নিয়ে জল্পনাকল্পনা থাকলেও ‘স্পার্টা ১১১’ ইস্যুতে অন্তত বাংলাদেশ ও ভারত আমেরিকার দেয়া স্যাঙ্কশনের সাপোর্টই দিলো। যা সরাসরি চলে গেছে রাশিয়ার বিপক্ষে। 

এদিকে বাংলাদেশ এ ঘটনা নিয়ে ভীষণ বিরক্তও। সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ঢাকা ওয়াশিংটনের সঙ্গে তার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে দিতে চায় না উল্লেখ করে রাশিয়াকে বাংলাদেশে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকা জাহাজ পাঠানোর অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে আশ্চর্যজনক মনে হয়েছে যে রাশিয়া ভালো করে জানার পরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা একটি জাহাজ (বাংলাদেশে) পাঠিয়েছে। তারা কেবল জাহাজটির নাম পাল্টেছে, যা আমরা আশা করিনি।’ এ সময় মোমেন আরও বলেন, ‘আমরা রাশিয়াকে বলেছি যে তারা (মার্কিন) নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা ৬৯টি জাহাজ বাদে তাদের যে কোন জাহাজের মাধ্যমে আমাদের মালামাল পাঠাতে পারে।’ মোমেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের আরো বলেন, ‘আমরা (মার্কিন) নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা (রাশিয়ার) জাহাজগুলোকে গ্রহণ করতে চাই না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।’ 

রুশ পতাকাবাহী জাহাজ- ‘স্পার্টা ১১১’ গত ২৪ ডিসেম্বর কার্গো আনলোড করার জন্য মংলা বন্দরে ভেড়ার কথা ছিল। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে দেশের আঞ্চলিক জলসীমায় পৌঁছলে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এটির বন্দরে ভিড়তে দিতে অস্বীকার করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এর আগে বলেছিলেন যে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠিতে জাহাজটিকে প্রকৃতপক্ষে তাদের নিষেধাজ্ঞাভুক্ত রুশ জাহাজ ‘আরসা মেজর’ বলে বর্ণনা করার পরে এই অস্বীকার করা হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাভুক্ত ৬৯টি রুশ জাহাজের তালিকা অনুসারে আরসা মেজর বা ‘স্পার্টা ১১১’ হলো একটি উভচর/আক্রমণকারী কার্গো জাহাজ (একেএ), যা সরঞ্জাম, পণ্যসম্ভার ও সৈন্য বহনের জন্য তৈরি। জাহাজটির আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংস্থার (আইএমও) সনদ নম্বর: ৯৫৩৮৮৯২, যা প্রকৃতপক্ষে ‘স্পার্টা ১১১’ জাহাজের সনদ নম্বর। এর আগে ৪ জানুয়ারি প্রচারিত খবরে বলা হয়, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা রাশিয়ার জাহাজে করে আনা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল খালাস হবে ভারতের হলদিয়া বন্দরে। পরে সেখান থেকে সেই পণ্য সড়কপথে বাংলাদেশে পাঠাবে এজেন্ট। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল খালাসে ১৪ দিন অপেক্ষা করেছে জাহাজটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দিল্লির অনুমতি না পাওয়ায় ফিরে গেছে। 

কূটনৈতিক সূত্র জানাচ্ছে, ‘দিল্লির সিগনাল পেয়েই বাংলাদেশে খালাস করতে না পারা ‘স্পার্টা১১১’ ভারতে মালামাল খালাসের সিগনাল পেয়ে সেখানে যায়। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র সহকারী বাংলাদেশে আসার আগে দিল্লিতেও সফর করেন। ধারণা করছে ওই সূত্র যে ডোনাল্ড লু’র আলোচনার পরই দিল্লি আর মালামাল খালাস করতে দিতে রাজি হয়নি। 

গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট মেরিন ট্র্যাফিকের তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ার পতাকাবাহী ওই জাহাজ ৩ জানুয়ারি সকালে বঙ্গোপসাগরের লোয়ার অকল্যান্ড চ্যানেলে অবস্থান করছিল। এর আগে কয়েক দিন ধরে জাহাজটিকে বঙ্গোপসাগরের গভীরে ভাসতে দেখা গেছে।

শেয়ার করুন