২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৩:৩৬:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


তৃণমূলে মনোবল চাঙ্গায় বিএনপির চোখ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০১-২০২৪
তৃণমূলে মনোবল চাঙ্গায় বিএনপির চোখ


তৃণমূলে মনোবল চাঙ্গা করতে প্রাণান্ত চেষ্টা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের। দীর্ঘ আন্দলোনের পরও আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে না পারা বিএনপির স্পষ্ট ব্যর্থতা। সেটা যেভাবেই বিশ্লেষণ করা হোক না কেন। এটা মানতেই হবে বিএনপির চেয়ে আন্তর্জাতিক লবিংয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে। যার ওপর ভর করে এতগুলো প্রভাবশালী দেশের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেও নিজেদের লক্ষ্য হাসিলে সক্ষম হয়েছেন তারা। কবে কোন সরকারের পতন ঘটবে, কীভাবে ঘটবে সেটা পরের কথা। কিন্তু টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এটাই বাস্তবতা এবং বিএনপিকে আবারও একটা বড় আন্দোলনে নামতে হবে যদি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে হয়। সেটা শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও লবিং শক্তিশালী করে। কারণ দেশের রাজনীতিতে এখন স্পষ্ট প্রধান্য বিদেশি বন্ধুপ্রতিমদের। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছারও মূল্যায়ন রয়েছে। 

বিএনপি নির্বাচনের পর কিভাবে আবার চাঙ্গা হবে সে উপায় খুঁজতে ভীষণ ব্যস্ত। ইতিমধ্যে বর্তমান নতুন ‘সরকার পতনে’ নেতাকর্মীদের ‘আশার বাণী’ শুনিয়েছেন দলটির সিনিয়র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ১৫ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের এক অনুষ্ঠানে বিএনপির এ নেতা আশার বাণী শোনান। 

তিনি বলেন, এই বাংলাদেশ যুগ যুগ ধরে অন্যায়ের বিরুদ্ধে, প্রতিবাদ এটি একটি উর্বর ক্ষেত্র বাংলাদেশ। এই পলিমাটি বর্ষাকালে যেমন নরম হয় আবার চৈত্র মাসে এমন কঠিন হয় ওই কাঠিন্যের প্রচণ্ড প্রভাবে অনেক স্বৈরাচার ভেসে গেছে বাংলার পদ্মা, মেঘলা, যুমনা, ধলেশ্বরী, শীতালক্ষায়। শেখ হাসিনার সরকারও আমাদের নদীর স্রোতধারায়, আমাদের পদ্মা-মেঘনার স্রোতে ভেসে যাবে। আজ থেকে মুঘল আমলে বাদশা আকবরের একজন বুদ্ধিজীবী ছিলেন আবুল ফজল তার নাম। তিনি বাংলা সম্পর্কে বলেছেন, বাংলাদেশের ধুলোর মধ্যে বিদ্রোহের ধুলা ওড়ে, এই হচ্ছে বাংলা। শেখ হাসিনা মনে করেছেন প্রভুদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আপনি ক্ষমতায় টিকে থাকবেন। সেই দিন এখন শেষ হয়ে এসেছে। 

রিজভী বলেন, আপনি (শেখ হাসিনা) দেখেছেন, আপনার বিরুদ্ধে যেভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়েছেন আপনার পাতানো প্রহসন জালিয়াতির নির্বাচনে মানুষ ভোট কেন্দ্রে না গিয়ে, মানুষ ভোট বর্জন করে মানুষ যেভাবে বিজয়ের চিহ্ন দেখিয়েছেন, এখান থেকে আপনার উপলব্ধি করা উচিত। আপনি পদ্মাসেতু দেখাবেন, আপনি ফ্লাইওভার দেখাবেন। আর গরিব মানুষ তার সন্তান বিক্রি করবে-গরিব মানুষ সন্তান বিক্রি করা আপনার এই উন্নয়নের মায়াজ্বাল ছেদ করেই এবার জনগণ আন্দোলনে আছে, আন্দোলনে থাকবে এবং সব কর্মসূচি পালন করবে।

পুলিশি নিপীড়ন-নির্যাতন ও গ্রেফতারের মধ্যে মহিলা দলের নেতাকর্মীরা সাহসের সঙ্গে রাজপথে আন্দোলনে থাকায় তাদের সাধুবাদ জানান বিএনপির এ শীর্ষ নেতা। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আশু সুস্থতায় কামনায় এক দোয়া মাহফিল হয়। সেখানে ওই আশাবাদ তার। মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে ও সহসভাপতি নাজমুন নাহার বেবীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা বক্তব্য রাখেন।

বিএনপি কেন আমরা করি এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রিজভী বলেন, কেউ যদি আমাকে প্রশ্ন করতো যে, আপনি বিএনপি করেন কেন? আওয়ামী লীগ বা জাতীয় পার্টি করেন না কেন? যুক্তি একটাই, জবাব একটাই সেটা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। এই দলের নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিএনপি করি নিজেকে গর্ববোধ করি। মামলা-হামলা-কারাগারে যাওয়া, নিপীড়ন-নির্যাতন-রিমান্ডে নেওয়া- একটানা ২৫ দিন রিমান্ডে ছিলাম ২০১৫ সালে, কোনো কিছুই মনে হয়নি। কারণ আমরা মনে হয়েছে আমি যে দলটি করি এটি অত্যন্ত ন্যায়সংগত রাজনৈতিক দল। আমাদের সামনে আদর্শ আছে। 

রেফারেন্সে জাতীয় পার্টি 

জাতীয় পার্টির প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি এ নেতা বলেন, আমাদের সামনে উদাহরণ থাকবে জাতীয় পার্টির। দেখুন এই নির্বাচনে তাদের প্রধান নেতা জিএম কাদের সাহেব কত কথা বললেন না, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন করা যাবে না, এরা গতবার রাত্রে বেলা নির্বাচন করেছেন কত কথা বললেন। তারপরে শুধু নিজের স্ত্রীর (শরীফা কাদের) জন্য গোটা দলকে বিক্রি করে দিলেন এবং তার দলের লোকেরা প্রতি স্লোগান দিচ্ছে। রিজভী বলেন, একজন তরুণ তো বেছে নেবে আদর্শের জায়গা। আওয়ামী লীগ পরশু দিন যা বলবে আজকে তার উল্টো। এখনো অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী কি চিৎকার করে বলছেন যে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, এই হয়েছে, অমুক দেশ এটা পছন্দ না করলেও তারা আমাকে এই করতে চায়, সেই করতে চায়। ওবায়দুল কাদের বলছেন, ষড়যন্ত্র হচ্ছে, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কার করছেন প্রতিদিন। কিন্তু ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনার নেত্রী এরশাদের অধীনে নির্বাচন করেছেন এই পার্লামেন্টে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আপনার নেত্রী নির্বাচনে গেলো। দেশের তরুণ সমাজ আওয়ামী লীগ করবে কেন? তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করলেন ঘরবাড়ি পুড়িয়ে, মানুষ হত্যা করে আন্দোলন করলেন। তারপর এবার ক্ষমতায় এসে ২০১৩ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দিলেন। আপনাদের দাবি আপনারা বাতিল করলেন আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য। 

‘খালেদা জিয়া আপসহীন’ 

বিএনপির নেতা রিজভী বলেন, অর্থাৎ যারা ব্যক্তিগত স্বার্থে দল বিক্রি করে দেয়, জাতীয় পার্টি আর যদি আওয়ামী লীগ করতে হয়, নিজেকে আগে মুনাফেক হতে হবে, যে মুনাফেক হতে পারবে সে আওয়ামী লীগ করতে পারবে। সেই জায়গায় হিমালয় পর্বতের মতো যিনি নিজের কথায় ও আদর্শে অটুট জনগণকে যে ওয়াদা করেন সেই ওয়াদার প্রতি, যিনি রকি পর্বতমালার মতো শক্ত থাকেন, যিনি বারবার সমস্ত স্বৈরাচারীর অত্যাচার মোকাবিলা করেন, যাকে এই বাংলার মৃত্তিকা থেকে বিদেশে ঠেলে দিতে পারেনি। আমরা সেই নেত্রীর দল করি বলে আজকে আমরা গৌরবান্বিত, মহিমান্বিত। কারণ এই যে নিপীড়ন-নির্যাতন-মামলা তারপরও মনে করি, যে আমরা একজন অটুট মনোবলের আদর্শবাদী একজন নেত্রীর তার পক্ষে আমরা রয়েছি। আমরা যে গণতন্ত্রের পক্ষের পতাকা উদ্দিনকারী একটি দল, আমরা যে আদর্শের পক্ষের একটি দল...এই দলকে কখনোই ম্লান করা যাবে না, এই দলকে কখনোই মুছে দেওয়া যাবে না, এই দলকে কখনোই ধ্বংস করা যাবে না।’ 

‘আইনমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন’ 

রিজভী বলেন, ‘আপনারা জানেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার ভলকার টার্ক তিনি বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখানকার আদালত নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। আমাদের যে আইনমন্ত্রী একেবারে খাস, প্রধানমন্ত্রীর একজন মোসাহেব এবং যিনি প্রতিদিন বিএনপি কতটুকু নির্যাতিত হচ্ছে, এটা না শুনে ঘুমাতে যান না সেই অ্যাডভোকেট আনিসুল হক সাহেব তিনি বলেছেন, টার্ক সাহেবের বিবৃতির মধ্যে তথ্যের ঘাটতি আছে। আইনমন্ত্রী সাহেব... উনি মিথ্যা কথা বলতে পারেন বলেই আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী। তিনি সত্য কথা বললে তো আওয়ামী লীগ করতেন না। আপনার কি মনে নেই- এই যে মাত্র কয়েক দিন আগে সাবেক কৃষিমন্ত্রী যাকে এবার মন্ত্রিত্ব দিলেন না, ড. আবদুর রাজ্জাক সাহেব, তিনি কি বলেছিলেন? এই যে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরীসহ ২০ হাজার নেতাকর্মী কারাগারে, তারা যদি সরকারের শর্ত, নির্বাচনে আসার শর্ত মেনে নিতেন তাহলে তারা কেউ কারাগারে থাকতেন না। তাহলে বিচার কোথায়? আইন কোথায়? মিথ্যা মামলা দিয়ে জাতীয় নেতাদের, হাজার হাজার নেতাকর্মীদের কারাগারে রেখে দিলেন... এটা তো আপনাদের মন্ত্রী বলে দিলেন।’ তিনি বলেন, ‘দুই-একজন সুবিধাবাদী সব সময় থাকে...শাহজাহান ওমর (বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান যিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী) সাহেব সেই শর্ত মেনে নিয়েছিলেন বলে তিনি জেল থেকে বেরিয়ে একতরফা নির্বাচনে এমপি হলেন শেখ হাসিনার সিলেকশনে। তাহলে কোথায় আপনার এতো লোক, কোথায় আপনার বিচার।’

শেয়ার করুন