২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৫:১২:২১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


এনডিআই ও আইআরআইয়ের রিপোর্টে বিব্রত সরকার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৩-২০২৪
এনডিআই ও আইআরআইয়ের রিপোর্টে বিব্রত সরকার ভোটদানের দৃশ্য


ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিআই) ও ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দুই নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা ১৬ মার্চ বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রকাশিত ২৯ পৃষ্ঠার কারিগরি পর্যালোচনা প্রতিবেদন পেশ করেছেন। তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রীয়, সরকারদলীয় ও বিরোধীদলের সংঘাত, বিরোধীদলের অনুপস্থিতি ও নাগরিক স্বাধীনতা সীমিত করা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার অবনতির মতো বিষয়গুলো নির্বাচনের গুণগতমান ক্ষুণ্ণ করেছে।

নির্বাচন চলাকালীন ও পরবর্তী সম্ভাব্য নির্বাচনী সহিংসতা পর্যবেক্ষণে কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছিল এনডিআই ও আইআরআই। সেই প্রতিনিধি দলের যৌথ প্রতিবেদনে নির্বাচন নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।

তবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, ‘সাতই জানুয়ারির নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে এবং সব প্রতিবন্ধকতা ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল ‘আশাব্যঞ্জক’। এর আগে নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কারিগরি দলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সাতই জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করতে ব্যর্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন।

তবে এনডিআই ও আইআরআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় নির্বাচনের দিন কিংবা প্রচারণার সময় সরাসরি কিংবা অনলাইনে সহিংসতার ঘটনা আগের যেকোনো নির্বাচনের তুলনায় কম হয়েছে। আর এর কারণ হিসেবে নির্বাচনে কার্যকর প্রতিযোগিতার অনুপস্থিতি ও নিরাপত্তার বিষয়ে সরকারের বিশেষ মনোযোগের বিষয়টিকেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে প্রাপ্ত ফলাফল

এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে সংস্থাটির একটি যৌথ প্রাক-নির্বাচনী মূল্যায়ন মিশন চারদিনের সফরে বাংলাদেশে যায়। তাদের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিনিধিদল (টিএএম) পাঠায় এনডিআই ও আইআরআই। সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীজন এই প্রতিনিধিদলগুলোকে জানিয়েছে, সরকারের সমালোচনা করা হলে পরবর্তীতে তার নেতিবাচক ফলাফল ভোগ করার আশঙ্কা রয়েছে।

আলোচনায় এই অংশীদাররা নির্বাচনে বিভিন্ন পক্ষের সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করলেও নির্বাচন ঘিরে বিশেষ সতর্কতা তাদের আলাপে প্রভাব ফেলার সম্ভাবনার দিকটিও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্বাচনী নিরাপত্তা নিশ্চিতে বরাদ্দ বাড়ানো, দীর্ঘসময় ধরে অধিকসংখ্যক নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ ও তাদের মধ্যে সমন্বয়সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিল বাংলাদেশ সরকার। তবে প্রতিবেদনে ক্ষমতাসীন দলের অনুকূলে অসম নিয়ম প্রয়োগের অভিযোগের বিষয়টি উঠে এসেছে।

নির্বাচনী সহিংসতা

নির্বাচনে দুই ধরনের সহিংসতার বিষয়ে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। একটি হলো নির্বাচনে প্রতিযোগিতায় থাকা প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতা। সেক্ষেত্রে নির্বাচনী প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সহিংসতায় জড়াতে দেখা গেছে। যদিও বিএনপির আগের প্রার্থীদেরও হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচন ঠেকাতে বিরোধীদল অনবরত অহিংস কর্মসূচির ঘোষণা দিলেও কখনো কখনো তা অগ্নিকা-, শারীরিক হামলা ও ভাঙচুরের দিকেও গড়িয়েছে। এতে এক পুলিশ সদস্যের মৃত্যুর ঘটনা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্বাচনী সহিংসতা ও প্রান্তিক গোষ্ঠী

হিন্দু ও নারীসহ প্রান্তিক গোষ্ঠীও এই নির্বাচনে সহিংসতার মুখে পড়েছে বলে তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিশেষ করে নারী প্রার্থীরা সরাসরি এবং অনলাইনে পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বী ও তাদের অনুসারীদের দিয়ে অপমান ও হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দেওয়া হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলেও নারী প্রার্থীদের অভিযোগ রয়েছে। তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রান্তিক গোষ্ঠীর ওপর এবার হওয়া নির্বাচনী সহিংসতা আগের নির্বাচনগুলোর তুলনায় কম ছিল। এছাড়া নির্বাচনের দিন ঐচ্ছিকভাবে ইন্টারনেটের গতি কমানোর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্বাচনের দিন সহিংসতা

নির্বাচনের দিন কিছু সহিংসতার ঘটনা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও প্রতিনিধিদল পুলিশের থেকে নির্বাচনের দিন হওয়া সহিংস ঘটনার সংখ্যা সংগ্রহ করতে পারেনি, তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের দিয়ে আচরণবিধি ভাঙার ১৭২টি অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ ৮৩টি স্থানে ২৩০টি সহিংস ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। নির্বাচনের দিন সহিংসতায় মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য উঠে এলেও একাধিক গণমাধ্যম সূত্রে দুই জনের মৃত্যুর খবর এসেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পর্যবেক্ষক সংস্থার সুপারিশ

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত নির্বাচনের তুলনায় ২০২৪ সালের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কম সহিংসতা দেখা গেলেও এতে উল্লেখযোগ্য শূন্যস্থান ও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ফলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনে সহিংসতা প্রশমিত ও মোকাবিলা করতে প্রতিবেদনে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে এনডিআই ও আইআরআই। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সংস্থা, শারীরিক সহিংসতা, নারী ও প্রান্তিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতা ও তথ্যবিষয়ক পরিবেশ নামে প্রতিবেদনে চারটি ভাগ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, আইনি কাঠামো পরিবর্তন করে সংসদ, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।

একই সঙ্গে নির্বাচনে নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জন্য নির্বাচন কমিশনের একটি নিবেদিত আচরণবিধি তৈরি করা ও তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। ভোটারদের ভয় দেখানো কিংবা তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা রুখতে নির্বাচন কমিশন ও অন্যান্য সরকারি সংশ্লিষ্টদের আইনপ্রয়োগ এবং তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। নারী এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ঘটা ঘটনাগুলোর দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত করা। প্রথাগত মাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে নারী ও অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সহিংসতার হুমকিসহ এবং নির্বাচনী আইন ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য অভিন্ন পদ্ধতিতে অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। একইসঙ্গে নির্বাচন সংক্রান্ত ক্ষতিকর ও হিংসাত্মক বক্তৃতা মনিটর করা।

কী বলছে ক্ষমতাসীন দল?

৪২ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সাতই জানুয়ারির নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ছিল বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাক বাহাউদ্দিন নাছিম। এমনকি অনেকে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের আশঙ্কা করলেও সব প্রতিবন্ধকতা ও ভয়ভীতি উপেক্ষা করে নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতিতে ‘আশাব্যঞ্জক’ বলছেন এই নেতা। তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে যেহেতু তুলনামূলকভাবে অন্যান্য নির্বাচনের চেয়ে সহিংতা কম হয়েছে, ভোটাররা স্বচ্ছন্দে ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দিয়ে বাড়িতে যেতে পেরেছে। এনিয়ে ভোটারদের কোনো অভিযোগ-অনুযোগ ছিল না। বরং ভোটাররা ভোট দেয়ার মাধ্যমে স্বস্তি প্রকাশ করেছে।’

এনডিআই ও আইআরআইয়ের প্রতিবেদনে নির্বাচনের গুণগত মান নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, ‘একেক দেশ একেক আঙ্গিকে একেক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্বাচন নিয়ে মূল্যায়ন করে থাকে এবং এটা যার যার অবস্থানগতভাবে তারা করতেই পারে। এই অধিকার তাদের আছে।’

‘যারা বিভিন্ন আঙ্গিকে আলোচনা পর্যালোচনা অথবা বিভিন্ন মতামত ব্যক্ত করেছেন, সেটা থেকেও আমরা জানার এবং বোঝার চেষ্টা করি। তবে এটা ঠিক, এই নির্বাচন বানচাল করতে যারা চেয়েছিল, সেক্ষেত্রে দেশি-বিদেশি নানা ধরনের চক্রান্তকে উপেক্ষা করে যে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে, সেই নির্বাচন নিয়ে মূল্যায়ন থাকতেই পারে। সেটার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্বাচন হয়েছে এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ আছে। এটাকে আমরা সবচেয়ে গুরুত্ব দেই।’ একই সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা হলে সেখান থেকে পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।

তিনি বলেন, ‘যারা আলোচনা সমালোচনা করে, তাদের বিষয় থেকেও আমরা বোঝার চেষ্টা করবো। এটা নিয়ে কোন কোন জায়গায় ভুলত্রুটি হয়েছে বলে প্রতিবেদন দিয়েছে, সে জায়গাগুলো আসলেই হয়েছে কি না, যদি হয়ে থাকে অবশ্যই সেগুলো আগামীতে যেন না হয় সেই চেষ্টা সবার পক্ষ থেকে নেবে, আমরাও নেবো।’

শেয়ার করুন