৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ৬:৩৭:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


পর্দার আড়ালে কী বার্তা উজরা লু’র
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৭-২০২৩
পর্দার আড়ালে কী বার্তা উজরা লু’র ঢাকায় উজরা জেয়া (বাঁ থেকে দ্বিতীয়) ও ডোনাল্ড লু (বাঁ থেকে প্রথম)


একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ মোটেও কাম্য নয়। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ কালচার যেন এখন অপরিহার্য। বাংলাদেশের মানুষ এখন বুঝতে সক্ষম, যে নিজেদের মধ্যে যখন ঐক্য থাকবে না, তখন অন্যদের এমন অনুপ্রবেশকে উৎসাহিত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাতিসংঘের যে উদ্যোগ, বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের সেটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেকটাই গ্রহণযোগ্য মনে করেন দেশের অধিকাংশ মানুষ। বিশেষ করে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও দুই পক্ষের বহু মিত্র দল বা জোট একসঙ্গে বসে পলিটিক্যাল ক্রাইসিস উত্তরণের বৈঠকটি পর্যন্ত করতে রাজি হচ্ছেন না, তখন সাধারণ নাগরিকদের কাছে ওইসব বন্ধুপ্রতিম দেশের রাজনৈতিক সালিস মানাটা অযৌক্তিক মনে করছেন না। বিশেষ করে সন্ত্রাস, আগুন, মানুষ পুড়িয়ে মারা, নাগরিক জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত কেড়ে নিয়ে হরতাল ধর্মঘটসহ দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি যাতে না হয় সে লক্ষ্যে। 

অতীত অমন বহুকিছুর সাক্ষী দেশের মানুষ। তারা আবারও অমন ঘটনার অবতারনা চায় না। 

তাহলে কী হতে যাচ্ছে? 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বক্তব্য অনেকটাই একই। দীর্ঘদিন থেকেই তারা বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে এ ধরনের কথাই বলে আসছেন। এরপর আবারও মার্কিন শীর্ষ কর্মকর্তাবৃন্দ সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে এসে চারদিনের সফর করে একই কথা বলবেন তারা সেটা কেউই বিশ্বাস করে না। ইতিমধ্যে অনেকেই মন্তব্য করছেন, পর্দার আড়ালেও হয়তো কঠোর কিছু নির্দেশনা তারা দিয়ে গেছেন। যদি সেভাবে সবকিছু না হয়, তার অর্থ গতানুগতিক সেই ২০১৪ ও ২০১৮ সনের নির্বাচনের ন্যায় আরো একটি নির্বাচনের পানে এগিয়ে যাওয়া এটাই তো বাস্তব। কিন্তু সে ব্যপারে তারা কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়ে গেছেন। যা তাদের প্রকাশ্যে বলা কথাতেই স্পষ্ট। 

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া তার দীর্ঘ বক্তব্যের চুম্বক দুটি অংশ নিয়ে কথা বলি। তিনি বলেন, ‘আমি সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে, সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও ন্যায্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করতে সব পক্ষের আহ্বান জানাই।’  তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দিই।’ 

উজরা জেয়ার এ দুটি বক্তব্যের মধ্যেই অনেক কিছু নিহিত। সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের অর্থ সব দলের অংশগ্রহণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। সেটা হতে হলে কী লাগবে সেটা সবারই জানা! বিএনপিসহ সমমনাদেরও নির্বাচনে নিয়ে আসতে হবে। তাদের দাবিটা মানতে হবে। নতুবা বিএনপি তো আসবে না। বিএনপি না এলে মার্কিনিদের প্রত্যাশার সঙ্গে আর মিললো না। ফলে বিএনপিকে নির্বাচনে আনার দায়িত্বটা এখন ক্ষমতাসীন দলের। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন আরো একটি কথা-‘আসুন, আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দিই।’ এটা তো বাংলাদেশের জনগণকে তিনি বলেননি। বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যারা-চীন, রাশিয়াসহ ভিন্নমত পোষণ করেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হয়তো তাদের উদ্দেশ্যে। কারণ সদ্য ওই সব দেশ মার্কিনিদের বর্তমান উদ্যোগের বিরোধিতা করছেন।  

এটা তো ঠিক, একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনৈতিক ভাষা অত্যন্ত সরল, সহজ। সেটাতে কোনো ভ্যাজাল খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু যে কথা বলতে তারা সুদূর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে এসেছিলেন, সে ভাষা সহজ-সরল হলেও আড়ালে থাকছে একটা কঠোরতা, সেটা যারা বোঝার ঠিকই বুঝে গেছেন। মার্কিনিদের প্রসঙ্গে একটা প্রবাদ রয়েছে। যে তারা তাদের প্রধান শত্রুর সঙ্গেও প্রকাশ্যে খুবই মোলায়েম ভাষায় সমাদর করে কথা বলেন। কিন্তু কথা বলার স্থান-কাল-পাত্রটা বিশ্লেষণ করলে ভয়াবহত ঠাহর করা যাবে। 

ফ্লাশ ব্যাক ৫ ডিসেম্বর, ২০১৩ 

ভারতের শীর্ষ কূটনীতিক সুজাতা সিং বাংলাদেশ সফর করেন। ২০১৩ সনের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে অর্থাৎ এক মাস আগে বাংলাদেশ সফর করা ও রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে বৈঠক বিশেষ করে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে অনেক কথা রয়েছে। যদিও বিএনপির পাশাপাশি সে সময় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ‘মিত্র’ হিসেবে পরিচিত এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টিও নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা থেকে তার দলের মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছিলেন এরশাদ। এমনকি ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর এরশাদ সাংবাদিকদের বলেন, “আমার শেষ কথা হচ্ছে, আমি নির্বাচনে যাচ্ছি না।” এরশাদ আরো বলেছিলেন, তার সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন না হলে ‘অগণতান্ত্রিক শক্তি কিংবা জামায়াত-শিবিরের’ উত্থান ঘটতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সুজাতা সিং। “আমি তাকে বলেছি। জামায়াত-শিবিরের উত্থান হোক, এটা আমিও চাই না। যদি উত্থান ঘটে, তাহলে সে দায় সরকারের, আমার নয়।” এরপর জাতীয় পার্টির অংশ নেওয়া। রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা। বাকি কথা সবার জানা। 

ওই সফরে সাংবাদিকদের কাছে সুজাতা এই ভ্রমণকে কেবল ‘শুভেচ্ছা সফর’ বললেও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ধরেই নিয়েছিলেন তিনি সুস্পষ্ট এক বার্তা বহন করে নিয়ে এসেছিলেন দিল্লি থেকে। প্রকাশ্যে ওই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট অচলাবস্থার মধ্যে সুজাতার সফর ছিল সংকট উত্তরণে ভারতীয় চেষ্টার অংশ। এরপর যথারীতি ভোট হয়ে যায়। তার আগে তার সফরকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে বৈঠক করে সুজাতা সাংবাদিকদের বলে গেলেন, ‘সর্বোচ্চ’(!)  সংখ্যক দলের অংশগ্রহণে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন দেখতে চায় ভারত, যার ফলাফল বাংলাদেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। 

তিনি বলেন, “আমরা চাইব, এমন একটি নির্বাচন হবে, যেখানে জনগণ তাদের মতামতের প্রতিফলন স্বাধীনভাবে ঘটাতে পারবে।” তার ভাষা ছিল-ভারত তার স্বার্থেই স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশ দেখতে চায়, সেই সঙ্গে চায় যেন প্রতিবেশী দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। সুজাতা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গণতন্ত্র চর্চার ধরন ভিন্ন। এক দেশের সঙ্গে এক দেশের মিল নাও থাকতে পারে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধরন কী হবে এই দেশের মানুষই তা ঠিক করবে।

“নির্বাচন না হলে আপনারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার রীতি কীভাবে গড়ে তুলবেন? গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যেই আপনাদের নির্বাচন হওয়া দরকার।” বলেছিলেন সুজাতা সিং। 

উল্লেখ্য, আজকের বাংলাদেশের অবস্থার ন্যায় ২০১৩ সনে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই প্রধান দলের মুখোমুখি অবস্থানে দেশে যখন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে তখনই আকস্মিক এই সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের টানা অবরোধে বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি রেলপথে চলছে ধারাবাহিক নাশকতা। সে সময় শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সে সময়ও সুজাতা সিং বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সফলতার’ প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।  

প্রেক্ষাপট ২০২৪ জাতীয় নির্বাচন 

এবার ভারত একেবারেই নিশ্চুপ। এবার ভোটের অধিকার তথা গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করতে বাংলাদেশে একের পর এক সফর করছেন মার্কিন প্রতিনিধি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন। 

সর্বশেষ, মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার বাংলাদেশ সফর নিয়ে তোলপাড় যাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। অবশ্য এবার একেবারে নির্বাচনের আগে এসেছেন তারা তা নয়। এখনও মাস ছয়েকের মত সময় বাকি নির্বাচনের। তবে এমনি মুহূর্তে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক মতবিরোধ নিরসনে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের প্রত্যাশা জানিয়েছেন সফররত মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। বাংলাদেশ সফরে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ ছাড়াও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন উজরা জেয়া। তবে সাক্ষাত করেননি তারা বিএনপি বা বিরোধী দলসমূহের নেতাদের সঙ্গে। 

দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র তার ভূমিকা রাখতে চায় বলে উল্লেখ করে উজরা জেয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি সরকারের একাধিক মন্ত্রী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। নির্বাচনের আগে বড় দুই দলের মধ্যে সংলাপের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এই মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, ‘আমরা সবাই সংলাপ চাই। তবে এই প্রক্রিয়ায় আমরা সরাসরি যুক্ত নই।’

এর আগে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত মে মাসে নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। তাতে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে না যুক্তরাষ্ট্র।

বাংলাদেশের নির্বাচন ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এই ভিসানীতি ঘোষণার পর দেশটির শীর্ষনেতাদের বাংলাদেশ সফর খুবই তৎপর্যপূর্ণ। কারণ উজরা হলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি। বাংলাদেশে চার দিনের সফরের আগে তিনি ভারত সফর করে এসেছেন। সেখানেও বাংলাদেশ প্রসঙ্গ ছিল বলে গুঞ্জন রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক মানবাধিকার নীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় বলে উল্লেখ করে আজরা তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, শক্তিশালী ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নির্বাচন এবং সুশাসনে ব্যাপকসংখ্যক বাংলাদেশির অংশগ্রহণের ওপর বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎনির্ভর করছে। একটি অংশগ্রহণমূলক এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত সহযোগিতা থাকবে, যেখানে সব নাগরিকের বিকাশ হবে।

নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র আরো কঠোর ব্যবস্থা নেবে এমন আলোচনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উজরা জেয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারত্বের স্বীকৃতি দিতে আমি এখানে এসেছি। যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পর্ককে আরো নিবিড় করতে চায়। অবাধ ও মুক্ত ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগর প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’

যুক্তরাষ্ট্র ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে আরো নিবিড় করতে চায় উল্লেখ করে উজরা জেয়া বলেন, ‘আগামী ৫০ বছর এবং তার পরের দিকে আমরা তাকিয়ে আছি। জলবায়ু পরিবর্তন, উন্নয়ন সহায়তা, অর্থনৈতিক, মানবিক সহায়তা এবং নিরাপত্তা খাতে আমাদের যে সহযোগিতা, তা সম্পর্কের শক্তিমত্তা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।’

উজরা জেয়া জানান, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেছেন। সাংবাদিকেরা যাতে অবাধে এবং কোনোরকম ভয়ভীতি এবং নিপীড়নের শিকার না হয়ে কাজ করতে পারেন, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। গণতন্ত্রে নাগরিক সমাজ গুরুত্বপূর্ণ যে ভূমিকা পালন করে, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। 

ইউএনবিকে সাক্ষাৎকারে উজরা জেয়া 

বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সহিংসতা পরিহার করে সত্যিকারের শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, ‘আমি সহিংসতা প্রত্যাখ্যান করে সত্যিকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও ন্যায্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করতে সব পক্ষের আহ্বান জানাই।’ তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা বাংলাদেশের জনগণকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ করে দিই।’

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি স্পষ্ট করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে সমর্থন করা। সম্ভাব্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা বর্জনের বিষয় বাংলাদেশের জনগণের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে মন্তব্য করেন উজরা জেয়া। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা দেখছি না। আমি শুধু বলতে চাই, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিই না।’ ঢাকায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনে একযোগে কাজ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বলে জানিয়ে জেয়া বলেন, এক্ষেত্রে সুশীল সমাজ, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহি এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস যা জানালো 

এদিকে বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস বলে, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বার্মা এবং বাংলাদেশের উদ্যোগগুলোর সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরো ৭৪০ কোটি টাকারও বেশি (৭৪ মিলিয়ন ডলার) অনুদানের ঘোষণা করেছেন, যার মধ্যে প্রায় ৬১০ কোটি টাকা বার্মায় অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তাদের আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী ও অন্যদের সহায়তার জন্য দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে ২০১৭ সাল থেকে এই অঞ্চলে রোহিঙ্গা ও তাদেরকে আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠীর জন্য আমেরিকার সহায়তার পরিমাণ ২১ হাজার কোটি টাকা ছাড়ালো।

এছাড়াও আন্ডার সেক্রেটারি জেয়া ফ্রিডম ফান্ড এবং এর অংশীদারদের জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে ১০ কোটি টাকারও বেশি (১ মিলিয়ন ডলার) অনুদান ঘোষণা করেন। এই টাকা মানব পাচারকারীদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া ৫০০-এরও বেশি শিশুকে সমাজে পুনঃএকত্রীকরণের কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হবে। যুক্তরাষ্ট্র মানব পাচারের অভিশাপ মোকাবিলায় সরকার এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে নিবেদিতভাবে কাজ করছে। আন্ডার সেক্রেটারি জেয়া বলেন, “ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমাদের লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং গণতন্ত্র সমুন্নত রাখা ও মানবাধিকারের প্রতি সম্মান বজায় রেখে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

শেয়ার করুন