২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৫:৩০:৪২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


দেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৭-২০২৩
দেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই


বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনমনে ব্যাপক উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। দেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভা সম্প্রতি বাসদ (মার্কসবাদী) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বামজোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক ও বাসদ (মার্কসবাদী) দলের সমন্বয়ক মাসুদ রানা। সভায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক কমরেড রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ এর সহ-সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শহিদুল ইসলাম সবুজ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও যাতে একচেটিয়াভাবে ক্ষমতায় আসা যায়, সরকার সে লক্ষ্যেই সকল রকম পদক্ষেপ নিচ্ছে। সম্প্রতি ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে পরিচালকদের মেয়াদ ৯ থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করা হয়েছে, খেলাপিদেরও নতুন ঋণ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ সংশোধন করে, মনোনয়ন পত্র দাখিলের আগেরদিন পর্যন্ত খেলাপি ঋণ পরিশোধের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। সরকারি চাকরি (সংশোধন) বিল ২০২৩ পাশের মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি, স্বশাসিত সংস্থা, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সরকারের অধীন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সরকারি কর্মচারিদের নামে কোন ফৌজদারি অভিযোগ থাকলেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পারবে না। তাদের গ্রেফতার করতে হলে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগবে।  

ব্যাংক কোম্পানি আইন ও আরপিও সংশোধনের মধ্য দিয়ে সরকার দেশের ব্যাংক লুটপাটকারী ধনিক গোষ্ঠীকে আরও লুটপাটের সুযোগ করে দিল শুধু নয়, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে যাতে কোন বাধা সৃষ্টি না হয় সে ব্যবস্থাও করে দিল। অপরদিকে সরকারি চাকরি বিল সংশোধনের মাধ্যমে আমলাদের কর্তৃত্ব আরও পাকাপোক্ত করা হল। তাদের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করা হল।

গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ আইনে আরেকটি সংশোধনী আনা হয়েছে যেটি সরকার অনুগত নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতাকে আরও খর্ব করা হয়েছে। আগে নির্বাচনের বিভিন্ন পর্যায়ে অসঙ্গতির কারণে নির্বাচন বাতিল করার যে ক্ষমতা কমিশনের ছিল, সেটা খর্ব করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ফলাফল ঘোষণার পর কমিশন কোন আসনের পুরো ফলাফল স্থগিত করতে পারবে না। শুধু সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করতে পারবে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে কমিশনের ক্ষমতাকে একেবারে শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে নিয়ে আসা হল।

এ সবই একটি সাজানো নির্বাচনের চক্রান্ত তা সহজেই বোঝা যায়। এইভাবে সাজানো নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় যেতে পারবে না।

সভায় নেতৃবৃন্দ ফ্যাসিবাদী এই সরকারের বিরুদ্ধে গণআন্দোলনে সর্বস্তরের জনগণকে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানান এবং বামজোটের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন। সভায় আরো যারা উপস্থিত ছিলেন তাঁরা হলেন বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার ও শামীম ইমাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ডাঃ ফজলুর রহমান, বাসদ (মার্কসবাদী) দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরামের সদস্য ডাঃ জয়দীপ ভট্টাচার্য ও রাশেদ শাহরিয়ার, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য মোঃ রুবেল। বৈঠকের শুরুতে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতা, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি হামিদুল হক স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এদিকে ৯ ও ১০ জুলাই দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভা সেগুনবাগিচাস্থ’ ভ্যানগার্ড মিলনায়তনে (৫ম তলায়) অনুষ্ঠিত হয়। বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন পার্টি কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান। সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান আওয়ামী সরকার দেশে চরম ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন কায়েম করেছে। বিরোধী মত-পথকে দমনের জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো নিবর্তনমূলক আইন জারি করেছে। নির্বাচন কমিশন, দুদকসহ সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে।

বর্তমান সরকারের অপশাসনে চাল, ডাল, চিনি, আটা, তেলসহ সকল নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলছে, সিন্ডিকেটকে ধরতে গেলে বাজার অস্থিরতা আরো বাড়বে। অর্থাৎ সরকার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল ২০২৩ এর নামে শ্রমিকদের ধর্মঘট করার অধিকার হরণ করার চক্রান্ত করছে। লুটপাটকারীদের সুবিধার্থে ব্যাংক পরিচালকদের ক্ষমতা ৯ বছরের পরিবর্তে ১২ বছর করেছে। আবারো সরকার ক্ষমতায় আসার জন্য বিভিন্ন রকম ফন্দিফিকির করছে। তার অংশ হিসেবে ইতিমধ্যে আরপিও সংশোধনীর মাধ্যমে ইসির ক্ষমতা খর্ব করেছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধিনে নির্বাচনের দাবি জানানো হয়। বর্তমানের দলীয় সরকারের অধিনে নির্বাচন জনগণ মানবে না। সভায় নিন্মোক্ত সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়। তারা বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধিনে নির্বাচন, দ্রব্যমূলের উর্ধ্বগতি রোধ, জ্বালানি খাতে দুর্নীতি-লুটপাট-দুঃশাসন বন্ধ, অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল প্রত্যাহারের দাবিতে ২০ জুলাই ২০২৩ থেকে মাসব্যাপী জেলায় জেলায় কর্মীসভা, সমাবেশ, মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধিনে নির্বাচন, নিত্যপণ্যের দাম কমানো, অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল ২০২৩ বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে আগামী ২৯ জুলাই ২০২৩ দেশব্যাপী বিক্ষোভ দিবস পালিত হবে। আগামী ৭ নভেম্বর ৪৩তম পার্টি প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী জনসভা, সমাবেশ, লাল পতাকা মিছিলসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হবে।

শেয়ার করুন