০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ০৬:২৯:৩৫ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশে চাচাকে খুন : নিউইয়র্কে ভাতিজা গ্রেফতার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২৪
বাংলাদেশে চাচাকে খুন : নিউইয়র্কে ভাতিজা গ্রেফতার নিহত চাচা মাইকেল রোজারিও এবং জব্দ করা বন্দুক


বাংলাদেশে সংঘটিত মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ২০২১ সালে আমেরিকান প্রবাসীকে চাচা মাইকেল রোজারিওকে খুন করার অভিযোগে তারই আপন ভাতিজা আমেরিকান প্রবাসী গ্যানেট রোজারিওকে (৫৩) গত ৩ এপ্রিল ম্যানহাটানে এফবিআই গ্রেফতার করেছে। নিহত চাচা মাইকেল রোজারিও ব্রঙ্কসে বসবাস করতেন। আদালতের নথি অনুসারে, ১১জুন ২০২১ সালে নিউইয়র্কের ব্রঙ্কসের গ্যানেট রোজারিও (৫৩) বাংলাদেশে মাইকেল রোজারিওকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। গ্যানেট রোজারিও তার চাচাকে মাইকেলকে হত্যা করার জন্য একটি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ভাতিজা গ্যানেট রোজারিও ২০২১ সালের ১১ জুন শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় তার আপন চাচা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক মাইকেল রোজারিওকে গুলি করে হত্যা করেন। ফেডারেল আদালতে তার বিরুদ্ধে বিদেশে একজন মার্কিন নাগরিককে হত্যা ও সশস্ত্র সহিংসতার সময় আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে রাখা ও ব্যবহারের বিষয়ে অভিযোগ আনা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

ঘটনাটি মুন্সীগঞ্জ জেলার একমাত্র খ্রিস্টান পল্লী কেয়াইন ইউনিয়নের শুলপুর গ্রামে ঘটেছিল। এ ঘটনায় অভিযুক্ত রোজারিওকে একনলা বন্ধুক ও ৩ রাউন্ড গুলিসহ ঐ রাতেই গ্রেফতার করেছিল বাংলাদেশ পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশ জানায়, শুলপুর গ্রামের মাইকেল রোজারিওর সঙ্গে তার বড় ভাই মৃত বাড়ন রোজারিওর ছেলে গ্যানেট রোজারিও সঙ্গে জমিজমা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক মামলাও চলছিল। চাচা-ভাতিজা উভয়ই সপরিবারে আমেরিকায় বসবাস করেন। সম্পত্তি বিরোধ নিরসনে প্রায় দুই মাস আগে দু’ জনেই বাংলাদেশে যান এবং শুক্রবার সন্ধ্যায় ৭টায় নিজ বাড়িতে স্থানীয়দের নিয়ে বিচারে দীর্ঘদিনের জমিজমা বিরোধের অবসানও ঘটে। কিন্তু রাত ১২টার দিকে ভাতিজা গ্যানেট চাচা মাইকেল রোজারিওকে গুলি করেন। 

যুক্তরাষ্ট্র বিচার বিভাগের অপরাধ বিভাগের প্রধান প্রিন্সিপাল ডেপুটি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিকোল এম আর্জেন্টিয়েরি বলেন, অভিযোগে অভিযুক্ত একজন মার্কিন নাগরিক, আসামি আরেক মার্কিন নাগরিককে হত্যা করেছে যখন তারা উভয়েই বাংলাদেশে ছিল। যখন একজন আমেরিকান বিদেশে অন্য আমেরিকানকে হত্যা করে, তখন তারা গুরুতর পরিণতির সম্মুখীন হবে। ক্রিমিনাল ডিভিশন মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংস অপরাধের তদন্ত ও বিচার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যেখানেই তা ঘটবে এবং অপরাধীদের তাদের কর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। তার অপরাধের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে। 

নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের ইউএস অ্যাটর্নি ড্যামিয়ান উইলিয়ামস বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক গ্যানেট রোজারিও বাংলাদেশে আরেক মার্কিন নাগরিককে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ। আজকের অভিযোগগুলি স্পষ্ট একটি বার্তা দেয় যে যুক্তরাষ্ট্র বিচার বিভাগ এবং আমাদের আইন প্রয়োগকারী অংশীদারদের নাগাল বা হাত বিশাল এবং নিউইয়র্ক সিটির পুরুষ ও মহিলাদের সুরক্ষার জন্য আমাদের প্রতিশ্রুতি ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে অনেক বেশি প্রসারিত। যারা অন্যের জীবন কেড়ে নেয়, এমনকি বিদেশেও তাদের জন্য। আমাদের বার্তাটি স্পষ্ট যে ইউএস অ্যাটর্নি অফিস এবং এর অংশীদাররা অপরাধীদের অনুসরণে নিরলসভাবে কাজ করবে। 

এফবিআই লস এঞ্জেলেস ফিল্ড অফিসের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মেহতাব সৈয়দ বলেন, বিদেশে ঘটে যাওয়া অপরাধ তদন্তের জন্য এফবিআই উল্লেখযোগ্য রিসোর্সেস বা সম্পদ ব্যয় করে যা মার্কিন স্বার্থকে এবং আমেরিকান নাগরিকদের প্রভাবিত করে। বিদেশে মার্কিন নাগরিকদের বিরুদ্ধে অপরাধ করে এমন ব্যক্তিদের এফবিআইএর বহির্বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে জবাবদিহি করা হবে, যা মার্কিন সীমানার বাইরে অপরাধের শিকারদের জন্য ন্যায়বিচার প্রদানের জন্য বিদ্যমান।

এফবিআই নিউইয়র্ক ফিল্ড অফিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ইন চার্জ জেমস এইচ স্মিথ বলেন, গ্যানেট রোজারিও বাংলাদেশে মার্কিন নাগরিক মাইকেল রোজারিওকে ঠান্ডা মাথায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এটি একজন ব্যক্তির বিচক্ষণতার ওপর নির্ভর করে না যে অন্যের জীবন কেড়ে নেয় কারণ এটি ন্যায়বিচারের স্কেলকে ব্যাপকভাবে ব্যাহত করে। আজকের গ্রেফতার আমেরিকান নাগরিকদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মকভাবে এই ধরনের জঘন্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য এফবিআই-এর প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেয়। এমনকি যদি সেগুলো বিদেশেও যদি ঘটে থাকে।

এফবিআই লসঅ্যাঞ্জেলেস এবং নিউইয়র্ক ফিল্ড অফিসগুলো মামলাটি তদন্ত করে। মার্কিন বিচার বিভাগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক কার্যালয়ও তদন্তে সহায়তা প্রদান করেছে। ক্রিমিনাল ডিভিশনের হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড স্পেশাল প্রসিকিউশন সেকশনের সিনিয়র ট্রায়াল অ্যাটর্নি ফ্রাঙ্ক রাঙ্গোসিস এবং নিউইয়র্কের সাদার্ন ডিস্ট্রিক্ট সহকারী মার্কিন অ্যাটর্নি ক্রিস্টি স্লাভিক মামলাটি পরিচালনা করছেন।

শেয়ার করুন