২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১১:৪১:৫৪ পূর্বাহ্ন


বাংলাদেশ সোসাইটি : ৫ হাজার ডলার পুরস্কার ঘোষণা
১ লাখ ৬৫ হাজার ডলারের চেক জালিয়াতকারী কে এই মামুন আবু
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০২-২০২৪
১ লাখ ৬৫ হাজার ডলারের চেক জালিয়াতকারী কে এই মামুন আবু


প্রবাসের অন্যতম মাদার সংগঠন হিসাবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার ডলার জালিয়াতির চেষ্টাকারীকে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তার নাম মামুন আবু। গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর সোসাইটির চেক জালিয়াতি করে এস্টোরিয়াস্থ টিডি ব্যাংক থেকে অর্থ তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যাংক কর্মকর্তা ও সোসাইটির নেতৃবৃন্দের তড়িৎ হস্তক্ষেপে সে ১ লাখ ৬৫ হাজার ডলার উত্তোলন করতে ব্যর্থ হয়। চেক জালিয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তারা মামলাও দায়ের করেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ মাস ধরে গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে। ব্যাংকের ভিডিও ফুটেজ এখন তাদের হাতে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাংকের ভিডিও ফুটেজ দেখে মামুন আবুকে শনাক্ত করে। তার নামে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে। মামুন আবুকে ধরতে বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় সাঁটা হচ্ছে পোস্টার। বাংলাদেশি কমিউনিটির সদস্যদেরর সাহায্য চেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বহিনী।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী বলেন, অর্থ জালিয়াতির চেষ্টাকারীর ছবি আমাদের কাছে ডিটেকটিভ পুলিশ হস্তান্তর করেছে। তাকে ধরতে সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। বাংলাদেশ সোসাইটি আমাদের কমিউনিটির প্রাণের সংগঠন। এ সংগঠনের অর্থ আত্মসাতের প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িতদের অবশ্যই বিচার করতে হবে। যাতে করে আগামীতে কেউ এমন দুঃসাহস দেখাতে না পারে।

বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ নওশেদ হোসেন বলেন, ১৫ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে দায়িত্বশীল একজন ডিটেকটিভ পুলিশ অফিসার মামুন আবুকে চিহ্নিত করার খবরটি দেন। একই সঙ্গে তার ছবিও প্রেরণ করেছেন। আমরা তাকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। পুলিশ তাকে খুঁজছে। তাকে ধরিয়ে দেবার জন্য ৫ হাজার ডলার পুরস্কারও ঘোষণা করেছে।

কে এই মামুন আবু? বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মামুন আবু ছোট বেলায় আমেরিকায় আসেন। তারা থাকতেন বাংলাদেশি অধ্যুষিত ব্রুকলিন এলাকায়। তাদের দেশের বাড়ি বৃহত্তর নোয়াখালীতে। লেখাপড়া খুব একটা করেননি। ছোটখাটো অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। মামুন আবু বর্তমানে জ্যামাইকা এলাকায় থাকে। সে বিবাহিত। তবে তার বাবা-মা এবং ভাইদের সঙ্গে কয়েক বছর ধরে কোনো সম্পর্ক বা যোগাযোগ নেই।

দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রথম রিপোর্ট

প্রবাসের অন্যতম মাদার সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটি। এই সংগঠনও হ্যাকারদের খপ্পড়ে পড়েছে। মহামারি করোনার পর থেকেই ব্যক্তি বিশেষের তথ্য হ্যাক করে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থ নিয়ে যাওয়া হতো, তাদের ক্রেডিট কার্ড থেকে বা ব্যাংক কার্ড থেকে অর্থ উত্তোলন বা বাজার করা হতো। আবার কারো কারো তথ্য হ্যাক করে নতুন ব্যাংক কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স পর্যন্ত করেছে। যারা এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন তাদের এ নিয়ে বড় ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। যদিও শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হয়। কমিউনিটিতে এখনো হ্যাকিং অব্যাহত রয়েছে। অনেক মানুষের সর্বনাশ করা হচ্ছে। কিন্তু তাই বাংলাদেশ সোসাইটির মতো একটি বড় সংগঠন হ্যাকারদের কবলে পড়বে আর হ্যাকার হবে বাংলাদেশি-এটা যেন হিন্দি সিনেমাকেও হার মানায়।

বাংলাদেশ সোসাইটির ফিউনারের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার ডলার হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়। জালিয়াত সোসাইটির রেগুলার অ্যাকাউন্টের মতো নকল চেক তৈরি করে, রাউটিং নম্বর দেয়, চেক নম্বর দেয় এবং জাল স্বাক্ষরও করে। সাধারণত এই পর্যন্ত হ্যাকিংয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, তথ্য চুরি করে অন্যভাবে অত্মসাৎ করে, কিন্তু জালিয়াত এতোই ধুরন্ধর যে অবিকল সব জাল করে নিজেই গিয়েছিল ব্যাংকে। কিন্তু তার কপাল খারাপ ব্যাংকের ট্রেইলারের কাছে ধরা খেয়ে যায়। বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ নওয়াদ হোসেন সিদ্দিকী জানালো, প্রথম ডিটমার্সের টিডি ব্যাংকের শাখায় ৫ হাজার তোলার জন্য যায় মামুন নামে একজন বাংলাদেশি। এই চেক নম্বর হচ্ছে ২৯০৩। চেকটিতে বাংলাদেশ সোসাইটির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়। যেভাবে সোসাইটির রেগুলার চেক ছিল। আবার রাউন্টিং নম্বরও দেওয়া হয় এবং সোসাইটির রেগুলার চেকের সিরিয়াল অনুযায়ীই চেক নম্বর দেওয়া হয়। তারিখ দেওয়া হয় ৯-১৯-২০২৩। ওই দিন ব্যাংক বন্ধ হওয়ার কিছুটা আগে (৫.৫৫ মিনিটে জালিয়াত ব্যাংকে ঢুকে টেলারের কাছে চেক জমা দিয়ে তা ক্যাশ করার চেষ্টা করেন। ওই সময় ব্যাংক কর্মকর্তা দেখেন যে, যে অ্যাকাউন্টের চেক নিয়ে জালিয়াত ব্যাংকে গিয়েছে সেই অ্যাকাউন্টের কোনো চেক বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তারা কোনোদিন বানাননি। কর্মকর্তার সন্দেহ হয়। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় কে তোমাকে চেক দিয়েছে? উত্তরে সে সোসাইটির সভাপতির নাম বলেন। কোষাধ্যক্ষের কথা জিজ্ঞেস করার সঙ্গে সঙ্গে সে বিরক্ত হয়ে যায় এবং দ্রুত অর্থ দেওয়ার জন্য তাগাদা দিতে থাকে। ওই সময়ই ব্যাংক কর্মকর্তা সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ নওশাদ হোসেনকে ফোন করেন। আবার তাগাদা দিতে থাকেন জালিয়াত। ওই সময় ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, আমি কোষাধ্যক্ষকে জিজ্ঞেস করা ছাড়া তোমাকে কোনো অর্থ দেবো না। এ সময় জালিয়াত বলে, আমি অপেক্ষা করতে পারবো না, আমি আমার গাড়িতে যাচ্ছি বলে চলে যায়। অন্যদিকে ব্যাংক কর্মকর্তা নওশাদ হোসেনকে ফোন করলে তিনি বলেন, আমি কাউকে কোনো চেক দিইনি। সেই যাত্রায় জালিয়াত অর্থ নিতে ব্যর্থ হয়। নাওশাদ হোসেন আরো বলেন, আমার স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছে। এমনভাবে জাল করেছে আমার স্বাক্ষরের সঙ্গে পুরোপুরি মিল না হলেও ৭৫ শতাংশের মতো মিল ছিল। এই যাত্রায় সোসাইটির ৫ হাজার ডলার বেঁচে যায়। কিন্তু বিধিবাম, ৫ হাজার ডলারের চেক ক্যাশ করতে না পারলেও ওই দিন রাতেই ১ লাখ ৪০ হাজার ডলারের চেক অনলাইনে জমা দেন। তবে এবার নাম ব্যবহার করা হয়েছে রফিক উল্যাহ। জালিয়াতি চেক নম্বর ২৯০৭। চেকের মধ্যে অঙ্কে ১ লাখ ৪০ হাজার লেখা হলেও ইংরেজিতে সংখ্যা লেখার সময় লেখা হয় ১৪ হাজার ডলার। চেকে লেখা হয় রেন্যুভেশন কাজের জন্য। অনলাইনে চেক জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৪ হাজার ডলার সোসাইটির অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রান্সফার করা হয়। পরদিন সকালে অ্যাকাউন্ট চেক করতে গিয়ে নওশাদ হোসেন দেখেন যে, সোসাইটির অ্যাকাউন্ট থেকে ১৪ হাজার ডলার ট্রান্সফার করা হয়েছে। তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাংকে কল দেন। তিনি ব্যাংক কর্মকর্তাকে বলেন, গতকাল ৫ হাজার হ্যাক করার চেষ্টা করা হয়েছিল, আপনাদের কর্মকর্তা বিষয়টি জানেন, তারপরও কেন একই অ্যাকাউন্ট থেকে ১৪ হাজার ডলার দেওয়া হলো? ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, এটা তো অনলাইনে, পরীক্ষা করার সময় পাওয়া যায়নি। আর এটি করেছে অনলাইন কর্মকর্তারা। ব্যাংক কর্মকর্তাকে জানানোর পর ২০ সেপ্টেম্ব^র সোসাইটির অ্যাকাউন্টে ফেরত দেওয়া হয়। দ্বিতীয় ঘটনার পর তৃতীয়বার ২১ সেপ্টেম্বর রাতে আবারও ২০ হাজার ডলার হ্যাক করা হয় সোসাইটির সভাপতির নামে নতুন অ্যাকাউন্ট করে। অ্যাকাউন্ট চেক করে নওশাদ হোসেন সঙ্গে সঙ্গেই সভাপতিকে কল দেন। সভাপতি বিষয়টি শুনে মাথায় যেন তার বজ্রপাত হয়। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই বলেন, আমি কোনো অ্যাকাউন্ট করিনি। তিনি বলেন, কয়েক সপ্তাহ আগে তার তথ্য চুরি করেছিল হ্যাকাররা। বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক কর্মকর্তাকে জানালে পর দিন অর্থ ফেরত আসে সোসাইটির অ্যাকাউন্টে। পর দিন সোসাইটির কর্মকর্তারা ব্যাংকে যান, অ্যাকাউন্ট পরিবর্তন করেন। সেই সঙ্গে থানায় গিয়ে রিপোর্ট করা হয়। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলেছেন, বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করছে। তবে জালিয়াত যে ব্যাংকে এসেছে, তার ছবি ভিডিওতে রয়েছে। সোসাইটির কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন, জালিয়াত ধরা খাবে এবং জালিয়াতির জন্য তাকে জেলে যেতে হতে পারে। এদিকে কোষাধ্যক্ষ নওশাদ হোসেনের বুদ্ধিমত্তার কারণে সোসাইটি এই মহাবিপদ থেকে রক্ষা পেলো।

শেয়ার করুন