২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০২:৫৮:৩২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


বিশ্ব জ্বালানি রাজনীতি ও বাংলাদেশ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৭-২০২৩
বিশ্ব জ্বালানি রাজনীতি ও বাংলাদেশ


বিশ্বায়নের কল্যাণে পুরো পৃথিবী এখন একটি গ্লোবাল ভিলেজ। সংযুক্তির করাণে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ (মহামারি, টর্নেডো, ভূমিকম্প, সুনামি, খরা)  বা মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ (যুদ্ধ, সংঘাত) সারা বিশ্বে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড-১৯ অতিমারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বিশ্বরাজনীতি এবং সেই প্রেক্ষিতে জ্বালানি রাজনীতির অবয়ব, বৈশিষ্ট্য এবং রসায়ন পাল্টে দিয়েছে। অনাদিকাল থেকে আধুনিক যুগ থেকে যত যুদ্ধ, সংঘাত এমনকি মহাযুদ্ধ হয়েছে তার অন্যতম কারণ জ্বালানি ব্যবসার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ অবশ্যই বিশ্বজুড়ে রাশিয়ার জ্বালানি বাণিজ্য বিস্তারে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাব সংকোচন। সবাই জানি রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় জ্বালানি উৎপাদক এবং রপ্তানিকারক দেশ। গোটা পশ্চিম ইউরোপ রাশিয়ার তেল, গ্যাস আমদানির ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল থাকায় বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র ক্রমশই শঙ্কিত হয়ে পড়ায় রাশিয়ার প্রতিবেশী  ট্রানজিট দেশ ইউক্রেনকে নাটো জোটে যোগদানে উদ্বুদ্ধ করে। রাশিয়া কোনোভাবে নিজেদের আঙিনায় বৈরী শক্তির উদ্ভব সহজভাবে নিতে পারেনি। সেখান থেকেই যুদ্ধ শুরু। আর যুদ্ধের সঙ্গে সঙ্গেই পশ্চিমা দেশগুলোর অবরোধ, রাশিয়ার পাল্টা ব্যবস্থা। প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মহাসংকট। বিশেষত যেসব দেশ আমদানিকৃত জ্বালানিনির্ভর এবং যাদের পশ্চিমা অবরোধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার মতো শক্তি সামর্থ্য নেই তাদের অবস্থা সঙ্গীণ। উপরন্তু যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় সংযুক্ত বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকট,  দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটে শিল্পায়ন এবং বাণিজ্যে সংকট। বাংলাদেশ এবং উন্নয়নশীল দেশগুলো মারাত্মক জ্বালানি নিরাপত্তা সংকটে।

রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা অবরোধ কিন্তু প্রকৃত প্রস্তাবে বুমেরাং হয়েছে। রাশিয়ার তেল, গ্যাস পশ্চিম থেকে পূর্বমুখী হয়েছে, মধ্য প্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো পশ্চিমা প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে রাশিয়া, চীন, ইরানের সঙ্গে কৌশলগত বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করছে। বিপদে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মিত্র দেশগুলো। অর্থনৈতিক অবস্থা দিন দিন সঙ্গীণ হয়ে পড়ছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং মিত্র দেশগুলো রাশিয়াকে শাস্তি দিতে ব্যর্থ হয়ে নিজেরাই সংকটে। আর সেই সঙ্গে সংকট হয়ে দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের। আর তাই অনেক দেশ বিকল্প হিসাবে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকার (ব্রিকস ) জোটে যোগদান করার কথা ভাবছে। আর যদি তাই হয় তাহলে বিশ্ব মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র আর ডলারের প্রভাব হুমকির মুখে পড়বে সন্দেহ নেই। এসবের আবার ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি রয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের কার্যক্রম। মনে হয় না বর্তমান পরিস্থিতিতে সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল অথবা নেট জিরো ২০৫০ আদৌ অর্জিত হবে।  

আমরা জানি, নিজস্ব প্রাকৃতিক গ্যাস নির্ভর বাংলাদেশ জ্বালানি নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশ অর্থনীতি ক্রম উন্নয়নের পথে অনুন্নত পর্যায় থেকে উন্নয়নশীল পর্যায়ে উপনীত হওয়ার পথে ছিল। কিছু উপযোগী পলিসির কারণে বাংলাদেশ দ্রুত জ্বালানি মিশ্রণ বহুমুখী করে চাহিদার তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করেছিল। তবে দূরদর্শিতার অভাবে জ্বালানি মিশ্রণে নিজেদের জ্বালানি (গ্যাস, কয়লা ) আহরণ এবং উন্নয়ন উপেক্ষা করেছে।  ক্রমাগত আমদানিকৃত জ্বালানির মুখাপেক্ষী বাংলাদেশ এখন জ্বালানি বিশ্বে মূল্য সংকটের কারণে জ্বালানিনিরাপত্তা নিয়ে গভীর সংকটে পড়েছে। ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা নিয়েও ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না ডলার সংকট এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে। বাংলাদেশ না পারছে কয়লা, এলএনজি, তরল জ্বালানি সময় মতো কিনতে, না পারছে ব্যক্তিখাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর দেনা সময়মতো পরিশোধ করতে। ফলে একদিকে যেমন জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটে শিল্প উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে অনেক উৎপাদনকারী প্ল্যান্ট বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ নাম পেনাল্টি দিতে হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে অচিরে কালো বিলম্ব না করে বাংলাদেশকে জ্বালানি বিদ্যুৎ ব্যবহারে সর্বোচ্চ কৃচ্ছ্রসাধনসহ অপচয় রোধ এবং দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। নিজেদের কয়লা উত্তোলনের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, গ্যাস অনুসন্ধান এবং উন্নয়ন বেগবান করতে হবে। একই সঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানির অবদান বাড়ানোর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সবকিছুর শেষ কথা জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতে কারিগরি জনবলকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিয়ে আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ খর্ব করতে হবে। মনে রাখতে হবে টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা ছাড়া বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিশন অর্জন মুখ থুবড়ে পর্বে।

শেয়ার করুন