২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১০:১৫:১০ পূর্বাহ্ন


দেশকে নুরুল হক নুর
কারো নেতৃত্ব সর্ম্পকে বাজে মন্তব্য করলে সরকার লাভবান হবে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৩-২০২৪
কারো নেতৃত্ব সর্ম্পকে বাজে মন্তব্য করলে সরকার লাভবান হবে নুরুল হক নুর


গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, আমরা অতীতের ব্যর্থতার থেকে শিক্ষা নিয়ে আলাপ আলোচনা করে ঠিক করছি কিভাবে এই আন্দোলনকে সফল করে তোলা যায়। কিভাবে আন্দোলন আরো বেগবান করা যায়, সেগুলো নিয়েই আলাপ আলোচনা হচ্ছে। এখন কাউকে দোষারোপ করলে বা কারো নেতৃত্ব সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করলে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়বে, ফাটল তৈরি হবে। আর এতে সরকার লাভবান হবে।

আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সাথে সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ

নুরুল হক নুর ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ অন্যতম যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে তিনি আলোচনায় আসেন। তিনি ২০১৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। তিনি রাজনৈতিক দল 'গণঅধিকার পরিষদ' প্রতিষ্ঠা করেন।

দেশ: আপনি সম্প্রতি এক জনসভায় অবিলম্বে নতুন নির্বাচন দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার-গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। আপনি কি মনে করেন সরকার আপনাদের এই ধরনের দাবি মেনে নেবে? বা মেনে নেয়া উচিত? মেনে নেয়ার মতো পরিস্থিতি কি আছে?

নুরুল হক নুর: দেখেন দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে বলতে হবে যে এই দাবিই মেনে নেয়া উচিত। কারণ এই সরকারতো দেখেছে ভোটের ক্ষেত্রে তাদের অবস্থানটা কোথায়? শতকরা ৯৫ভাগ মানুষ ভোট দিতে যায়নি। এই জনগণই-তো তাদের ভোট-ভাতের দাবিতে রাস্তায় নামবে। এখন দ্রব্যমূল্য যেভাবে বেড়ে চলেছে, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যেভাবে কমে যাচ্ছে- জনগণের পক্ষেতো এখন বেঁচে থাকাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কেননা এখনতো দেশের বাহিরের লোকেরাও বলছে এই নির্বাচন সাজানো ছিল। জনগণের ভোট দেয়ারই সুযোগ ছিল না। নিজেদের মধ্যেই একটি নির্বাচন ছিল এটি। এই নির্বাচন ছিল সাজানো..প্রার্থী বাছাইয়েরও সুযোগ ছিল না। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে যদি সরকার নতুন নির্বাচন দেয়...আলাপ আলোচনা মাধমে। সে-টা সরকারের জন্য ভালো হবে। তা না হলে বিভিন্ন দেশে একটি স্বৈরাচারের কি পরিণতি হয় তাতো সবাই দেখেছে। এই সরকারের ক্ষেত্রেও তাই হবে। আমরা একটি দেশের নেতা হিসাবে শান্তিপূর্ণভাবে আমাদের দাবি আদায়ে কর্মসূচি পালন করেই যাবো। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। সরকার জোর করে ক্ষমতায় আাছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয়করণ করে ক্ষমতা আছে। আমরা সরকারের কাছে আহবান জানাচ্ছি ..এটা যদি তারা মেনে নেয় তা-তো তাদের জন্য ভালো। কিন্তু কিভাবে এই দাবি আদায় করা যায় ..শান্তিপূর্ণ উপায়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো যায়, গণঅভ্যুত্থান ঘটানো যায় সে-ই চেষ্টা তো আমাদের থাকবেই।

দেশ: আমার যতোদূর মনে পড়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে প্রায় বলতেন যে এসরকার কোনোভাবেই ক্ষমতায় আসতে বা থাকতে পারবে না। আপনি জোর দিয়ে বলেছিলেন যে সরকার কোনোভাবেই নির্বাচন করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে কি ঘটলো..। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অঙ্গনের সমর্থনও তারা পেয়েছে। এই বিষয়টি বিভাবে দেখেন?

নুরুল হক নুর: এখন বিষয়টি হচ্ছে একটি শাসকতো সহজেই ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। তাদের ক্ষমতায় থাকাইতো মূখ্য উদ্দেশ্য ছিল। দেশের স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্ব তাদেরকে টাচ করে না। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ। আইন শৃংখলা পরিস্থিতির যে নৈরাজ্য..। অসাধু ব্যবসায়ায়িদের সিন্ডিকেট- সমস্ত বিষয়টাই তো হযবরল অবস্থা। লক্ষ্য করুন তো বাংলাদেশের কোন সেক্টর এখন ভালো চলতেছে? তারপরে সরকার গায়ের জোড়ে ক্ষমতায় আছে। কারণ জনগণ এর বিরুদ্ধে তেমন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেনি। ফলে এখন পর্যন্ত তাই স্বেচ্ছায় তারা ক্ষমতা ছাড়েনি। কিন্তু এ অবস্থা চিরকাল থাকবে তা-তো বলা যায় না।

দেশ: কিন্তু বিষয়টি কি এরকম কি-না যে রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি জোরালো নেতৃত্ব না থাকার কারণে বা দুর্বল নেতৃত্বের কারণে জনগণ সফল হচ্ছে না..।

নুরুল হক নুর: হ্যাঁ এটা আপনি বলতে পারেন যে আমাদের আন্দোলনের কৌশলটা বিগত দিনে ঠিক ছিল না। কিন্তু এর মধ্যেও জনগণ জেল জুলুম উপেক্ষা করেও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। কিন্তু আমরা আন্দোরনকে একটা পরিণতির দিকে নিয়ে যেতেই পারিনি। আমরা অতীতের সে-ই ব্যর্থতার থেকে শিক্ষা নিয়ে আলাপ আলোচনা করে ঠিক করছি কিভাবে এই আন্দোলনকে সফল করে তোলা যায়। কিভাবে আন্দোলন আরো বেগবান করা যায় সেগুলো নিয়েই আলাপ- আলোচনা হচ্ছে। এখন কাউকে দোষারোপ করলে বা কারো নেতৃত্ব সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করলে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব বাড়বে, ফাটল তৈরি হবে। আর এতে সরকারই লাভবান হবে। সেকারণে এই আন্দোলন করতে গিয়ে কারো কোনো ব্যর্থতা বা দুর্বলতা থাকলেও সেটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে আগামী দিনে ফ্যাসিবাদের পতনে সঠিক ও কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই।

দেশ: আচ্ছা একটা কথা এথন বেশি প্রচার পাচ্ছে আপনারা অতিমাত্রায় পশ্চিমা বিশ্বের আশ্বাসেই আপনারা বেশি আস্থাশীল ছিলেন.. একারণে..

নুরুল হক নুর: একেক জনের কাছে একেক রকম মনে হতে পারে। কিন্তু এনিয়ে আমাদের মধ্যেতো কোনো অস্থিরতা নেই যে এই সরকারকে কালকেই একে টেনে নামাতে হবে বা এখনই সরাতে হবে। আমরা চাই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক। একটা সফল রাষ্ট্র হোক। বাংলাদেশের নাগরিকদের মর্যাদা রক্ষা করতে চাই। কিভাবে নাগরিকদের অধিকার রক্ষা পাবে। মনবাধিকার থাকবে, আইনের শাসন থাকবে, সুশাসন থাকবে। এরকম এটা রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চাই। এটা কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদী একটা প্রক্রিয়া। এসরকারের পতনের সাথে সাথে যে আমাদের সংগ্রাম থেমে যাবে, সে-টাও কিন্তু না। ধারাবাহিকভাবেই আন্দোলন সংগ্রাম চলবে। এটা করতে গিয়ে কখলো সফলতা কখনো ব্যর্থতার দিকে যাবে।

শেয়ার করুন