২৯ মার্চ ২০১২, শুক্রবার, ০৬:৫৫:১১ অপরাহ্ন


চবি অ্যালামনাইয়ের অনুষ্ঠানে আবু জাফর মাহমুদ
দেশটা যেন মনেপ্রাণে থাকে গানে বা কবিতায় নয়
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-০৭-২০২২
দেশটা যেন মনেপ্রাণে থাকে গানে বা কবিতায় নয় বক্তব্য রাখছেন আবু জাফর মাহমুদ


 আমাদের জন্মভুমি প্রিয় বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশকে আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছি। সেই দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। আমরা দেশটাকে যেন আমাদের মনে প্রাণে থাকে, গানে বা কবিতায় নয়। যারা দেশকে ভালোবাসেন আমি তাদের সাথে আছি। গত ২৪ জুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত বর্ষার গান ও কবিতা এবং বিশেষ সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত মুখ, সমাজসেবক, বিশিষ্ট লেখক, বাংলা সিডিপ্যাপের প্রেসিডেন্ট বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি ২৪ জুন সন্ধ্যায় সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস ইনক এবং আলেগ্রা হোম কেয়ার ইনকের জ্যাকসন হাইটসের প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশসনের সভাপতি মাহমুদ আহমেদের সভাপতিত্বে এবং হাসান মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন জ্যাকসন হাইটস মসজিদের ইমাম মওলানা মোহাম্মদ সাদেক।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত আবু জাফর মাহমুদ ছাড়াও অন্যদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাহাঙ্গীর শাহ নেওয়াজ ডিকেন্স, উপদেষ্টা অধ্যাপিকা রানা ফেরদৌস চৌধুরী, সাবেক সভাপতি সামসুদ্দীন আজাদ, সাধারণ সম্পাদক এস এম ফারুক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণু গোপ প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথির হাতে ক্রেস্ট ও সম্মাননা তুলে দেয়া হয়। এছাড়াও অনুষ্ঠানে ফাহমিদা জিগর জাহান ও সৈয়দা পারভীন পলি কবিতা আবৃত্তি এবং পলি ও হাসান মাহমুদ প্রমুখ সংগীত পরিবেশন করেন।

অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথি মানবতার ফেরিওয়ালা আবু জাফর মাহমুদ বলেন, প্রথম কথা হলো আমি সম্মাননা পাওয়ার যোগ্য নয়। তবে সম্মাননা শুধু একটি ক্রেস্ট নয়, এটা মানুষের ভালোবাসা। এই ভালোবাসাটুকুও শিক্ষিত সমাজের পক্ষ থেকে। আমরা সবাই একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। আমরা সবাই মানবজাতির কল্যাণ এবং সেবায় নিয়োজিত। মানুষকে সেবা করা আমাদের কর্তব্য। তিনি বলেন, আমার বয়স যখন ১৮ বছর তখন আমি যুদ্ধে যাই। লক্ষ্য ছিলো নিজেকে রক্ষা করা, জাতিকে রক্ষা এবং সর্বোপরি পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে দেশকে স্বাধীন করা। এই স্বাধীনতা অর্জন কারো একার নয়, পুরো জাতির। তিনি আরো বলেন, আমরা সবসময় রাজনীতিকে বড় করে দেখি। আমি যখন রাজনীতি করেছি, আমিও তাই মনে করতাম। কিন্তু বাস্তবে যখন দেখলাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এবং জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হলো তখন আমার ধারণা পাল্টে যায়। তিনি বলেন, আমরা দেশ পেয়েছি। এই দেশ নিয়ে আমাদের করণীয় আছে। তবে বিভ্রান্ত করা আমার পথ নয়, মানুষের কল্যাণ করা আমার পথ। আমি কাজ শুরু করেছি, এখনো সম্মান পাওয়ার সময় আসেনি। তবে আমি আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, হোম কেয়ার লাভজনক ব্যবসা। আমি এটাকে ব্যবসা হিসেবে নিইনি। বাংলাদেশ থেকে যে শিক্ষা নিয়ে এসেছি, তাকে পুঁজি করেই আমি কাজ করছি। যারা আমার প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন তারা আমার পরিবার। তিনি বলেন, সিলেট বন্যা হকেব এটা আমি আগে থেকেই জানতাম। যে কারণে আমি বন্যার আগে থেকেই কাজ শুরু করি। আমার লক্ষ্য আমার দেশের মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানো। মানুষ মানুষের জন্য এই শিক্ষা আমরা পেয়েছি। তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, আজকে আমি কথা বলেছি। একটি ছেলে বলেছে বন্যার পানিতে তার মাকে মাটিতে কবর দিতে পারেনি, লাশ ভাসিয়ে দিয়েছে। সেই সাথে লিখে দিয়েছেন কেউ ফেলে তার মাকে যেন মাটি দিয়ে দাফন করে দেয়। চিন্তা করে দেখুন বাংলাদেশের সিলেটের কী অবস্থা। তিনি বলেন, কবিতা জীবনের জন্য, গান জীবনের জন্য। জীবন সবার কাছে এক নয়, জীবন আমাদের কাছে যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমরা একসাথে থাকবো। আমাদের জন্মভুমি প্রিয় বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশকে আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীন করেছি। সেই দেশের প্রতি আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। আমরা দেশটাকে যেন আমাদের মনেপ্রাণে থাকে, গানে বা কবিতায় নয়। যারা দেশকে ভালোবাসেন আমি তাদের সাথে আছি। তিনি আরো বলেন, নেতার ছেলে গুন্ডাপান্ডা হয়, আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষিত লোক মুনাফেক। আমি প্রায় ১২ পরিবারকে সহযোগিতা করেছি। আরো করবো। আমিই এদের মুখে হাসি ফোটাবো। ঘর করে দেবো। চিরতরে বন্যা বন্ধের ব্যবস্থা করবো। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে- আমি ঋণ শোধ করতে চাই।

অনুষ্ঠানে বক্তারা সংবর্ধিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদকে একজন সাহসী, হাসিখুশি, দেশপ্রেমিক মানুষ হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করে বলেন, তিনি জীবনভর দেশের জন্যই কাজ করেছেন। রাজনীতি থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। এখন প্রবাসে এসেও কমিউনিটির সেবার পাশপাশি দেশের জন্য কাজ করে চলেছেন। সত্যিকারার্থে তিনি খাঁটি দেশ প্রেমিক মানুষ।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে এসে কমিউনিটিতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে বাংলা সিডিপ্যাপ সার্ভিসেস এবং আলেগ্রা হোম কেয়ার ইনক।

শেয়ার করুন