২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:০৮:৪৩ পূর্বাহ্ন


আন্দোলনে কী নিয়ে আসছে বিএনপি
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৫-২০২৩
আন্দোলনে কী নিয়ে আসছে বিএনপি


বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ও তার আগ মুহূর্তের সময়টুকুকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে ভাবা হচ্ছে। বাস্তবেও তাই। এ সময়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ও তাদের সমসমনা দলের আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি কী হতে পারে সে জল্পনার ডালপালা ক্রমশ ছড়াচ্ছে। বিএনপি আগ থেকেই বলে আসছে, একটি যুগপৎ আন্দোলনে তারা। কিন্তু এর শেষটা কী বা ঐ আন্দোলনের ফসল কী তারা কাউন্ট করতে পারবে সেদিকেও নজর দেশ ও বিদেশের। 

দিন যত গড়াচ্ছে, একধরনের উত্তেজনা-উৎকণ্ঠাও বাড়ছে। কারণ বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে যে পরিস্থিতির অবতারণা হয়ে আসছে, সে অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো নয়, বাংলাদেশের মানুষের। অগ্নিসংযোগ। মায়ের কোল খালি, স্বজনহারা, স্বামী-সন্তান হারানোসহ সর্বস্ব হারানোর ঘটনা-এসব নিত্যচিত্র। এবার তাহলে কী হবে সে দুশ্চিন্তায় অনেকেই। 

তবে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এবারের প্রেক্ষাপট কিছুটা ভিন্ন। একটি অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচের আহ্বান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী বা দাতা দেশসমূহেরও। ফলে চাইলেই যেনতেন ও একতরফা একটা নির্বাচনে পার হয়ে যাওয়ার কথা না। এই একটি স্থানে দেশের বহু মানুষের আস্থা। তাদের প্রত্যাশা নিজের ভোট নিজেরা দেবেন ও পছন্দনীয় প্রার্থীকে জিতিয়ে নিজেদের এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবেন। যা গত দুই টার্ম নির্বাচনে হয়নি। সাধারণ মানুষের সেই ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতেই মূলত বিএনপির দাবি।

এর সূত্র ধরেই তারা বর্তমান সরকারের অধীনে বা বর্তমান সরকারের গঠন করা নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি নন। মূল দাবি সরকারের পদত্যাগ ও একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। দীর্ঘদিনের এ দাবি বিএনপি ও সমমনাদের। এজন্য তারা নির্বাচন কমিশনের অধীনে স্থানীয় সব নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। 

যেহেতু উন্নয়ন সহযোগীদের একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য প্রচণ্ড চাপ তাইতো ক্ষমতাসীন সরকার বেশ চাপে। গত দুই নির্বাচন ২০১৪ ও ২০১৮ যেন তেনভাবে করে ফেলতে পারলেও এবার আর সেটা সম্ভবপর নয় সেটাই প্রতীয়মান হচ্ছে। কিন্তু বিএনপি ও সমমনাদের দাবি তারা সহজেই বা কেন মানবেন? এটাতে তো তাদের দুর্বলতারও প্রকাশ ঘটবে। ফলে একটা কঠোর আন্দোলনের প্রতিধ্বনি শুনছে সবাই। 

ক্ষমতাসীনরা তাদের মতো করেই একটি নির্বাচন অয়োজনের পথে অগ্রসর হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী তার তিন দেশ সফরেও বিভিন্ন মহলের নির্বাচন পর্যবেক্ষনের আহ্বান জানিয়ে আসছেন। যার অর্থ তারা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনটা সুষ্ঠুভাবে করতে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। কিন্তু বিরোধীদের দাবি এমন প্রতিশ্রুতি ২০১৪ ও ২০১৮তেও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে বিরোধীরা সেটা মানছে না। কিন্তু সরকার ঐ পথেই এগোবে এটাই স্বাভাবিক। তাদের সে পথে যাওয়ার অনেক যুক্তিও রয়েছে। দিচ্ছেনও তারা সেগুলো। 

তবে বিএনপি ও সমমনাদের ঐ দাবি দীর্ঘদিন ধরে হলেও যা অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে জনদাবিতে পরিণত করে ফেলেছে। 

বিএনপির আন্দোলনের ধরন  

বিএনপি আন্দোলনের মধ্যেই রয়েছে বলে দলের শীর্ষনেতৃবৃন্দ বলে আসছেন। সেটা এ নির্বাচনের পূর্ব মুহূর্তে তীব্রতর করার পরিকল্পনা তাদের। তবে মাঝে চলমান এসএসসি ও এরপর এইচএসসি পরীক্ষা যেমন একটা বাধা, তেমনি রয়েছে ঈদুল আজহার মতো বৃহৎ মানুষের ধর্মীয় উৎসব। ফলে এগুলো এড়িয়ে কীভাবে পরিকল্পনা সাজাবেন সেটা নিয়ে বিএনপির শীর্ষস্থানীয়র ব্যস্ততা। যেহেতু উল্লিখিত প্রোগ্রামগুলোকে সাইট করা যাচ্ছে না তাই তো বিএনপি ও সমমনাদলগুলো চাচ্ছে এ পরীক্ষা ও মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবের মাঝে লং মার্চ, ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি দিয়ে তীব্রতর আন্দোলনের দিকে এগোতে। তীব্রতর বলতে বিএনপির নজর একদফা আন্দোলন। যা দীর্ঘদিন থেকে দাবি তুলে এলেও কার্যকরভাবে মাঠে নেমে করছে না। একদফা বলতে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য করন। 

তবে বিএনপি ও তার সমমনা দলসমূহ বুঝে গেছে সরকারকে তাদের দাবিতে বাধ্য করতে কঠোর আন্দোলনের বিকল্প নেই। সেজন্যই তারা ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে বিভাগীয় পর্যায়ে জনসভা, প্রচারপত্র বিলি, গণসংযোগ জাতীয় কর্মকা- করে তৃণমূল থেকে মানুষকে তাদের আন্দোলনে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করে আসছে। যাতে বড় ধরনের আন্দোলনের ডাক দিলে সাধারণ মানুষও যাতে সে আন্দোলনে সাড়া দেয়। 

দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বারবার সমমনা দলসমূহের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বসে আলাপ আলোচনা করে বক্তব্য ও পরামর্শ শুনে আসছেন। সেখান থেকে পরামর্শ গ্রহণ করে তারা বড় পরিকল্পনায় যাবে। সেটাতে খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানা গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দই নেবেন সে সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে মঙ্গলবার দিবাগত রাতে দলের স্থায়ী কমিটির সভা হয়েছে। এই সভায় যুগপৎ আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও সেখানে কী হয়েছে সেটা এ রিপোর্ট লেখাকালীন সময়ে জানা সম্ভবপর হয়নি। তবে স্থায়ী কমিটিতে প্রাথমিক সিদ্ধান্তের পর যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আরেক দফা আলোচনা করে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করবে সে রূপরেখা বিএনপি ও সমমনা। 

তবে কী হবে সে সিদ্ধান্ত বা কী হবে সেই আন্দোলনের রূপরেখা, সেটা দেখার অপেক্ষা চলছে এখন। শুধু দেশেই নয় বিদেশেও এ অপেক্ষা। কারণ ঐ আন্দোলনের সফলতা, ব্যর্থতার ওপর নির্ভর করছে দেশে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের গতিপথ। যার মাধ্যমে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতা লাভ করবেন কারা। তবে এখানে শঙ্কাও আছে। যদি ওই আন্দোলন বড় ধরনের সংঘর্ষে রূপ নেয় তাহলে পরিস্থিতি ভিন্নও হতে পারে। কারণ বিএনপি ও সমমনা দলসমূহ আন্দেলন করবে আর আওয়ামী লীগ তো বসে থাকবে না। 

তারাও এর প্রতিরোধে উদ্যোগী হবে। তারাও এ আন্দোলন যে অযৌক্তিক এবং মানুষকে শুধু শুধু কষ্ট দেওয়ার জন্য। ক্ষমতাসীনদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করার জন্য সেটাও তো তারা বলবেন। সব মিলিয়ে কঠিন এক পরিস্থিতির মুখে এখন বাংলাদেশ। অনেকের শঙ্কা যদি দুই দলের সংঘর্ষ সংঘাত বড় আকার ধারণ করে তাহলে সে সুযোগ তৃতীয় কোনো পক্ষও নিতে পারে। এখানেও আছে ভয়। তবে সব মিলিয়ে নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এ সময়টা সত্যিকার অর্থেই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ যা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

শেয়ার করুন