২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:০৫:০৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


আরাভ খান আরব্য রজনীর রূপকথা
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৩-২০২৩
আরাভ খান আরব্য রজনীর রূপকথা আলোচিত আরাভ খান


আরাভ প্রসঙ্গে ক্রমেই বেরিয়ে আসছে অনেক তথ্য। কে তিনি। তার বাড়ির কী অবস্থা। দুবাইয়ে তার চলাচল, জীবনযাপনসহ বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত প্রকাশ পাচ্ছে। মিডিয়ার কল্যাণেই সবাই শুনছে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের রবিউল আরাভ খান হয়ে এখন দুবাইয়ের একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি। পুলিশ অফিসার খুনের অভিযুক্ত আসামি সম্প্রতি দুবাই অভিজাত শপিংমলে বিশাল সোনার দোকান উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ থেকে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, ক্রিকেট এবং বিনোদন জগতের কিছু মানুষকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বিশেষত বর্তমান মুহূর্তে আলোচনায় থাকা বিশ্বসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের উপস্থিতি নেট দুনিয়ায় আলোড়ন তোলে। বলতে দ্বিধা নেই সাকিবের বিশাল ভক্তকুল বিষয়টি সহজভাবে গ্রহণ করেনি। বিতর্ক দানা বাঁধে যখন পুলিশের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা মিডিয়ায় জানান আরাভ খানের বিষয়ে নাকি সাকিবসহ অন্যদের আগেই অবহিত করা হয়েছিল। মিডিয়ায় বিষয়টি চাউর হওয়ার পর জানা যায়, এখন পুলিশ অফিসার খুনের অন্যতম অভিযুক্ত আসামি নামী পালিয়ে ভারত যায়, সেখানে বিয়ে করে, ভারতীয় নাগরিক হয়ে দুবাই ভিসা নিয়ে সেখানে ব্যবসা শুরু করে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছে। মিডিয়ায় প্রশ্ন ওঠে কোন জাদুমন্ত্র বলে আত্মস্বীকৃত একজন সাধারণ মানুষের সন্তান ৪-৫ বছরের মধ্যে শত কোটি টাকার মালিক হতে পারে? মিডিয়ায় কিছু ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ দৃশ্যমান।  

ইতিমধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশপ্রধান নিজে থেকে আরাভ খান বিষয়ে তার সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ। আরাভ খান নিজেও বলেছে সে উক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে (বেনজীর আহমেদ)কে চিনে না। তার সঙ্গে যোগাযোগ তো দূরের কথা, সে কখনো স্বচক্ষে দেখেনি। টিভিতে দেখেছে। আরাভ খান নিজে জানিয়েছে সে বাংলাদেশের নাগরিক এবং বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত করেছে। খুনের বিষয়ে নিজেও কিছু কথা বলেছে আরাভ খান। সমগ্র বিষয়টি আলোচনায় এসেছে সাকিব আল হাসানসহ বিনোদন জগতের কিছু মানুষ আরাভ খানের অতিথি হয়ে দুবাই যাওয়ার জন্য। না হলে হয়তো খুনের দায়ে অভিযুক্ত আরাভ খানের আরব্য রজনীর কাহিনি এতো আলোড়ন সৃষ্টি করতো না।  

প্রশ্ন হলো, আরাভ খানের মতো কথিত অপরাধী কীভাবে দেশ ছেড়ে পালালো? কারা নেপথ্যে তার পৃষ্ঠপোষক? কোন সাহসে একজন অভিযুক্ত খুনের আসামি প্রকাশ্যে দম্ভ দেখাতে পারছে? কোন বিশেষ মহলের সংযোগে তার শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জন? ফিল্ম এবং বিনোদন জগতের সঙ্গে তার কেন এতো দহরম মহরম? সে তো মিডিয়াকে প্রকাশ্যে রীতিমতো হুমকি দিয়েছে। আর কেনই-বা পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা বিচারাধীন বিষয় নিয়ে এতো কথা বলছে। 

সাকিবের প্রসঙ্গ ভিন্ন। তার মতো একজন সেলেব্রিটিকে কেন বারবার আচরণের কারণে বিতর্কিত হতে হবে? দেশে চলতে থাকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সামনে রেখে কেন সে দলছুট হয়ে বিতর্কিত মানুষের আমন্ত্রণে ছুটে যাবে? আইন সবার জন্য সমান? 

আমি এখানে প্রশ্ন করবো, আরাভ খানের বিষয়ে বাংলাদেশের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এতোদিন কি করেছে? ইউএই বাংলাদেশের দূতাবাস কি করেছে? এমন একজন বাংলাদেশি সেখানে এতোদিন ব্যবসা সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে কিন্তু বাংলাদেশ দূতাবাস জানে না এটি কি বিশ্বাসযোগ্য? তাছাড়া যে আরাভ খানের অফিসে খুন হয়েছে এবং তাকে গাজীপুরের এক জঙ্গলে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হলো, তিনি তো একজন পুলিশের সিনিয়র লেভেলের অফিসার। কেন সেই ঘটনা মিডিয়ায় তোলপাড় হলো না। পুলিশই কেন সে ঘটনা নিয়ে চুপচাপ বসে সময় অতিক্রম করছিল। বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটা পত্রিকায় খবর দিয়েছে আরাভ খানের সঙ্গে পুলিশের সাবেক শীর্ষ দুই কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে। তাহলে পুলিশ কেন সে তথ্য উদঘাটন করছে না। যে কারা সেই সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। এমনকি ঐ পত্রিকাকেও দেওয়া সংবাদের উৎস পুলিশ সূত্র।  

আরাভ এক টক শোতে এসে বহু কথা বলেছেন। তুলেছেন অনেক প্রশ্ন। যাতে তিনি বলছেন, বাংলাদেশের মিডিয়া যেসব খবর পরিবেশন করছে তা অনেকাংশে ভুয়া। মার্ডারের পর তিনি তার নিজের পাসপোর্ট দিয়ে বিমানবন্দর পেরিয়ে বা বিমানে দেশ ছেড়ে গিয়েছেন। সে এখনো স্বীকার করছেন সে বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি বাংলাদেশে আসতে চান। তিনি ঐ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চান। কারণ তিনি নাকি ৬ নম্বর আসামি। তার সঙ্গে এ ঘটনার কোনো যোগসাজশ ছিল না। আরাভ খানের সঙ্গে বিনোদন জগত সম্পৃক্ততা এবং পুলিশ অফিসার খুনের বিষয়েও কিছু জানিয়েছে। 

জানি না আরাভ খানের মতো আরো কত বাংলাদেশি বিদেশে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছে? মিডিয়ায় যা দেখছি সেগুলো আরব্য রজনীর মতোই রূপ কথা মনে  হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা না হয় আড়ালেই গেল। কিন্তু তিনি আরাভ তো বাংলাদেশে বড় কোনো ব্যবসায়ী নন। হত্যাকা-ের পর অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই তিনি দ্রুত চলে গেছেন। কিন্তু ২০১৮ সালের পর আরাভ এমনকি আলাদীনের চেরাগ পেলেন, যিনি দুবাইয়ের মতো স্থানে শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। এমন অর্থ কোথায় পেলেন? বাংলাদেশে তার ব্যবসার ব্যাপারে কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে দুবাইয়ে ঐ বিপুল অর্থ কোথায় পেলেন? এটা এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বাংলাদেশ থেকে গত কয়েক বছরে বহু অর্থপাচার হয়েছে। অমন কোনো পাচারকারীর সঙ্গে কি আরাভ খানের যোগসাজশ ছিল? নতুবা এতোটা কম বয়সের একজন ছেলে যার পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ডও অনেকটা নিম্নমধ্যবিত্ত টাইপের। তাহলে তার এমন অর্থের ভিত কি? যদি বাংলাদেশ থেকে তিনি পালিয়ে লুকিয়েই থাকবেন, তাহলে তিনি আবার বিশ্বের ব্যবসায়ীদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বাংলাদেশের সেলেব্রিটিদের টেনে নিয়ে যাবেন কেন, ব্যবসা উদ্বোধনে। তার অর্থের পরিসীমা বোঝা যাচ্ছে না। তবে তার দোকানে একটা স্বর্ণের ঈগল তৈরি করা হয়েছে, যার মূল্য ষাট কোটি টাকার মতো বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ঐ এক ঈগল দিয়েই তার ব্যবসার পরিসীমা আন্দাজ করছেন অনেকেই। যাতে শত কোটি টাকার ব্যবসা বলে খুব বাড়িয়ে বলা হবে না। 

সর্বোপরি সরকারের ভাবমূর্তি বজায় রাখার জন্য আরাভ খান জাতীয় যে মানুষগুলো মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি। সম্পদের উৎস খোঁজা জরুরি। না হলে আজ আরাভ খান কাল অমুক তমুক এমন কাহিনি একের পর এক প্রকাশিত হতেই থাকবে। 

অবশ্য পুলিশের আইজিপি সোমবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক জনের কথা আমরা খতিয়ে দেখছি। উপযুক্ত সময়ে আমরা তা আপনাদের জানাবো।’ আইজিপি আরো বলেন, ‘পুলিশ হত্যা মামলায় যে নামে চার্জশিট হয়েছে, সেই নামে রেড নোটিশ জারির জন্য ইন্টারপোলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, একটু আগে আমার কাছে খবর এসেছে ইন্টারপোল এটি গ্রহণ করেছে। এখন বাকি কাজ তারা করবে।’

শেয়ার করুন