নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ইনডিপেনডেন্ট প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো নির্বাচনী প্রচারে কুইন্সের একটি মসজিদে গিয়ে চরম অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর জামাইকার মসজিদ মিশন সেন্টার-এ তিনি প্রবেশ করার সময় কয়েকজন মুসল্লি তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করেন। মূলত ইসরায়েলকে প্রকাশ্যে সমর্থনের কারণে তাকে লক্ষ্য করে ‘শেম অন ইউ, ইউ আর নট ওয়েলকাম হেয়ার’ স্লোগান শোনা যায়। মসজিদে প্রায় কয়েক ডজন মুসল্লির সামনে বক্তব্য দিতে গিয়ে কুমো শুরুতে বলেন, কুইন্সে ফিরে আসতে তার ভালো লাগছে। তবে তিনি যখন রাজনৈতিক সহিংসতা ও উগ্রপন্থা নিয়ে বক্তব্য রাখছিলেন, তখনই একজন চিৎকার করে বলেন, ‘তুমি নেতানিয়াহুর প্রতিনিধি’, যা গত বছর ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর আইনি দলে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত বহন করছিল।
এ ধরনের প্রতিক্রিয়া নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনকে ঘিরে তীব্র বিভাজনের চিত্র ফুটিয়ে তোলে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে গাজায় ইসরায়েলি সামরিক অভিযান প্রায় দুই বছর ধরে চলমান। এ প্রেক্ষাপটে মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ কুমোর অবস্থান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছে। কুমো বলেন, আমরা ভিন্নমতকে সম্মান করি। আমরা কখনো কারো প্রতি সহিংসতা বা অসম্মানকে সমর্থন করি না। তিনি নিজেকে প্রকৃত ডেমোক্রেট দাবি করে বলেন, আমি সব সময় ডেমোক্রেট ছিলাম। আমার বাবা ডেমোক্রেট ছিলেন। আমি একজন ডেমোক্রেট, কিন্তু মামদানি একজন সমাজতন্ত্রী। তিনি যোগ করেন, সমাজতন্ত্র ভেনেজুয়েলায় কাজ করেনি, কিউবায় কাজ করেনি, নিউইয়র্ক সিটিতেও কাজ করবে না।
যদিও স্থানীয় অনেকেই কুমোর উপস্থিতিকে সমর্থন করেননি, মসজিদ মিশন সেন্টারের কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, আমাদের একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে। সবার কথা শোনাটা জরুরি। তিনি সাবেক গভর্নর, মহামারির সময় ভালো কাজ করেছেন। তাই তাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া উচিত। তবে বাইরে ভোটার রেজিস্ট্রেশন টেবিলে দাঁড়িয়ে থাকা বিলাল খান বলেন, আমরা ভাবছি, এতদিন কোথায় ছিলেন? আট বছরে এটাই প্রথমবার মসজিদে এলেন? লজ্জা হওয়া উচিত। যদিও কুমো সম্প্রতি ব্রঙ্কসের ফুটা ইসলামিক সেন্টার পরিদর্শন করেছিলেন, তবে সেটিই ছিল প্রচারণা শুরু হওয়ার পর কোনো মসজিদে তার প্রথম সফর। এর আগে ডেমোক্রেটিক প্রাইমারি বিতর্কে তিনি গভর্নর হিসেবে কোনো মসজিদ সফর করেছেন কিনা তিনি সে বিষয়ে স্পষ্ট করে বলতে পারেননি।
পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে কুমো অভিযোগ করেন, এ ধরনের বিক্ষোভকারীরা আসলে ডেমোক্রেট প্রার্থী জোহরান মামদানির প্রচারণা দলের পাঠানো লোক। অন্যদিকে ম্যানহাটনের এক অনুষ্ঠানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জোহরান মামদানি সাংবাদিকদের বলেন, তার প্রচারণা দল এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত নয়। বরং তিনি কুমোকে আহ্বান জানান, আরো বেশি মসজিদে গিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার জন্য। এ ঘটনাটি কুইন্সে মুসলিম ভোটারদের কাছে কুমোর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে, যা আসন্ন নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।